কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

শুভ্র মৈত্র



ছায়াবুড়ি




বিমলার অন্য কোনো গল্প ছিল না। তার ছিল শুধু এক ছায়ার গল্প। যেখানে সেখানে বলত সেটা। চলার পথে খানিক হাঁফ ধরলে পা ছড়িয়ে বসে পড়ে বিমলা। আর শুরু করে ওর গল্প। যে ছায়াগুলি হারিয়ে গেছে। উদাসীন মানুষ ওকে খেয়াল করে না। খেয়াল করার কথাও না। কেউ শুনতেও চায় না। তবু বিমলা বলে চলে ওর ছোটবেলার কথা।

শুকনো চুলের ঝুঁটি কালো ফিতে দিয়ে টেনে বেঁধে দিত মা। তারপর কাজলের  টিপ পড়িয়ে দিত। কালো টিপের ছায়ায় বড় হয়েছিল বিমলা। ছেঁড়া খোঁড়া  জামাকাপড় আর তেঁতুলবিচি ভর্তি কোঁচড়ে গরিবী কোথায়? শুধু আনন্দ আর আনন্দ। সেসব দিনের কথা মনে পড়লে বিমলার শুধু ছায়ামাখা বিকেলগুলি মনে পড়ে। মনে পড়ে সেই শালিখ পাখির কথা। জোড়ায় দেখলে যাদের শুভ ভাবতে হতো। পাখিগুলি শস্যদানার তাগিদে উড়তো দিনভর। তারপর রোদের রঙ নরম হলে ফিরে আসতো ফিরে আসতো গাছ-বাসায়। প্রতিদিন। বিমলার ছেলেবেলার  বিকেলগুলি ছিল পাখিদের ওড়াউড়িতে ভরা।

এসব গল্প বলে বিমলা। সেই হারিয়ে যাওয়া ছায়াগুলির কথা। টালির চালের ছায়াটা পাল্টে গিয়ে অন্য ছাদের নীচে ও চলে গেছিল যেদিন, সেদিন বিমলা  শাড়ি পড়েছিল। অন্য একটা মানুষের ছায়া পড়েছিল শরীরে। ভয় আর সঙ্কোচ মেশানো কৈশোর নিয়ে আবডাল খুঁজত মেয়েটি। অভ্যস্ত হয়েছিল উপেক্ষা আর শাসনে। তারপরে নিজেই কবে একটা গাছ হয়ে গেছিল। ছায়া দেবার দায় পড়েছিল সন্ততিদের শরীরে। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল বিমলা।  

তারপর অনেকগুলো বিকেল পেরিয়ে কুঁচকে যাওয়া চামড়া নিয়ে নিজেকে আবিষ্কার করে পরজীবী হিসেবে। অনুকম্পায় বাঁচতে হয়। তবু ছায়া খোঁজে বিমলা। ছায়া-পিপাসী হা-ক্লান্ত কুকুরের মতো আজ বিমলা হেঁটে যায় আনাচ  কানাচ। হাতে কখনও সব্জির থলি, কখনও বা তেলের টিন। জিরনোর জন্য খুঁজে  নেয় দালান কোঠা বা ঐ বড় বটগাছটার ছায়া।

রাত্তিরে শুতে যাওয়ার আগে ঘুম পাড়াতে হয় মাত্র কয়েকবছর আগে পৃথিবীতে আসা শিশুকে। গল্প বলে বিমলা, সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির গল্প। নিজের নিঃস্বতার সঙ্গী পায় সেই পাখিগুলিকে। গাছ-বাসা হারিয়েছে ওদেরও। বড় ক্লান্ত সেই খোঁজ।  

ছায়াগুলি তখন এসে ভিড় করে রাতমশারির গায়ে...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন