কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আলেইদা গেভারা




প্রতিবেশী সাহিত্য



আলেইদা গেভারার ভাষণ    

(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী) 






পরিচিতি :   

চে গেভারা দুটি বিবাহ করেন। প্রথম স্ত্রীর নাম হিলদা গাদেয়া, তাঁদের একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেয়। বিবাহ বিচ্ছেদের পরে দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম আলেইদা  তোররেস, তাঁদের চারটি পুত্রকন্যা জন্ম নেয়, তার মধ্যে একটিই  কন্যা এবং তিনি জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর নাম আলেইদা গেভারা, জন্ম ১৭ই নভেম্বর  ১৯৬০এছাড়া বিবাহ বহির্ভূত একটি সম্বন্ধ থেকে আর এক পুত্রের জন্ম হয় ১৯ শে মার্চ ১৯৬৪, নাম ওমর পেরেস। যদিও এই তথ্যের স্বীকৃতি মেলেনি।  আলেইদা গেভারা পরবর্তীকালে কিউবার নামী শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হন। সেখানকার উইলিয়াম সোলের শিশু হাসপাতালে তিনি কর্মরত। আঙ্গোলা, ইকুয়াদোর এবং নিকারাগুয়াতে তিনি কিউবান সেনাবাহিনীর সদস্য হিসাবে ছিলেন। বিশ্বস্বাস্থ্যের সিস্টেম নিয়ে কিউবার দর্শন কী – এ বিষয়ে তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন মাইকেল মুর ‘সিকো’ চলচ্চিত্রে। তাঁর লেখা একটি বই আছে ‘চাভেস, ভেনেজুয়েলা এবং নতুন আমেরিকা’। সম্প্রতি চে গেভারার এই দ্বিতীয় কন্যা ভারতে এসেছিলেন। দিল্লীতে কিউবার বিপ্লবের ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সভায় তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তার অনুবাদ রইল এখানে।


ভাষণ

সবাইকে শুভসন্ধ্যা। এখানে উপস্থিত হতে পারা আমার জন্য একটি বিশেষ সম্মানের ব্যাপার। সহকর্মী বন্ধু ও কমরেডদের মাঝে আসতে পেরে আমার খুব ভাল লাগছে। বরাবরের মতই আপনাদের জন্য কিউবা থেকে অনেক প্রীতি নিয়ে এসেছি। ৬০ বছর আগে প্রথমবারের মত একদল কিউবান বিপ্লবী যুবক আমার বাবা চে গেভারার নেতৃত্বে  এদেশে এসেছিলেন। এদেশের বিপুল বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতিকে কাছ থেকে চিনেছিলেন। বহু কলকারাখানা পরিদর্শন করেছিলেন। কিন্তু সর্বোপরি এদেশের মানুষজনের সঙ্গে তিনি আলাপ পরিচয় করেছিলেন। তিনি এমন এক দেশের বার্তা নিয়ে এখানে এসেছিলেন যা তখন এক নতুন  বদলের উপান্তে এসে দাঁড়িয়েছিল। ষাট বছর পরে ফিরে এসেছি সেইখানেই। সে মানুষটির উপস্থিতি আজ আর নেই, কিন্তু তাঁর মত আরো অনেক মানুষকে নিয়ে  এসেছি আমি। একটি দেশ হিসাবে আমাদের দু’দেশের ভেতরে অনেক কিছু  আদান প্রদান করবার আছে। দেখবার ও দেখানোর আছে। প্রতি শুক্রবার রাতে আমার দেশে টেলিভিশন চ্যানেলে একটি করে ভারতীয় ছবি দেখানো হয়। ধীরে ধীরে আমরা একে অন্যের সংস্কৃতিকে জানছি। কিন্তু এখনও খুব সামান্য সেটি। আমাদের পরস্পরকে আরো চিনতে হবে। কিউবা হল সেই দেশ যা সুন্দর পৃথিবীর জন্য লড়াই করে, যে দেশ আপনাদের সঙ্গে সংহতি জানায়। এবং এভাবেই বহু বহু দেশের সঙ্গে যেন আমরা একাত্মতা অনুভব করতে পারি।  আমরা শিখেছি একাত্মতা মানে, আমার যা বেশি আছে তা ভাগ করে নেওয়া নয়, বরং যেটুকু আছে সেটাই ভাগ করে নেওয়া। এ ভাবনা আমরা একলাই ভাবি তা নয়, যারাই দুনিয়া বদলাতে চাই, তারাই একথা ভাবে। সে কারণেই এ কাজে আপনাদের সবার কাছ থেকে একাত্মতা, সহযোগিতা চাইছি। এ জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ হল আমাদের দেশগুলির শিক্ষা। কেননা সত্যিকারের মুক্তি চাইলে  আমাদের সকলের সংস্কৃতিবান দেশ হতে হবে। যাতে কেউ আমাদের ব্যবহার করতে না পারে, কেউ আমাদের ঠকাতে না পারে, কেউ আমাদের কৌশলে কাজে লাগাতে না পারে। আমাদের একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী দেশ হয়ে উঠতে হবে। সুস্বাস্থ্য মানুষের একটি অধিকার। মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য করা চলবে  না। সে কারণেই একটা সুন্দর পৃথিবী সঠিক পৃথিবীর জন্য লড়াই করতে হবে। একজন একা মানুষের কোন দাম নেই। কিন্তু একটি ঐক্যবদ্ধ দেশ অভঙ্গুর হয়ে দাঁড়ায়। আপনাদের কী করা উচিত সে কথা কিউবা থেকে আমি বলতে চাই না। কিন্তু আমরা দেখিয়েছি কীভাবে অন্য উপায়ে বাঁচা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে  শক্তিশালী মিলিটারি বাহিনীর থেকে আমরা মাত্র আশি কিলোমিটার দূরে থাকি। মহান আমেরিকা দেশটি কিন্তু কখনই কিউবাকে পরাজিত করতে পারে নি।  কীভাবে এটা সম্ভব হল! আমরা মাত্র ১১ মিলিয়ন লোকের দেশ, আর  আমেরিকায় ৪০০ মিলিয়ন লোকের বাস। কিন্তু আমাদের হারাতে পারে নি তারা। কারণ আমাদের যুক্তিবোধ আছে। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধ দেশ। কারণ আমরা এমন এক দেশ যে ভালবাসতে পারে। তাই আসুন আমরা আমাদের সকলের শক্তি একজোট করি। যাতে একটা সঠিক সুন্দর পৃথিবী যেখানে সব নারী ও পুরুষেরা নিজেদের অধিকার নিয়ে বাঁচে। যেখানে বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি শিশুর বাঁচার অধিকার থাকবে। কিউবায় একজন ঐতিহাসিক মানুষ ছিলেন, খুব গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর নাম খোসে মার্তি। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যিনি মুক্তির জন্য লড়াই করেছিলেন। কিন্তু তিনি একজন কবিও ছিলেন। আমরা যাতে আরো ভাল মানুষ হয়ে উঠতে পারি তার জন্য শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। খোসে মার্তি তাঁর ভাল বন্ধুর জন্য সাদা গোলাপ রোপণ করেছিলেন। কিন্তু শত্রুর জন্যও একটি সাদা গোলাপ বপণ করেছিলেন। আমাদের আরো অনেক কিছু শিখতে  হবে। কিন্তু যদি এ পথে আমরা এগোই তবে একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পাব। কিউবান নারী হিসাবে আমি একটা গান গাইতে চাই। এটি খোসে মার্তির কবিতা। পরে এটিতে সুর দেওয়া হয়। এবং সত্যি বলতে আমরা সব কিউবান মানুষেরা এটা অভ্যাস করি। মোটামুটি এটা এরকম-

“বপন করি একটি শ্বেত গোলাপ
যেমন জানুয়ারি তেমনই জুন মাসেও
সদাশয় প্রিয় আমার বন্ধুর জন্য
Guantanamera Guajira Guantanamera
Guantanamera  Guajira  Guantanamera...”
  
ধন্যবাদ
সকলকে ভালবাসা।
২৫শে জুলাই ২০১৯, নতুন দিল্লী, ভারত
  

1 কমেন্টস্: