কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

দেবযানী বসু




অলৌকিক 

সবাই একবার করে দেখে গেল জিনিসটা। বাড়ির আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই। সেদিন সন্ধ্যায় রান্নাঘরের চেহারাটা এমনি ছিল। ভয়ে ভয়ে কেউ আর তরকারি ভাত ছুঁতে চাইছিল না।

মটরডালের বড়া ভেজে আলু টমেটো দিয়ে ঝোল ঝোল তরকারিটা বাড়ির সকলের প্রিয়
খাবার। নোটনের তো খুবই প্রিয়। নোটন তার বিশেষ মেয়ে বন্ধুটিকে গর্ব করে বলেছিল আমাদের বাড়িতে ক’টা জানলা আছে জানিস? পঁয়ত্রিশটা! আমার শোবার ঘরটা মেজেনাইন ফ্লোরে। সিঁড়ির একপাশ ধরে গোলাপফুলের টব বসানো ছাদ অবধি'প্রায় মধ্যযুগীয় একান্নবর্তী পরিবারের একখন্ড দ্বীপ ওদের পরিবার আধুনিক শহরের এককোণে প্রদর্শনীর মতো ভেসে আছে। নোটনের কাকার ছোটছেলেটা নোটনের চেয়ে দু'বছরের ছোট হবে। পাগলাটে গোছের। মাঝে মাঝে বাড়াবাড়ি হয়। নোটন আগেভাগেই তার প্রেমিকাকে জানিয়ে রেখেছে। বিয়ে করে অবশ্য আলাদা হয়ে যাবে এটা একেবারে স্থির সিদ্ধান্ত। গোল্লাচোখোর পরিবারের প্রতিক্রিয়া এখনও জানা যায়নি। 

নোটনের পাগল ভাইটাকে কেউ কিছু বলতে পারবে না। অনেক বছর আগে ওর প্রেম ভেঙে যাবার পর থেকেই ও  খ্যাপা হয়ে গেছে। নোটনের মা কথায় কথায় হাসতে হাসতে বলেছিল, আজ সকালে তোর বিয়ে করার মুরোদ নেই বা ঐ জাতীয় কিছু। আসলে নোটনের বড় দাদার সম্প্রতি বিয়ে হয়েছে। বৌদি বাড়ি আসাতে সব ভাইদের বা অবিবাহিত জেঠু কাকা যারা ছিল তাদের মধ্যে হুল্লোড় পড়ে গিয়েছিল। নোটনের দাদা যেন লটারি জিতে এসেছে।

যৌথ পরিবারে ক্রমশ মানিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে বৌদি। আর বাড়িতে সারাক্ষণই আর কার
কার বিয়ে দেওয়া যেতে পারে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। পাগলভাই মুকুল একটা বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করে। রাগ হলে অদ্ভুত ছিটলামির কাজ করে।

রান্নাঘরের তরকারিতে সিঁদুর ছেটানো বেলপাতা রাঙাজবা আর রুপোর সিঁদুর কৌটো। সিঁদুর কৌটোর মধ্যে একটা কয়েন। পাশে একটা সাদা কাগজে লেখা ঔং হ্রিংআর পার্শ্ববর্তী মুখের ছবি পাশাপাশি আঁকা একটা ছাগলের এবং নোটনের মায়ের। 

নোটনের মা চিৎকার করে উঠল, জয় বাবা ভোলানাথ বাঁচাও বাবা! মুকুলের আঁকার হাত ভালো সবাই জানে। তাই বলে এইরকম! এই ছবিও সবার হাতে হাতে ঘুরতে লাগল। এক্কেবারে ডিটো নোটনের মায়ের চিবুকের থাক।  ভ্রূসব মিলে যাচ্ছে। নোটনের মাকে দেখতে অবশ্য ভালো নয়। নোটনের ঠাকুমা আজ সন্ধ্যায় আহ্নিক করতে অন্তত দু’ঘন্টা লাগালেন পরিবারের মঙ্গল কামনায়। 

সিঁদুর যে অতখানি টকটকে লাল হতে পারে এ ধারণাটা নোটনের বাবারও ছিল না। তিনি একজন নামজাদা উকিল। তিনি এসব দেখে মন্তব্য করলেন : খোঁজ নিয়ে দ্যাখো মুকুল কোনো তান্ত্রিকের পাল্লায় পড়েছে কি না। এ সব খাবার দাবার যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না। একবারে আদি গঙ্গায় ফেলে এসো। সিঁদুরের রঙ দেখে মনে হচ্ছে মন্ত্রপড়া সিঁদুর' 

নোটন তখন কাকিমার ঘরের দিকে ছুটেছে। ওকে জানতে হবে কতোদিন ঠিক করে ওষুধ দেওয়া হয় নি মুকুলকে। বা এক আধটা ওষুধ কি নোটনের বাবার চায়ে  খুলে দেওয়া যেতে পারে অজান্তে?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন