পরিচয়
ফরাসীতে ‘ডেজা ভ্যু’ বলে একটা
কথা আছে। কোথাও যেন পড়েছিলাম, ‘ডেজা ভ্যু’ ব্যাপারটা আসলে নিউরনের এক ধরনের তথ্য
সংরক্ষণের বিভ্রাট। আজ এমনই কিছু ঘটলো আমার জীবনে, আর তেমনই এক ঘটেছে-ঘটেনি’র ধূসর
খোপে আটকে গেলাম আমি।
নিউমার্কেটে গ্যাস বিলের টাকা
জমা করে বাড়ি ফিরছিলাম দুপুরে। বাড়ির কাছে এসে দেখি বিশাল জ্যাম। দশ
মিনিট ঠাঁই বসে রইলাম রিকশায়। আমার তাড়া আছে। বাথরুমের পাইপে কোথাও ঝামেলা হয়েছে।
জল সরছে ধীরে। কলের মিস্ত্রীকে আসতে বলেছি। ঘুরপথ একটাআছে। কিন্তু এরই মধ্যে আরও গাড়ি জমেছে, রিকশা বার করতেও সময়
লাগবে। ভাড়া
মিটিয়ে আমিই নেমে গেলাম।
শর্টকাট হলেও এইদিকে আসা যাওয়া
কম। কারণ এই
রাস্তায় খানাখন্দে ভরা ভাঙা একটা জায়গা পেরোতে হয়। বিচ্ছিরী গন্ধ। একটু ছুটেই
হাঁটছিলাম হঠাৎ মনে হ’ল কেউ আমার ডাকনাম ধরে ডাকছে। ‘ছুট্টি’!
গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো! পেছন ফিরে দেখি কেউ নেই। নির্ঘাত মনের ভুল। এই নামে আমাকে যারা
ডাকতো এখন তাঁরা আকাশের তারা। আমি শ্বশুর শাশুড়ির বউমা,
ননদদের বৌদি। অদ্রীশের কাছে নামহীন ‘শুনছ’ ‘শোনো’। দু’পা এগোতেই আবার ডাক, ‘ছুট্টি!’ দেখি বাঁদিকের
পুরনো দালানটার সিঁড়িতে পা মেলে বসে আছে মেয়েটা। পরনে সাদা সবুজ পলকা ডট ফ্রক। বলল, ‘কেমন আছ?’
আচ্ছা ফাজিল তো! চেহারাটা ভালো বোঝা যাচ্ছে না। সূর্য ওর পেছনে। পাশেই একটা ঝাঁকড়া
গাছ। লম্বা ছায়া লুটিয়ে পড়েছে সামনে। আমি উত্তর না দিয়ে হাঁটছিলাম। ‘আরে দাঁড়াও না
এত তাড়া কীসের?’ এবার আমাকে থামতে হ’ল। বেশ কড়া গলায় জানতে চাইলাম, ‘এই মেয়ে তুমি
আমায় চেন?’ কাচের চুড়ির মত রিনরিন করে হাসলো মেয়েটা। আবছা ছায়ায় ওর সাদা দাঁত
ঝিকমিকিয়ে উঠলো,
- তুমিই আমায় চেন নি? আচ্ছা তুমি
কি এখনও হোমমেকার?
-মানে?
- সেই যে তোমার বর পার্টিতে পরিচয়
করিয়ে দিয়েছিল, ‘শী ইস মাই হোমমেকার’। মনে নেই? তোমার মন খারাপ
হয়েছিল। এখনও কি হোম মেইক কর?’ আমি হেসে দিলাম যেন কেইক পেস্ট্রির দোকানের
খদ্দেরের প্রশ্ন। পরক্ষণে মনে হ’ল, আরে এই ঘটনা ও জানলো কীভাবে? মেয়েটা বেশ গম্ভীর গলায় বলল, ‘তুমি
বেহুদা সময় নষ্ট করলে। বাড়ি হয় ইট কাঠ সিমেন্টের। ঘর অন্য জিনিস। তোমারটা বাড়ি’। আমার মাথার দু’পাশে রগ লাফায়। ঠিক সেই সময়ে খালি রিকশাটা উদয় হয়েছিল। রিকশায়
উঠে মাথা ঘোরাতেই দেখি মেয়েটা উধাও।
ফ্ল্যাটে ঢুকেই অদ্রীশের অফিসে
ফোন দিলাম। রিসেপশনিস্ট বলল, ‘প্লিজ, হোল্ড অন এ মোমেন্ট মিসেস মজুমদার’।
নাইটস্ট্যান্ডের নিচে পুরনো
এ্যালবামটায় চোখ গেল। আজকাল এ্যালবামে নয় ছবি ভাসে ইথারে। পাতা
ওল্টাতেই চমকাই। পলকা ডট জামা পরা মেয়েটা ঝিকিমিকি হাসছে! ওর হাতে শ্রেষ্ঠ বক্তার ক্রেস্ট। আহা ও কি জানতো মিসেস মজুমদার হওয়ার জন্যেই বাড়ছে ও?
ফোন বাজছে। আমার ধরতে ইচ্ছে
হচ্ছে না।
আমি ছুট্টিকে দেখছি।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন