কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

সুনীতি দেবনাথ




কবিতার লাশ ও আমি

হসপিটালের করিডোরে ক্লান্ত হয়ে
একসময় লাশ হয়ে শুয়ে পড়েছি,
আমার চারপাশে আমার কবিতার লাশ
সারি সারি বাক্যহারা নিস্তব্ধতায় শুয়ে।
বোবা এক অন্ধকার কাফনের মত
আমাকে আমার কবিতাকে শেষবার
অশ্রুর আবরণে ঢেকে দিল চুপিচুপি।

বিষাদনীলিমা আমাকে ছেয়েছে
গাঢ়তম আস্তরে আস্তরে জটিল করে,
এই দেহ ক্ষয়ে যায় চূর্ণ চূর্ণ হয়ে যায়
কালের প্রবাহে যত স্বপ্ন রচেছিল মন
রচেছিলো যতসব কবিতার চরণ
আজ সব ধ্বংস হয়ে যাবে অবশ্যই,
সৃষ্টির চরম পরম শিখর অধরা থেকে গেলো।

আলোহীন ম্লান অন্ধকারে কবিতার লাশ
শকুনেরা, ধূর্ত শেয়ালেরা ওৎ পেতে ছিলো,
সুতীক্ষ্ণ দন্ত নখরে দেহের সাথে কবিতার দেহ
কৌশলী আঁচড়ে ফালা ফালা করে ছিঁড়ে ফেলে,
কবিতার প্রতিটি বর্ণ অক্ষর শব্দ গ্রাস করে
মৃত নীল রক্ত দাঁত মুখে মেখে উল্লাসে হাসে,
ছায়াপথে ধীরে ধীরে স্বপ্নেরা ক্রমে বিলীন হয়।

বিদ্রোহ বিপ্লব নতুন সৃষ্টির স্বপ্ন চেতনার আগুন
সব কিছু ধীরে ধীরে ক্ষয় পেয়ে লীন হয়ে যায়।
এই দেহ জীর্ণ বসনের সাথে কবিতার পংক্তিমালা
সবকিছু ছেড়ে যেতে হবে একেবারে যেতে হবে
হসপিটালের করিডোরে শুয়ে পড়ি আমি
আমার কবিতাগুলো ব্যর্থতার ছাপ নিয়ে শুয়ে থাকে,
কবিতা আর আমি পাশাপাশি লাশ হয়ে পড়ে থাকি।



নক্ষত্রের পতন 

কাল শেষ রাতে আকাশ মাতিয়ে
একটি নক্ষত্রের পতন হলো 
চমকে উঠেছিল পৃথিবী সসাগরা
মানুষের সব ঘরবাড়ি প্রকৃতির ঘর
এভাবেই নক্ষত্রের পতন হয়
গোলাপ বাগানে ঝরে যায় গোলাপ

গগনে গগনে নক্ষত্রের ব্যাকুল কান্না
অকাল বর্ষণে ভাসালো আকাশ আঙিনা 
ভেসে গেলো আমাদের ঘরবাড়ি
মাঠের ফসল নদী হলো খরস্রোতা
সমুদ্র ফোঁসে উঠলো গভীর বেদনায়
এভাবেই নক্ষত্রের পতন হয় জেনে গেছি 

অন্তরে আমার শুধু ভাঙ্গনের শোরগোল
আমি মৃত্তিকার মত কোমল হতে চাই
আমি মৃত্তিকার মত সহিষ্ণু হতে চাই
আমার নক্ষত্র সব যখন একে একে
গ্যালাক্সির পথে চূর্ণ চূর্ণ হয়ে পড়ে 
মহাকাশ মহাবিশ্ব বিপন্নতায় ডুব দেয়

আমি চাই বসরাই গোলাপের মদির সুগন্ধ
শান্তির বাতাবরণ গড়ে তুলুক বিশ্ব চরাচরে

মৃতদের কথা

মৃতদের কথা
একান্তে নিঃশব্দে উচ্চারণ করতে হয়
হয়তো এখনো পৃথিবীর আনাচে কানাচে
খুব বেশি দূরেও নয়
তাহাদের কায়াহীন ছায়া উপস্থিতি
স্মৃতির মাদুর পেতে অদৃশ্যে শুয়ে আছে

তাহাদের স্মৃতি নিয়ে একদিন
অবশ্যই কোন একদিন
আমরাও স্মৃতি হবো

আলো অন্ধকারের ঠিক মাঝামাঝি
বয়ে চলা একটি নদী
কাল নদী
প্রতিকূলে বয়ে চলা উৎসমুখী নদী
নদীর জলহীন বিষম স্রোতে
অবগাহন শেষে ধ্রুবনক্ষত্রের
অদৃশ্য সংকেতে
নক্ষত্রলোক অতিক্রম করে
অন্য কোন অপরিদৃশ্যমান পরিসরে
হয়তো বা চলে যেতে হয়

মৃতদের কথা
ভাষাহীন শব্দহীন
সুকঠিন দুরুচ্চার্য কারুশিল্প

উত্তরকাল  

অরণ্যের মাতাল সবুজে ঝড় ওঠে
গায়ক পাখিদের পালক ঝরে পড়ে
আকাশ এখন ঘনঘোর ধোঁয়াটে
গঞ্জের ঘাটে সারি সারি শূন্য নৌকো
ওপারে কি আছে জানা মুসকিল
প্রান্তিক জনেরা দরজায় দিলো খিল

বৃষ্টি জানেনা সময় অসময় ঝমঝম
হেমন্তের এই বিকেলে চরাচরে
কুয়াশা নেই কেবল আকাশের চোখে
ঝরঝর ধারা ব্যাকুলতায় ঝরে পড়ে
এখানে জুরি নদীর মরাস্রোতে শুধু
শূন্যতা সারাদিন হাহাকার করে যায়

একদিন সব নদী শুকিয়ে যাবে নিশ্চয়
একদিন সব ভূমি হারাবে শ্যামলিমা
ফ্যাকাসে আকাশ তলে সূর্যের আক্রোশ
শুষে নেবে নির্বিচারে মৃত্তিকার প্রাণরস
নীলগ্রহ অবলীলায় ধু ধু প্রান্তর মরুভূমি
রস- প্রাণহীন পৃথিবী ঝরবে মত্ত বিষাদে


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন