কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

শুভলক্ষ্মী ঘোষ




হল্ট


- “কী গো, বলবে তো কিছু?” - লক্ষ্মী ঢুলছিল, কোমরে একটা আলতো  খোঁচা খেয়ে ধড়ফড় করে উঠে বসল
- ‘আরে কী হচ্ছেটা কি! কী বলব? উফফ, আর জ্বালিও না তো! সারাদিন খাটাখাটনির পর তোমার এই ঢলামিগুলো আর পোষায় না বাপু! দেখি, ছাড়ো... সরে বস, সরে বস... সরাও হাতখানা সরাও!” অনন্ত মুখ কালো করে লক্ষ্মীর শালের তলা থেকে হাতখানা বের করে নিল লক্ষ্মী আর অনন্ত, দুজনেই নার্সিংহোমের ডিউটি সেরে বিধান নগর স্টেশন থেকে সাতটা পঞ্চাশের শান্তিপুর লোকাল ধরে লক্ষ্মী নেমে যায় খড়দা, আর অনন্ত নামে আর একটু দূরে, ব্যারাকপুর লক্ষ্মী নার্সিংহোমে আয়ার কাজ করে, ছুটি হয় সাতটায় আর অনন্তর ফার্মাসি থেকে বেরতে সাড়ে সাতটা মত বেজে যায়  নার্সিংহোমটা স্টেশনের গা লাগা, ট্রেন ধরতে অসুবিধে হয় না   

- “এই দেখ, তুমি শুধুমুধু মাথা গরম করছ ভালো করে শুনলেই না তো কথাখানা” অনন্তর মুখখানা কাঁচুমাচু 
- “উফফফফ, কিইইই? কি? বল, বলে ফেল, শুনছি
- “আরে রাগ করছ কেন? যাবে কি না সেইটাই তো তখন থেকে জানতে চাইছি বেশীক্ষণ নেব না, বলছি তো এই ঘণ্টা খানেক... হ্যাঁ? যাবে তো? কি গো? আরে আমি কি আগে তোমাকে বাড়ি যেতে বলেছি কখনো, বল?... বলেছি? সুযোগই তো হয় নি মা দিন তিনেকের জন্য মামাবাড়ি থাকবে, ওই জন্যই তো এত করে সাধছি তোমা্কে এই মাইরি চল না গো... আজ ভীষণ ইচ্ছে করছে একটা দিন তো শুধু ফেরার সময় তোমাকে ডাউন ট্রেনে তুলে দেব আরে কী হল... যাবে তো? অনন্ত গদগদ হয়ে লক্ষ্মীর বুকে কনুই দিয়ে  আলতো গুঁতো মেরে একটু উসকে দেওয়ার চেষ্টা করল!
- “ইইইহ, খালি ছোকছোকানি! একটা বিয়ে করে নিলেই তো হয়! লক্ষ্মী হাসল মুখ বেঁকিয়ে

*** 

লক্ষ্মী জানলার বাইরে একমনে তাকিয়েছিল দমদমবেলঘরিয়া... ট্রেনে আসতে আসতে ভিড় কমছে বছরের শেষ, ভালো ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা লাগছে মুখে চোখে বাড়ি ফিরে গুচ্ছের কাজ ঘরের লোকটা অসুস্থ, পঙ্গু...  তাও নয় নয় করে বছর দুই হতে চলল বিছানায় শোয়া স্ট্রোকে হাত পা পড়ে গিয়েছে মুখখানা একদিকে ব্যাকা, কথার বদলে শুধু গোঙানি সারাদিন কষ বেয়ে লালা পড়ে নিজে খেতে পারে না, একা বসতে পারে না বিছানাতেই পেচ্ছাপ, পায়খানা পাছায়, পিঠে বেডসোর পাথরের মত একজোড়া চোখ সারাদিন সারারাত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে ডাক্তার-বদ্যি, ওষুধপত্র, মানত, জলপড়া, কত চেষ্টাচরিত্র করল লক্ষ্মী প্রাণটুকু ধুকপুক করলেও, মানুষটা হাতে পায়ে আর ঠিক হল না!
আগরপাড়া, সোদপুর ছাড়িয়ে ট্রেন খড়দায় থামল এক মিনিটের ল্ট হুড়মুড়িয়ে লোক নামছে কোলের ব্যাগটা পাশের সীটে নামিয়ে রেখে লক্ষ্মী শালখানা গায়ে মাথায় ভালো করে জড়িয়ে বসল







0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন