কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২৪

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৫


রজঃস্রাব

বিনীতার অসুখ একটাই, অনিয়মিত পিরিয়ড। কোনো মাসে হবার পর আবার কোন্‌ মাসে হবে, তা অনিশ্চিত।  কখনও কখনও তিন-চারমাসও পেরিয়ে যায়। এদিকে একবার শুরু হলে আর থামতেই চায় না! স্রাব হতেই থাকে। সঙ্গে যন্ত্রণাদায়ক তলপেটের মোচড়। এই সময়টা বিনীতা পুরোপুরি পাগলী হয়ে যায়। মেজাজটা তিক্ততায় ভরে যায়, কেউ কিছু বললেই খটাখটি লাগে, কলেজে যেতে পারে না, শপিংয়ে যাওয়া হয় না, বইপড়া বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সিরিজ দেখা কিছুই ভালো লাগে না। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ে। কোনো কিছুতেই ফূর্তি  নেই, সোয়াস্তি নেই।

তবে এবারের সমস্যাটা একটু আলাদা। বিগত মাসের প্রথমে রজঃস্রাব শুরু হয়ে শেষ হয়েছিল ষোল তারিখ  নাগাদ।  তারপর দেখতে দেখতে একমাস মানে তিরিশটা দিন কেটে গেছে। কিন্তু বিনীতা এখনো কোনো পেটব্যথা যেমন অনুভব করেনি, তেমনি রজঃস্রাবও নয়। অন্যসময় হলে বিনীতার কাছে এটাই স্বাভাবিক মনে হতো, কিন্তু এবার কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়ল। বুঝে উঠতে পারল না, ব্যাপারটা কোনদিকে মোড় নিতে চলেছে।  

বিনীতার দিদি অনীতার বিয়ে হয়েছে তমালের সঙ্গে। প্রেমজ নয়, সম্বন্ধ করে বিয়ে। দুজনেই আই টি সেক্টরে কাজ করে। দুটো আলাদা কোম্পানিতে। ব্যাঙ্গালোরে থাকে। গতমাসে কাকতালীয়ভাবে দুজনকেই মোটামুটি তিন বছরের জন্য কোম্পানি পাঠাল অনসাইডে। অনীতা গেল বেলজিয়াম, আর তমাল ইউ-এস-এ। অনীতা ব্যাঙ্গালোর থেকেই ফ্লাইট ধরেছিল, আর তমাল কলকাতায় একটা জরুরি কাজ সেরে দমদম থেকে ফ্লাইটে রওয়ানা হয়েছিল। তমাল উঠেছিল তার শ্বশুরবাড়িতেই। বাড়িতে থাকে শ্বশুর, শাশুড়ি আর একমাত্র শ্যালিকা বিনীতা।

কোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি বা ঘটনার জন্য কেউ প্রস্তুত থাকে না। আর প্রস্তুতি থাকে না তাই সতর্কতাও থাকে না। ঘটনা ঘটে যাবার পরে মনে হয়, আগে থাকে সাবধান হওয়া উচিৎ ছিল, পরে কী ঘটতে পারে সে সম্পর্কেও সচেতন থাকা জরুরি ছিল। কিন্তু কোথা থেকে যে কী হয়ে যায়, শরীরে যে কখন আগুন লাগে, মন যে কখন সব যুক্তি তর্কের পরোয়া না করে বোহেমিয়ান হয়ে যায়, কখন যে প্রকৃতিজাত প্রবৃত্তি উন্মত্ত হয়ে পড়ে, বিনীতা বা তমালের সাধ্য কী, তা অস্বীকার করে বা লাগাম টেনে ধরে! তমালের ইউ-এস-এ রওয়ানা হবার আগের দিন রাতে চোদ্দতলার বাইরের নির্জন ব্যালকনিতে মুখোমুখি চেয়ারে বসে কথা বলতে বলতে কখন যে কে কার ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে অনুপ্রবেশ করল, কখন যে পরস্পরকে অবলম্বন করে তাপ বিনিময়ের খেলায় অংশগ্রহণ করতে শোবারঘরে আশ্রয় নিলো, কারও কোনো হুঁশ ছিল না।

বিনীতা বুঝে উঠতে পারছিল না, তার যে এমাসে রজঃস্রাব হয়নি, তার কারণ কী! এটা কি তার আগের মতোই  শারীরিক বিপত্তি, নাকি অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ! যদি দ্বিতীয় আশঙ্কা সত্যি হয়, তাহলে সে কী করবে? ঘটনাটা জানাজানি হলে অনীতার সংসারে কি ভাঙন ধরবে? গর্ভপাত করালেও বাড়িতে সবাই জানবে। তমালের পক্ষেও সম্ভব নয়, এইসময় তার পাশে এসে দাঁড়ানো। বিনীতা আড়ালে নিজের তলপেটে আতিপাতি করে খুঁজে বেড়ায় নতুন প্রাণের অস্তিত্ব।   


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন