কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

অশোক তাঁতী



যে লেখা লেখা হবে না  


-আমার জন্যে একটা গল্প লিখে দাও।
-তোমাকে নিয়ে গল্প? তোমার প্রেম, নির্জনতা, প্রবাস?
-বোকা তোমাকে এমনি বলি না! এতক হাসাতে পারো!
-মানে? আমি বোকা?
-না, আসলে তুমি আর চালাক হলে না। বললাম আমার একটুও লিখতে ইচ্ছা করছে না। খুব শীত।
-শীতের সাথে লেখার কী সম্পর্ক?
-সম্পর্ক নেই? সব্জি কাটা ধোয়া, চাল ধোয়া। এই বাড়িতে মাছ খাওয়া নিষেধ, তাই একটা ঝামেলা বন্ধ। জানো কত দিন মাছ খাইনি?
-মাছ না খাওয়া নিয়েই তো লিখতে পারতে।
-মানে তুমি আমার জন্যে একটা গল্প লিখতে পারবে না, এই তো! অত বাহানার কোনো দরকার নেই।
-কিশোরীর চাল ধোয়া ভিজে হাতে...
-চাল ধোয়া নিয়ে কাব্যি করা যায়, পাঁচ ডিগ্রিতে গ্লাভস ছাড়া চাল ধোয়া কত কষ্ট,  সেটা কবিকে দেখানো দরকার।
-ঠিক।
-কান ধরে বলো।
-সে ধরেছি। কিন্তু তোমার গল্প আমি লিখব?
-কেন লিখবে না? তুমি আর আমি কি আলাদা? তাছাড়া রানু ও ভানুর আত্মজীবনী  রঞ্জন লিখছে না!
-রঞ্জন নিজের নামে রবির অলিখিত আত্মজীবনী লিখছে।  
-ঐটুকুই যা পার্থক্য। তুমি আত্মজীবনী লিখবে না। আর আমার নামটা লেখক হিসেবে  থাকবে। ব্যাস।  
-একটা বিজ্ঞাপন দাও – ‘লেখক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। ভবিষ্যতের বাংলা আকাদেমি  পুরস্কারপ্রাপ্ত এক বিশিষ্ট লেখক, বাঙালি অনুলেখক চাইছেন যারা লেখালেখি পছন্দ করেন, শুধুমাত্র তারাই অ্যাপ্লিকেশান করুন’
-আহা, আমি তো কৃতজ্ঞতাও জানাবো। সেইসব লেখার শেষে লেখা থাকবে - যাহাদের সহযোগিতায় এই লেখনিটি সমৃদ্ধ হইয়াছে – ভতৃহরি, ভুসুকপাদ,  কাহ্নপাদ, লুইপাদ, মানকুমারী দাসী, বিদ্যাসাগর, লুই বার্ত, স্টিফেন হকিং।
-ঠিক। কোনো লেখাই কারো একার নয়, সবার মিলিত প্রচেষ্টা।
-এই তো তুমি বুঝতে পেরেছ।
-কিন্তু আমার নামটাই তো বললে না!    
-তুমি তো আমার গণেশ। লেখার আগে তোমাকে মন্ত্র পড়ে খুশি করে দেব।  মহাভারত হবেই। লিখেই ছাড়বো।       
-নিয়োগ প্রথা। পুরাণের রাজারা ইম্পটেন্ট ছিল। তাই ছেলে না হলে অন্য কাউকে নিয়োগ করত। রানীদের ছেলে হতো। তোমার কি তেমনি?
-আমি এখন রাজার মেজাজে। মোজা গ্লাভস পরে কম্বলের নীচে। তুমি লিখবে। অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র বা রোগা পাণ্ডু নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।  
-কী লিখব বলে দাও।   
-যা তোমার ইচ্ছে। মনে মনেও লিখে ফেলতে পারো। যে লেখা কখনো লেখা হবে না।
-লেখা না লিখলে সেটা লেখা হয় কীভাবে?  
-বাঃ, প্রত্যেক মুহূর্তে কত লেখা আমার বুকের ভেতর জন্মাচ্ছে। তুমি ইচ্ছা করছ  না, তাই তারা আমার সাথে সকালের ধ্রুবতারা দেখতে পেল না। আমি একা থেকে গেলাম। আমার গল্প সারা পৃথিবীতে বেজে উঠছে অথচ আমি একা, শূন্য, ফাঁকাই রয়ে গেলাম।
-এমনি করে বললে আমারও কষ্ট হয়।  
-আমার কিছুই ভাল লাগছে না। লেখার কোনো মানে নেই। আমি আর কোনোদিন লিখব না। কতদিন তোমাকে জড়িয়ে ধরিনি! আদর করিনি! চুমু খাইনি!    

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন