জৈবিক
সৃষ্টির আনন্দটাই
আলাদা। বৃষ্টির জলে স্নানরত গাছপালা মানুষজন। সকালথেকেই মনটা ভালো নেই শোভার। এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, কে
জানত! মানুষই তো পারমাণবিক বোমা বানিয়েছিল। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট পৃথিবী দেখেছিল এক
নতুন অস্ত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে জাপানের হিরোশিমাতে
পারমাণবিক বোমা ফেলে আমেরিকা। এর ঠিক তিনদিন পরেই আরও একটি বোমা ফেলে
নাগাসাকিতে। ইতিহাস হয়ে আছে এই দু’বার পারমাণবিক বোমা-হামলা। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে মানবজাতি বেশ ভয়ে
থাকে, এই না বুঝি শুরু হল পারমাণবিক যুদ্ধ! শোভা এরকম ভাবছে। যেমন তার নিজের শরীরের কথাটাই ভাবা যাক। চারলাখ
টাকার বিনিময়ে সে গর্ভ ভাড়া দিল। সে হল সারোগেট মাদার। তার এই দরিদ্র সংসারে একটু
আশার আলো দেখতে পেল। তার টোটোচালক স্বামী রঘু এতগুলো টাকার কথায় বেশ আনন্দ পেল এবং
সম্মতি দিল। এই ন’টা মাস তিল তিল করে সে
অনুভব করতে থাকল তার গর্ভের ভাড়াটে সন্তানকে। যথাসময়ে কোল আলো করে কন্যাসন্তান এল।
চোখ নাক সবটাই জাপানি। তার জৈবিক মা-বাবা জাপানি তাই। বাচ্চার জন্মের ঠিক আগেই মা-বাবা’র ডিভোর্স হয়ে যায়। জৈবিক মা কন্যাকে
অস্বীকার করছে আর বাবা কন্যাকে পেতে চাইছে, কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু কানুনী অসুবিধা
দেখা দিচ্ছে। শোভা ভারতীয়, আহমেদাবাদে তার বসবাস। একটি নিজের ছেলেও আছে। এখন ফুটফুটে সুন্দর কন্যাটির উপর
বেশ মায়া পড়ে গেছে তার। সম্প্রতি সরকার এই ভাড়াটে গর্ভের ব্যবসার উপর কিছু নিয়ম
কানুন পাল্টাচ্ছে। যার জন্য ‘দ্য সারোগেসি রেগুলেশন বিল
২০১৯’ আসছে। এই বিল পাস হলে কানুন কয়েক ধাপ এগিয়ে
যাবে নিশ্চয়।
শোভা কন্যার নাম
রেখেছে জ্যোৎস্না। রঘুর রাগ বেড়েই চলেছে। শুধু টাকার অঙ্কটা বুঝে নিতে চাইছে। জ্যোৎস্নার হাতে কালো
সুতো বেঁধে দিয়েছে শোভা। যাতে নজর না লাগে। কপালের ডান দিকে কাজলের কালো টিপ। শোভা লেখাপড়া জানে। তবে কানুন নিয়ে সে
বিচলিত নয়। বাড়ির সকলের অমতে সেই কত বছর আগে সে রঘুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ
হয়েছিল। এখন এই নতুন মাতৃত্বে সে বেশ খুশি।
মানুষ
তেজাস্ক্রিয়তা জানে। তেজাস্ক্রিয়তার প্রভাবে শরীরের ডি.এন এ পাল্টে যায়। ফলে ভয়াবহ
সব রোগ দেখা দেয়। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণে যে তেজাস্ক্রিয়তা,
প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই ভয়াবহতা বয়ে বেড়াবে, শোভা ভাবছে।
মানুষ সব পারে।
শোভা জ্যোৎস্নাকে কোলের কাছে নিবিড়ভাবে ঘুম পাড়াতে থাকে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন