ধারাবাহিক উপন্যাস
দিগন্তসেনা
(২০)
একচল্লিশ সপ্তাহ পুরণ হতেই ভোরবেলা সত্যেন ঘুম থেকে উঠে যোগেন
আর রূপেনকে ডেকে তুলল। তারপর তারা তিনজনে মিলে
বাড়ির বাকিদের ডেকে তুলল। হাই তুলতে তুলতে সবাই বলল, ’কি হয়েছে টা কি! সাত সকালে তিন
ভাইতে মিলে অমন ষাঁড়ের মতো চেল্লাচ্ছ কেন?’ তখন ওরা তিনজনেই আলাদা আলাদা জায়গায় দাঁড়িয়ে
বাড়ির আলাদা আলাদা সদস্যদের সবাইকে উঠে পড়তে বলল। কেননা যে কোনো মুহুর্তে যুদ্ধ শুরু
হল বলে এবং সেটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। রায়চৌধুরী ভিলায় একচল্লিশ সপ্তাহ শেষের সকালটা এভাবেই
শুরু হয়ে গেল। কৈকেয়ী বলল যে সত্যিই যদি যুদ্ধ শুরু লাগে তাহলে ছেলেমেয়েগুলো যে সব বাইরে রয়ে গেল তার
কি হবে। তখন সেজ বউ বলে উঠল, ’সে আর কিছু করার নেই, যে যেখানে আছে সেখানে বসে বসেই
যুদ্ধের আঁচ পোহাক। কপালে থাকলে দেখা হবে আর না হলে নয়’। অমনি ছোট বউ ফোঁস করে উঠল
যেন একবারে, ’ওমা! ওকি কথাবার্তার ছিরি গো সেজদিভাই। অমন কথা মুখে আনতে আছে!’ সেজগিন্নি
অনুমালা এবার উল্টে কেকাকে বলল, ’না মানে তাই বলছিলুম আর কি। ভুল হয়ে গেছে বড়।‘ সত্যেন
কৈকেয়ীর কথা মতো ছেলেমেয়েদের ফোন করতে শুরু করল। প্রথমে দুই মেয়ে অন্তরা আর সঞ্চারীকে
ফোন করল। তারা এখন বিদেশে আছে স্বামীর সঙ্গে। তাই শুধু সাবধানে থাকার কথা বলা ছাড়া
আর কিছু উপায় নেই। তারপর অনুমালার দুই ছেলেকে ফোন করল যারা মূল ভূখন্ডের দক্ষিনের দিকের
একটা শহরে গেছে একজন ডাক্তারী পড়তে আর একজন সিএ পড়তে। সত্যেন তাদের ফোন করে বলে দিল
তারা যাতে সাবধানে থাকে। সত্যেনের কথা শুনে তারা বলল যে তাদের জেঠুমণি নাকি এবার সত্যিই
জেঠু জেঠু হয়ে উঠেছে। তখন সত্যেন বলল যে সে তো সত্যিই ওদের জেঠু হয় সম্পর্কে! তখন তারা বলল যে সেটা শুধু সম্পর্কের নাম ছিল এতদিন
ওদের কাছে। এই মুহুর্ত থেকে পদমর্যাদা টা বেড়ে গিয়ে সে সত্যিকারেই ওদের জেঠু হয়ে গেল।
বড়টা, যেটা ডাক্তারী পড়ে সে বলল যে একটা পিঠে ডানা লাগিয়ে এক্ষুনি ওদের বাড়িতে ফিরে
আসছে। ঠিক সেই সময় ছোটটা বলল যে সে নাকি এখন সাত হাতের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক সেই
সময় দরজার কড়া নড়ে উঠতেই রূপেন গিয়ে দেখল যে তাদের বাড়ির দুটো মূর্তিমান ওর চোখের সামনে
দাঁড়িয়ে আছে। ও সরে দাঁড়িয়ে পথ করে দিতেই অভিরূপ আর শতরূপ দুজনে ঢুকে এল।
অভিরূপ বলল যুদ্ধটা আসলে হচ্ছে না। সে কথা শুনে যোগেন বলল,
‘ওমা! সেকি! যুদ্ধ হবে না!’ তখন শতরূপ বলল যে না ঠিক ব্যপারটা তেমন নয়। ব্যপারটা একটু
অন্য রকম। মানে ব্যপারটা হল যুদ্ধ হচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু যুদ্ধটা হচ্ছে না। তখন সকলে
এমন ধাঁধায় পড়ে গেল যে যে কাজই করতে গেল তাদের মনে হতে লাগল তারা ওই কাজটা করছে বটে।
কিন্তু তারা ওই কাজটা করছে না। রূপেনের বারো বছরের ছোট মেয়েটা এসে যখন বলল যে আজ থেকে
তার স্কুল ছুটি, তখন সকলেই ভাবল যে আজ থেকে তার স্কুল সত্যি সত্যিই ছুটি নয়। বড় পিসিমনির
একমাত্র ছেলের বউ সুহাসিনী যখন এসে শতরূপকে হাতমুখ ধুয়ে খেয়ে নিতে বলল, তখন সানন্দা
আর আনন্দী দুজনে মিলে বাগানে গেল আর একরাশ সাদা ফুল নিয়ে এল সেটা দেখে কৈকেয়ী বলল যে
যুদ্ধটা তাহলে হলেও শেষ পর্যন্ত হচ্ছে না। আর রায়চৌধুরী ভিলার ছোট কন্যা সহচরী যখন এসে বলল যে যুদ্ধ লেগে গেছে, তখন তার
এক ছেলে আয়ুষ্মান আর এক মেয়ে আয়ুষ্মতী এসে
যুদ্ধ সম্পর্কে এমন অনেক কথাই বলল যেগুলো আগে কেউই জানত না।
সত্যেনের হটাৎ মনে পড়ল স্কুল টুল যখন ছুটি তখন ডাক্তারের চেম্বারও
নিশ্চয়ই ছুটি থাকা উচিত। ও সে ব্যপারটা নিয়ে
যোগেনের সঙ্গে গভীর আলোচনায় নিমগ্ন হয়ে পড়ল। তখন রূপেন এসে বলল যে ডাক্তারদের
কখনোই ছুটি হয় না। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় তো একেবারেই না। শুনে সত্যেন আর যোগেন পড়িমরি
করে কোনো রকমে তৈরী হয়ে পথে বেরিয়ে পড়ল যে যার গাড়ি আর ড্রাইভার সহযোগে। বিকেলে হসপিটাল
থেকে ফিরে চেম্বারে রুগী দেখতে দেখতে তাদের মনে পড়ে যাবে যে তার বড়দা শিবেনের ছেলে
অভিকে তো ফোন করা হয় নি ছেলেমেয়েগুলোর জ্বালায়, তাই তক্ষুনই তাদের একজন অভিমন্যুকে
ফোন করবে আর তাদের কথাও হবে সুদূর আমেরিকা থেকে মূল ভূখন্ডের পুবের একটি গ্রামে বসে
আর সে ভালো আছে এবং থাকবে জেনে নিশ্চিন্তও হবে সকলে।
আগমনী জয়েস সকলকেই বলেছে সবাই যেন চোখ এবং কান দুটোই খোলা রাখে,
তবু পুপু এত দিন পর সুযোগ পেয়ে দিবানিদ্রার লোভটা সংবরন করতে না পেরে চোখ বুজে শুয়ে পড়ল। যদিও সে অবশ্য বলেছিল, ’যুদ্ধ শুরু হলে
তোরা আমাকে একটু খবর দিস।‘ কিন্তু আগমনী কুন্তল খেয়াল করল দিগন্তসেনায় বক্সাইট আর অ্যালুমনিয়াম
গালাইয়ের কারখানাগুলোতে শ্রমিকরা অনেকদিন পর
ছুটি পেয়ে ঘুমাচ্ছে। ধাতু প্রসেসিংএর লেদ যন্ত্রের পার্কের সিমেন্টের বেঞ্চগুলোতে সব
কর্মীরা শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। কাঁচা লোহা আর ইস্পাত গালাইয়ের কারখানা আর কয়লা নিষ্কাশনের
কৃত্রিম তেল উৎপাদনের শ্রমিকরাও দিবানিদ্রায় ব্যস্ত। ঠিক বিকেল চারটে নাগাদ দিগন্তসেনার
র্যাডারে ধরা পড়ল ফ্রান্সের কোনো একটা অঞ্চল থেকে দিগন্তসেনার একটা গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের
ওপরে একটা রকেট এসে পড়ল আর গোটা পৃথিবীর অধিবাসীবৃন্দ বিশেষ করে ফ্রান্সের অধিবাসীবৃন্দ
তা দেখে ও জেনে কাঁটা হয়ে গেল পালটা প্রত্যাঘাতের ভয়ে আর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের
আতঙ্কে। যাজ্ঞসেনী আর উল্কা, চৈতি আর ইলোরা, শকুন্তলা আর উপত্যকা এবং শ্যামাঙ্গী
আর নীলনদ একে অপরের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাল। কিন্তু মুখে কিছু বলল না। আগমনী জয়েস
ঝাঁকুনি দিয়ে পুপুকে জাগিয়ে দিতেই সে ধর ফর করে উঠে বসে জিজ্ঞেস করল, ’যুদ্ধ শুরু হয়ে
গেছে?’ আগমনী নেতিবাচকভাবে ঘাড় নাড়তেই পুপু বলল,’ তালে তুই আমাকে ডাকলি কেন?’ তখন সে
জানাল যে বোধহয় লাগবে এবার। তবে ব্যাপারটা যে সবচেয়ে বেশি ভালো বলতে পারবে ও যেন সেই
কর্ণেল শ্যমাঙ্গীকেই জিজ্ঞাসা করে।
ইলোরার সঙ্গে আগমনী কুন্তলের দেখা হতেই সে বলল, ’লক্ষকোটি প্রজন্মের
ক্রীতদাসত্বের চেয়ে মাত্র কয়েকটা প্রজন্মের এই অশান্ত জীবনের যাপনও আসলে অনেক শান্তির।‘
ইলোরা সম্মতিসূচক ঘাড় নাড়ল। শ্যামাঙ্গীর কাছে
গিয়ে পুপু জিজ্ঞেস করল যুদ্ধটা কখন নাগাদ লাগতে পারে বলে মনে হচ্ছে তার, তাতে তাকে
শ্যামাঙ্গী তাকে বলল, ’যুদ্ধটা আদৌ লাগবে কিনা সেটা এখনো বলা যাচ্ছে না, যদিও যুদ্ধের
ভূতটা ইতিমধ্যেই অনেকের ঘাড়ে চেপে বসে আছে দেখা যাচ্ছে।‘ যুদ্ধের পাল্টা প্রত্যাঘাতটা তারা করবে কিনা এ নিয়ে
সকলের মনে এক ধরনের দ্বিধা দেখা গেল। কেননা ফ্রান্সের কোথাও ইন্দি বা ইসিয়াম জনগণের
বসবাস নেই একথাটা তাদের চড় তাদের অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছে। এক হতে পারে হটাৎ করে কিছু
বাইরের সন্ত্রাসবাদী মানুষজন ওই অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। হটাৎ করে যেমন আশ্রয় নিয়েছে,
এমন তো হতেই পারে যে কাজটা সারা হয়ে যাবার পর হটাৎ করেই আবার তারা সেই জায়গাটা ছেড়ে
অন্যত্র চলে গেল। সে ক্ষেত্রে ওই অঞ্চলে এক্ষুনি পাল্টা প্রত্যাঘাত করার ফলে ওখানকার
সাধারণ নিরীহ কিছু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে আসল অপরাধী পার পেয়ে গেল।
ফ্রান্সের বেতার ও দূরদর্শন মারফত সে দেশের বিদেশ প্রতিরক্ষা
দপ্তরের মন্ত্রী বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে তাদের গোয়েন্দা দপ্তর কাজে নেমে পড়েছে প্রকৃত
অপরাধীদের শনাক্ত করতে। তাদের হাতে পাওয়া মাত্রই ফরাসী সরকার তাদের চুক্তি মতো দিগন্তসেনার
হাতে তুলে দেবে। পাঁচটা পচিশ নাগাদ দ্বিতীয় রকেটটা এসে পড়ল একটা জনবহুল রেল স্টেশনের
ওপর। দিগন্তসেনা র্যাডার পর্যবেক্ষণে পাওয়া তথ্য অনুসারে সেটা এসেছে ইরানিরানের দক্ষিন অঞ্চল থেকে। এই আঘাতে প্রচুর নিরীহ মানুষ নিহত ও
আহত হয়েছে। গোটা স্টেশনটাই দলে মুচড়ে একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সবটাই বেতার
ও দুরদর্শন সম্প্রচার করে যাচ্ছে বারবার।
ঘটনাস্থলে সবাই ছুটে গেল যে যেভাবে পারল। কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গীর
ছেলেরা এসে একেবারে সার দিয়ে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে
গেল। শকুন্তলার কুন্তল পদবীভূক্ত পনেরো জন আর রেনোয়া বত্তিচেল্লীর ঔরসে জন্ম
নেওয়া দুই ছেলে দুই মেয়েও এসে দাঁড়াল। শকুন্তলার কুন্তল পদবীভূক্ত পঁচিশজন মেয়েও এসেই
ধ্বংসস্তূপের উদ্ধার কাজে অন্যদের নিয়ে হাত লাগাল। যাজ্ঞসেনী গিয়ে দেড় বছরের শিশুকে
দেখল রক্ত আর মাংসপিন্ডের গাদা থেকে একটু দূরে পড়ে আছে। শিশুটির চোখ খোলা, এদিক ওদিক
দেখছে আর হাত পাও নাড়ছে। সে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিল। ইলোরা দেখল স্টেশনের ধ্বংসস্তুপ থেকে খানিকটা দূরে প্রায় সদ্যজাত একটি শিশু পড়ে
আছে। ও গিয়ে হামলে পড়ে শিশুটাকে কোলে নিতেই বুঝল যে বাচ্চাটা এখনও বেঁচে আছে। তাড়াতাড়ি
করে ছুটে গিয়ে ওকে নিয়ে কাছকাছি একটা নার্সিং হোমে গেল আর অবিলম্বে চিকিৎসা শুরু করতে
বলল। বাচ্চাটাকে নিয়ে ডাক্তার নার্স চলে যেতেই বাঁ পাশে তাকাতে দেখতে পেল যাজ্ঞসেনী
চোখ বুঁজে বসে আছে। ততক্ষণে উল্কাও ছুটে এসেছে বেশ কয়েকজন নানা বয়সের শিশুদের নিয়ে।
ইলোরা বাইরে একটু বেরাতেই দেখল নীলনদের গাড়িটা এসে থামল। সেখান থেকে সেও চার পাঁচ জন
শিশুকে নিয়ে ড্রাইভার আর অন্য একজনের পাশাপাশি ভেতরে ঢুকে গেল। দ্বিধা, পিপীলিকা, মহিমাও
সব শেষে এসে পৌঁছাল।
মন্ত্রীসভার অন্যান্য মন্ত্রীরা ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে উদ্ধারকার্য
চালাতে লাগল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভ্যালেন্তিনা কারেনিনা ও কারলোস ফিয়েররো প্রধান কয়েকটি
হাসপাতালের চত্বরে অনবরত চিকিৎসা পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করল। স্বরাস্ট্র দপ্তরের গ্রেগরি
লতানো আর প্রমোদ সারিন উদ্ধার কার্য পরিচালনা করতে লাগল। এছাড়া এল মানব সম্পদ উন্নয়ন
মন্ত্রী ইয়াসমিনা নাথান আর পানচো আলবেরতো ইরিগোয়েন।
উপমুখ্যমন্ত্রী ভ্যালেন্তিনা ইয়েব্রা দুটো জায়গাই পরিদর্শন করে ফিরে গেল। কর্ণেল সি
শ্যামাঙ্গীও উপত্যকা সেনকে সঙ্গে নিয়ে দুটো জায়গাই পরিদর্শন করল।
অভিমন্যু নিভৃতে, গোপনে, একেবারে একা একাই আন্দাজ করতে চেষ্টা
করল শ্যামাঙ্গী চট্টোপাধ্যায় এখন কী করছে – একা একা পায়চারি করছে, চিন্তা করছে, টহল
দিতে বেড়িয়েছে নাকি মন্ত্রীসভার মন্ত্রীদের সঙ্গে জোরদার কোনো এক মিটিঙে ব্যস্ত। ও খুব গভীর ভাবে ব্যপারটা তলিয়ে
ভাবার চেষ্টা করল। তার মধ্যে বারবার করে ফোন আসতে লাগল। সকলেই একবার করে খোঁজ নিতে
লাগল ও ঠিক আছে কিনা, বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সবাই। সব শেষে যখন বাড়ি থেকে ফোনটা আসে
তখন ও বলে, ’আরে তোমরা ছাড় তো! আমি এখন ভালো আছি আর খুব ব্যস্ত আছি’। তখন ওপার থেকে
প্রশ্ন আসে, ’কেন? ওখানে কি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে?’ তার উত্তরে ও বলে যে সেটা যে হয়নি
সেইটাই তো মস্ত বড় চিন্তার কারণ’। তখন ওপার থেকে স্বর ভেসে আসে, ’ওমা সে কি রে! তার
মানে যুদ্ধ না হওয়াটা নয়, যুদ্ধ হওয়াটাই তুই ভালো বলছিস!’ তখন সে বলে, ‘আরে বাবা, ব্যাপারটা
তা না। কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গী এখন কোথায় আছে, কী করছে, কী ভাবছে তাই নিয়ে ব্যস্ত আছি।
তোমরা ছাড়তো!’ বলেই সে ফোনটা দড়াম করে রেখে দেয়। এদিকে কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর ব্যাপারে
এখনো যে কিছু জানতে চেষ্টা করবে সে দরজাও তো তার জন্য বন্ধ। তখন সে ঠিক করে এখন থেকে
তার হাল হদিস জানার কোনো না কোনো একটা ব্যবস্থা সে যে ভাবেই হোক করবে। কী করবে ভাবতে
গিয়ে মনে হল এবার দেখা হলেই ও কর্ণেলের ফোন
নম্বর চেয়ে নেবে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভাবল যদি জিজ্ঞেস করে যে কী কারণে সে নম্বর চাইছে
বা যদি বলে দিগন্তসেনায় তার দপ্তরে ফোন করেলেই হবে, তাহলে? তারপর মনে হল সেটা তো সে
এখনই করতে পারে। কিন্তু বাস্তবে সে দেখল সেই নম্বরটাও সে জানে না বা তার কাছে নেই।
কেননা এই বিষয়টা নিয়ে সে এর আগে এতদূর ভাবে
নি। এই সব সাত পাঁচ ভাবনার পর সে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল তা সে নিজেও টের পেল না।
পরদিন ভোর হতেই দেখা গেল আরব সাগরের পথ ধরে অনেকগুলো যুদ্ধজাহাজ
গিয়ে ঠেকল ইরানিরানের মাটিতে আর সেগুলো থেকে পিল পিল করে বেরিয়ে গোটা রাষ্ট্রটার প্রায়
সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের সকলেরই মুখ আর দেহের গড়ন কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর মতো। রাস্তাঘাট,
দোকান বাজার, অফিস কাছারি, ব্যাঙ্ক, পোষ্ট অফিস, সর্বত্র ছেয়ে গেছে অসংখ্য মানুষে যাদের
সবাই কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর মতো অবিকল একরকম দেখতে। অধিবাসীবৃন্দ ভয় পেয়ে গিয়ে বিভিন্ন
সরকারী দপ্তরগুলোতে গিয়ে বলতে লাগল যে কর্তৃপক্ষ অবিলম্বে যেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা
নেয় কিছু একটা। প্রশাসনের তরফ থেকেও অসংখ্য লোকজন এল পরিস্থিতি সরেজমিনে তদন্তের উদ্দেশ্যে।
তাদের মুখোমুখি যারাই পড়ল তারাই শুনল কর্ণেল শ্যামাঙ্গী বলছে, ’ব্যাপারটা আসলে ঋণাত্বক
আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ধ্বনাত্বক আগ্রাসন ছাড়া আর কিছুই নয়”। কেউ কেউ যারা সঙ্গীত বাদ্যের
লোকজন ছিল তারা গুটি কজন খেয়াল করে দেখল কন্ঠস্বরের বৈচিত্র সেই সঙ্গে স্বরগ্রামের
গাম্ভীর্য ও লয়ের বেশ খানিকটা তফাত। কিন্তু তারা ওসব নিয়ে মাথা ঘামাল না। গোটা দিনটা
এইভাবে চলে গেল। পরের দিন পাঁচ লক্ষ পঞ্চান্ন হাজার সেনা আর অফিসার আগে কোনোরকম যুদ্ধ
ঘোষণা না করেই গোটা ইরানিরান রাষ্ট্রযন্ত্রটাকে দখল করে নিল আর সেখানকার বেতার ও দূরদর্শনকে
অধিকার করে নিয়ে সেগুলো ব্যবহার করে অসংখ্য কর্ণেল শ্যামাঙ্গী জড়ো হয়ে গোটা পৃথিবীর
অধিবাসীদেরই জানিয়ে দিল যে দেশটা এখন দিগন্তসেনার দখলে। শুধু তাইই নয়, এখন থেকে তা
ওদের দখলেই থাকবে,যতদিন না অপরাধীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে বা গেলেও যদি দেখা যায় তারা
ওই ভূখন্ডেরই বাসিন্দা তাহলে সেক্ষেত্রে গোটা দেশটাকেই মানবতার এক সংশোধনাগারে পরিণত
করা হবে। তারপরেই সকলে স্বমূর্তি ধারণ করে জানাল যে এতদিন তারা অনেক সহ্য করেছে। আর
সহ্য করা তাদের পক্ষেও আর সম্ভব হচ্ছে না কোনোভাবেই। তাদের দেখে দেশের সমস্ত জনসাধারণ বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে
গেল। তাদেরই ঘরের মা বোন ভাইরা তাদেরই সামনে দূরদর্শনের পর্দায় দাঁড়িয়ে আছে।
দিগন্তসেনার মন্ত্রীরা সবাই বলাবলি করতে লাগল নিজেদের মধ্যে,
’এটা তো হিসেবচরিত্রচিত্তির! দেখলে কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর কান্ডজ্ঞানটা! এত বড় একটা কান্ড
ঘটে গেল। অথচ একটা রক্তের আঁচড়ও লাগল না কোথাও!’ দিগন্তসেনার রাস্তায় রাস্তায় মিছিল
বেড়িয়ে পড়ল। স্বতস্ফূর্ত জনগণের মিছিল –‘কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ! কর্ণেল সি
শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ!’ তাদের দেখাদেখি মূল ভূখন্ডেও মিছিল বেরাল। সেখানেও জনতার কন্ঠস্বর
শোনা গেল- কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ! কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গী জিন্দাবাদ!’ রক্ষণশীল
সমাজদলের লোকজনের কানে যেন কেউ গরম সীসা ঢেলে দিয়েছে এমন ভাবে তারা ছটফট করে উঠে এ
মুড়ো ও মুড়ো পায়চারি করতে শুরু করল। কিন্তু মধ্যমেধাচৌকোনাদল বা উদারপন্থী দল উন্মুক্ত
কন্ঠে দিগন্তসেনার রাষ্ট্রপতির প্রশংসা করল যুদ্ধে এখনো পর্যন্ত কোনো অস্ত্রশস্ত্রের
প্রয়োগ না করার জন্য। তাদের দলের অনেক সমর্থকও মিছিল গুলোতে অংশ নিল আর ব্যক্তিগত পর্যায়ে
আলোচনা করাকালীন কর্ণেল সি শ্যামাঙ্গীর ভূয়সী প্রশংসা করল।
গোটা ঘটনায় অভিমন্যু একেবারে অভিভূত হয়ে গেল। সে কি করবে ভেবে
পেল না। আনন্দে ঘরের মধ্যে একাই একবার বৃত্তাকারে পাক খেয়ে দুহাত দুদিকে ডানার মতো
ছড়িয়ে দিল। আজ নিজের মধ্যে নিজে সে এত খুশি যা সে এর আগে জীবনে কখনো উপলব্ধি করে নি।
ধরে ধরে সবাইকে ফোন করতে শুরু করল। যারাই তার ফোন পেল তারাই বুঝল যে সে অসম্ভব খুশিতে
যেন উপচে পড়ছে। সবাই ভাবল যে সেটাই স্বাভাবিক না হলেও একেবারে অস্বাভাবিক কিছুও নয়।
তার বাড়িতে তার ভাইবোনেরাও তাকে বলতে লাগল,’ দাদাভাই! বাবা! তুই তো দেখছি কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর
বিরাট বড় ফ্যান হয়ে গেলি। শতরূপ জোড়া লাগাল তার সঙ্গে, ‘একেবারে রাতারাতি!’ অভিরূপ
বলল,’এই হয়! রাজত্ব আর রাজকন্যা একেবারে একসঙ্গে পেয়ে গেল!’ তখন অন্তরা বলল, ’আরে না
না, রাজকন্যা নয়! সম্রাজ্ঞী, সম্রাজ্ঞী!’ সঞ্চারী বলল, ‘কি হল ব্যাপারটা! আমি যেন দাদাভাইয়ের
গলায় একটু লজ্জা লজ্জা একটা ব্যাপার পেলাম বলে মনে হল!’ সুহাসিনী বলল, ’অভির কি তবে
এবার একটা হিল্লে হতে যাচ্ছে?’ ঠিক তখনই আয়ুমতী এসে বলল, ’এই যাঃ! তা কি করে হবে! বয়সে
তো বেশ ক বছর বড় বলেই মনে হয়।‘ আয়ুষ্মান সব সমস্যার সমাধান করে দিয়ে বলল,’ প্রেমের
ক্ষেত্রে বয়স কম বেশি টা কোনো ব্যপারই না। আর তাছাড়া উনি তো অবিবাহিত।‘ অভিমন্যু এসব
শুনে সত্যি সত্যিই লজ্জা পেয়ে গেল। আনন্দী আর সানন্দা এত ছোট যে এই আলোচনায় ঢোকার কোনো
অনুমতি অন্যরা কেউ তাদের দিল না। তাই তারা শুধু বলল, ’আমাদের কিন্তু একটা করে আইসক্রিম
খাওয়াতে হবে।‘ উত্তরে অভিমন্যু বলল যে একটাও নয় আর দশটাও নয়, একশোটা করে আইসক্রিম খাওয়াবেও
প্রত্যেককে। বলেই নিজের মূখামি বুঝতে আর ধরতে পেরে জিভ কেটে ফেলল ফোনটা ছাড়া মাত্রই।
সত্যেন বলল দিগন্তসেনার সম্মানের দিগন্ত চারদিকে উন্মুক্ত হয়ে
যাওয়ায় অভি খুশি হয়েছে। আসলে ওও তো ওইরকম কাজ করার কথাই ছোট থেকে ভেবে আসছে, সেইজন্য।
যোগেন, রূপেন, কৈকেয়ী আর অনুমালা আর কেকাও সেই মতে সায় দিল। তারপর শুরু হল সেলিব্রেশন
পর্ব। সেই পর্বে গোটা গ্রামের সবাইকে ধরে ধরে মিষ্টিমুখ করানো হল। গোটা ব্যাপারটায়
এত মিষ্টি লাগল যে মিষ্টির কোম্পানিগুলোকে তার যোগানের জন্য দিনের মধ্যে চারবার করে
মিষ্টি তৈরী করতে বসতে হল। পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যেন সবাই ভাবতে লাগল যুদ্ধের ঝামেলাটা
শেষ মেশ উতরে যাওয়া গেছে।
যাজ্ঞসেনী ওর বাচ্চাটাকে আইনসঙ্গত উপায়ে দত্তক নেওয়ার জন্য আইনের
সিলমোহর লাগাল। বাচ্চাটার নাম রাখল আনারকলি। ইলোরাও ওই একই কাজ করল। সে তার বাচ্চার
নাম রাখল সহস্রাব্দ। নীলনদ একই সঙ্গে তিনজনকে দত্তক নিল। ওরা তাদের নাম রাখল মোনালিসা,
রজনী, চেসারে। ধৈবত আর পঞ্চম এসে সোজাসুজি শ্যামাঙ্গীকে জিজ্ঞেস করল, ’আচ্ছা কর্ণেল,
তাহলে ব্যপারটা কী দাঁড়ালো?’ শ্যামাঙ্গী বলল, ’কোন ব্যাপারটা?’ তখন ওরা বলল, ’যুদ্ধটা
কি শেষ হয়ে গেল?’ তার উত্তরে শ্যামাঙ্গী বলল, ’আসলে ব্যাপার যেটা হয়েছে সেটা হল যুদ্ধের
জন্য ঠিকঠাক লোকজন পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে সেই অভাবে যুদ্ধটা আমাদের পক্ষ থেকে
ছেড়েই দিতে হবে আর তার বদলে আমাদের পক্ষ থেকে হার স্বীকার করে নিতে হবে।‘ শুনে দুজনেই
বলল, ’আরে তুমি অত ভাবছ কেন? আমরা আছি তো! আমরা তোমার পাশে থাকব। হুকুম কর একবার শুধু
কী করতে হবে’। তাতে শ্যামাঙ্গী বলল, ’প্রথমেই যেটা করতে হবে, বুঝলে, খুব তাড়াতাড়ি বেশি
বেশি করে খেয়ে দেয়ে শরীরটাকে মেরামত করতে হবে। আর অঙ্ক, ইতিহাস, ভূগোল আর বিজ্ঞান টিজ্ঞান
গুলো পড়ে এমন জ্ঞান অর্জন করতে হবে যাতে শত্রুপক্ষের একটা সেনাও ফাঁক ফোকড় দিয়ে পালাতে
গেলে তোমাদের দুজনকেই তাদের চেপে ধরতে হবে। পরিস্থিতি খুব একটা ভালো নয় গো। যা করবার
খুব তাড়াতাড়ি করতে হবে।‘ ওরা দুজনেই চলে যেতে যেতে বলেতে বলতে গেল,’আমাদের বাবা কাকা
জ্যাঠা আর পিসি মাসি দিদি গুলো মোটেই কোনো কাজের নয়, বুঝলি?’
প্রযুক্তি আর ঋতাভরী আর অগ্নিমিত্রা এসে শ্যামাঙ্গীকে বলল,
’কর্ণেল, বল, কী করতে হবে?’ তখন শ্যামাঙ্গী জানতে চাইল, ’কোন ব্যাপারে?’ তাতে তারা
বলল,’যুদ্ধের ব্যাপারে?’ শ্যামাঙ্গী বলল যে ধৈবত, পঞ্চমকে নিয়ে সবাই মিলে একটা দল তৈরী
করতে হবে আর ও যেমন যেমন ভাবে বলেছে সেইভাবে খুব তাড়াতাড়ি নিজেদের তৈরী করতে হবে। কেননা
অবস্থা খুব একটা ভালো ঠেকছে না তার। বিকেলের দিকে কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর সঙ্গে ধৈবত আর
পঞ্চমের দেখা হয়ে গেল কোথাও একটা যেতে গিয়ে আর তখনই ওরা বলল, ’কর্ণেল, খবর পেয়েছি ওদের
তুমি আমার কাছে পাঠিয়েছ। ঠিক আছে, হয়ে যাবে। তুমি কিছু চিন্তা কোরো না একদম।‘ শ্যামাঙ্গী
হেসে ওদের দিকে হাতটা আর মাথাটা নাড়ল।
সেই দিন থেকেই দিগন্তসেনায় কর্ণেল শ্যামাঙ্গীর পারিবারিক চতুর্থ
ব্যাটেলিয়নের অভিযান শুরু হয়ে গেল। তারা উঠতে, শুতে,বসতে, ঘুমোতে বড়দের সংস্রব আর সহায়তা,
নজর আর নজরানা, উদ্দেশ্য আর উপদেশাবলী পুরোপুরি ত্যাগ করল আর সবেতেই স্বাবলম্বী হয়ে
উঠল। তাদের সব কিছুই চলতে শুরু করল সময়ানুবর্তীতা দিয়ে। ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই
এতটা বড় হয়ে গেল তারা যে বুঝুক না বুঝুক মোটা মোটা বড় বড় বিস্তর বইপত্তর পড়ে ফেলতে
শুরু করল স্কুলের সিলেবাসের বাইরে। তারপর সেই সব নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করতে শুরু
করল। আস্তে আস্তে সেটা সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল গোটা দিগন্তসেনায়
প্রথমে আর তারপরেই মূল ভূখন্ডের নানা জায়গায়ও। ফলে সমাজের চেহারাটা কেমন যেন পালটে
যেতে শুরু করল। মা বাবাদের আর তাদের শিশুদের নিয়ে তেমন কোনো সমস্যাই রইল না। তারা নিশ্চিন্তে
যে যার মতো কাজ করতে পারল। মূল ভূখন্ডের বাড়ির মেয়েরাও কোনো না কোনো টাকা আসে এমন কাজে নিযুক্ত হয়ে গেল। কেননা
তাদের আর বাচ্চা মানুষ করার ঝক্কি পোহাতে হল না। কেউ কেউ সংসার দেখার আর সামলাবার জন্য
কাজের লোক রেখে দিয়ে তার মাইনে দিয়ে দিতেও শুরু করল। ফলে টুকিটাকি পছন্দের জিনিস বা
পোশাক আশাক আর চটি জুতো কিনতে স্বামীর কাছে হাত পাততে হল না। স্বামীরাও যেন নিশ্বাস
নিয়ে বাঁচল। বাজার, দোকান, বস্ত্রশিল্পের কারখানাগুলোতে আরো আরো লোকের দরকার পড়তে শুরু
করল। গোটা দেশেই লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংন্থান হতে শুরু করে দিল। ব্যাপারটা শেষ পর্যন্ত
এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছাল যে তার ছোঁয়া অন্য দেশগুলোতেও লাগল। প্রত্যেক পরিবারেই সংসার
সামলাবার জন্য লোকজনের দরকার হল। এছাড়াও একটু অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত পরিবার গুলোতে দরকার
হল একজন করে ম্যানেজারের যারা অল্প পয়সায় সেই পরিবারের নানারকম দরকারী কাজকর্মের জন্য
বিশ্বাসী ও নির্ভরযোগ্য ব্যাক্তি হিসেবে সমস্ত কাজকর্ম করে দিতে থাকল বিন্দুমাত্র প্রতারণা
না করে। এর ফলে পরিবারগুলো ম্যানেজার নির্ভর হয়ে উঠল আর সমস্ত ম্যানেজাররাই কোনো না
কোনো ফার্মের ছাতার তলায় আবদ্ধ হল। গোটা রাষ্ট্রময় এরকম ফার্মের সংখ্যাও অনেক হয়ে গেল।
একেক জন ম্যানেজার একটি নয়, একাধিক পরিবারের ম্যানেজার হওয়ার ফলে পরিবারগুলোকেও ম্যানেজার
নিয়োগ ব্যাবদ অনেক কম পরিমান টাকাই দিতে হতে থাকল যা তাদের আদৌ গায়ে লাগল না। এই সব
কিছুর ফলে গোটা সমাজ, দেশ বা রাষ্ট্র সবটাই গড়গড়িয়ে বিপুল উদ্দমে আর মহা উৎসাহে চলতে
শুরু করে দিল।
(ক্রমশ)
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন