কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৯

ওবায়েদ আকাশ




সময়

ঘড়ির দিকে তাকালে
কখন যে কোন কাঁটাটি আমার বুকের মধ্যে বিঁধে যায়
এই ভয়ে ঘড়িকে বর্জন করেছি

অথচ রাত্রি হলে হৃৎপিণ্ডের উচ্চারণের চেয়ে
অধিক আপন হয়ে ওঠে ঘড়ির টিকটিক

তখন ব্যবহৃত বাসনকোসন ঘড়ির নিচে পেতে দিয়ে
ডায়াল থেকে টুপ টুপ করে ঝরে পড়া সময় সংগ্রহ করি

ভোর অবধি এত এত সময় আমার সমস্ত ঘর উপচে
জানালা দরজা দিয়ে গড়িয়ে ছড়িয়ে যায়

আর সন্ধে নামার আগেই
সময়ের সাথে পৃথিবীর সম্পর্কের চিতায়
                     দাউ দাউ আগুন জ্বলে ওঠে


নির্মলদা বিষয়ক স্বকীয়া

প্রতিবেশি নির্মলদা ভূয়োদর্শী ছিলেন
এখন বাড়িতে আছেন এবং
বাজার থেকে ব্যক্তিগত দেহখানা
কসাইখানা দর্জিখানায় সারিয়ে নিয়ে
পুনঃবার বেরুবেন বলে ভাবছেন

ব্যক্তিগত বলতে নির্মলদার স্ফিত ভুঁড়ি
চকচকে ত্বক এবং দীর্ঘশ্বাসের চওড়া উঠোন ব্যতীত
অন্য যা যা ছিল, এখন তাতে শপিং সরণি
দাতব্য শুশ্রষালয় কিংবা প্রপঞ্চ ম্যাসাজ পার্লার
বেশ মানিয়ে উঠেছে

নির্মলদা যখন একটি প্রাচীন চিঠির ভেতর থেকে
লাফিয়ে পড়ে সারা গাঁয়ের মুঠি মুঠি সমর্থন কুড়িয়ে নিলেন
তাকে তিনি ব্যক্তিগত বিজ্ঞাপন বলে টাঙিয়ে নিয়ে
একপ্রকার আত্মপ্রচারের ঝুঁকি নিয়েছিলেন

আজকাল তার সমূহ প্রচারণা জুড়ে
দুর্ভিক্ষের চাঁদ, রোদওঠা কুকুর ও স্বাস্থ্যবতী প্রপাগাণ্ডাগুলো
দাপিয়ে বেড়ায়

নির্মলদা এখনো বাড়িতে আছেনÑ
হাঁটেন ফেরেন, বমি করেন নিশ্চিন্ত শুশ্রষায়


তোমার সম্রাজ্ঞীর জীবন

একদিন দূরের সমুদ্র ধরে ডুবতে ডুবতে
তোমার অন্যায্য নিকটে এসে
সারা দেহে পাখির পালক মুড়িয়ে বলব যে
তোমার সম্রাজ্ঞীর জীবন কেন বিষাদে ভরপুর ছিল

আর তুমি বিন্যস্ত নকল পালক ধরে
উড়ে যাবার বাসনা করতেই আমি
মাছ হয়ে সমুদ্রে মিলিয়ে যেতে পারি

তখন যতই বাসনা হোক লালনীল
মাছেদের ডানায় তোমার ভবিষ্যৎ সন্তরণরীতি
কিছুতে ভাবতে পারি না আজকাল

এবং তোমার জন্য উদ্যত এই সমুদ্রশূন্যতা
আমাকে বারবার প্রাচীন লোকালয় ঘিরে
হেঁটে যেতে উদ্বুদ্ধ করে

আর আমি মনুষ্য অবয়বহীন সিন্ধু বা পবনপ্রেমিক
তোমার সম্রাজ্ঞী-জীবনের অভিশাপের ধারায়
না মানুষ না জলজ জীবনে স্থিত হতে পেরেছি


ব্যালেরিনার সাথে সম্পর্ক

ব্যালেরিনার নাম ধরে ডাকতেই
সে আমাকে বায়ুমণ্ডলের ধূসর অস্থিরতায়
এক শ্বাসরুদ্ধকর বন্দি জীবনের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দিল

অথচ আমার হাত পা এবং মগজের সম্মুখজুড়ে
যে হরিৎ পৃথিবী ধূসর ঋতুদের শিখা
কচি সবুজ অবয়ব ছেড়ে আমার প্রণত আহবানের দিকে
তাকিয়ে আছে তাদের প্রযত্ন রেখায় অঙ্কিত হতেই
এই দীর্ঘ পরিভ্রমণ

আমি ব্যালেরিনাকে বলি কাগজে অঙ্কিত ময়ূর
আর একদিন প্রবল দুর্ঘটনা হেতু পতিত সমুদ্রতলে
মাছেদের হলুদ বেগুনি পুচ্ছে যে গভীর পারম্পর্যতা
তোমার আমার সম্পর্কের দ্বিধায় তাদের অনুষঙ্গ আজ অনিবার্য কিনা

ব্যালেরিনা তার আমু-শরীরে অঙ্কিত বিষণ শীতের পত্রালি আর
দীর্ঘ হিমযুগ পেরিয়ে আসা বরফের চাঁইয়ে দৃষ্টি ছুড়ে দিল

আর তাতে অকস্মাৎ প্রাণ প্রতিষ্ঠায় বসিয়ে দিল দীর্ঘ খয়েরি ডানার আড়ালে
পানপাতার নিঝুম-সরল একজোড়া পা



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন