একটা সোফা
একটা সোফা। ফ্যাকাশে। কত লোক সারাদিন ধরে এসে বসছে। বসছে আবার উঠেও যাচ্ছে। রয়ে যাচ্ছে সোফাটা। কালো। তার ফর্সা মুখ কালো হয়ে উঠছে। অভিজ্ঞতার রং ঘনকৃষ্ণ। প্রত্যেকবার একটা লোক উঠে যেতেই সোফার মুখে কিছু দাগছাপ তৈরি হচ্ছে। কখনো মুখব্যাদান, কখনো প্রসন্নতা, আবার কখনো বিষণ্ন হতেও দেখা যাচ্ছে সেইসব দাগছাপকে। সোফার ওপর বিচিত্র শরীরের বিভিন্ন চাপের এই ভাস্কর্যসঙ্গীত কেউ দেখছে না, শুনছে না,
সোফাটা ছাড়া।
সোফা নিষ্প্রাণ, তাই কাজ করে যেতে বাধ্য। সোফাটা কালো,
তাই মানুষের ক্রীতদাস।
তারপর একদিন সোফার এক প্রশংসক এলো। একটা পুচকে বাচ্চা মেয়ে। পাশের চেয়ারে বসে বসে দীর্ঘসময় ধরে দেখলো সোফার মুখে তৈরি হওয়া, মিলিয়ে যাওয়া, আবার তৈরি হওয়া,
আবার বদলে যাওয়া, ঐ সব দাগছাপগুলোকে। বাচ্চা মেয়েটার কোনো কামকাজ ছিল না। সারাদিন বসে বসে সোফার ওপর শরীরের লিখন দেখে গেল একমনে। কখনো হাসিমুখ স্মাইলি, কখনো ব্যাজার। নানা সাইজের টরসো, নানারকম দাগছাপ। মেয়েটা নিজে গিয়ে বসলো না সোফার ওপর। ও সোফাটাকে বাগে আনতে চাইলো না। শুধু দেখে গেল আসা যাওয়ার মাঝে দাগছাপের অনন্ত খেলা। সোফাটা ক্রমেই ঘোর কৃষ্ণবর্ণ হয়ে উঠতে লাগলো।
মেয়েটাকে ওর মা ডাকলো। অফিসের কাজ হয়ে গেছে। এবার যাবার পালা। মেয়েটা সোফার দিকে শেষবার তাকালো, তারপর মার হাত ধরে রওনা দিলো। সোফাটা আবার একলা হয়ে গেল।
একটা সোফা। কালো। একদিন একটা লোক এসে তার ওপর বসতেই... বুম...
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন