কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০১৭

অলোকপর্ণা

ধারাবাহিক উপন্যাস






তাহার নামটি


(আট)  

মুখোমুখি বসে আছেন সুনীল মজুমদার আর রঞ্জনা।
ঋতম এগোচ্চে না কেন?”
কোথায় এগোবে...
তুমি ভালোই জানো জিজি, বিয়ের কতা পারচে না কেন?”
সেটা কি আমার জানার কথা, জ্যে?” সুনীল মজুমদারের চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে রঞ্জনা।
আমার তো মনে হয়, তোমারই জানার কতা, ইন ফ্যাক্ট, তোমার জন্যেই কতাটা এগোচ্চে না এটা আমি শিওর!
কাঁধ ঝাকিয়ে রঞ্জনা বলে, “আমি কি করতে পারি এখানে
ঋতমকে কি বলেচো তুমি, তোমার কি অন্য কোনো প্ল্যান আচে, মনে তো হয় না, চিরকাল ঘাড়ে চেপে খাওয়ার প্ল্যান করে রেকেচো মনে হচ্চে
তোমার অনেক কিছুই মনে হয় জ্যে”, হেসে ওঠে রঞ্জনা।
তবে? ছেলেটি কে? কী করে?”
কোনো ছেলে নেই
তাহলে বিয়েতে মত নেই কেন!?” ধমকে ওঠেন সুনীল মজুমদার।
ধমকে লাভ নেই জ্যে, আমার বয়স আর নয় বছর না!চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় রঞ্জনা।
সুনীল মজুমদার কিছুক্ষণ বুঝতে পারেন না কি বলবেন।
আমি আসছি জ্যে”, রঞ্জনা বেরিয়ে আসে।

দেওয়ালে আনাড়ি হাতে রঙ বোলায় রাজীব। পাঁচিল বেয়ে নিচে নেমে নেমে আসে  রঙ। তাকে আবার এক আঁচড়ে ওপরে তুলে দেয় অঞ্জন। রাজীব জানে না, অনেকক্ষণ থেকেই অঞ্জন পাঁচিলে গরিমার নাম লিখছে। সাদার উপর সাদায় নাম লিখছে, তাই রাজীব টের পাচ্ছে না, কিন্তু সে নাম জ্বলজ্বল করছে অঞ্জনের চোখে। আবার কিছু পরে ব্রাশের আঁচড়ে সেই নাম নিজেই মুছে দিচ্ছে অঞ্জন। খেলায় খেলায় পাঁচিলে নতুন রঙ চড়ছে।

জুলপি, তুই একটা তালগান্ডু!
অঞ্জন ভ্রূ কুঁচকে রাজীবের দিকে তাকায়।
যদি সেদিন পেচ্ছাপ না করতিস, দিদি খচে গিয়ে এসব করত না, আর আমাদেরও এরকম ন্যাকাচোদাতে হত না!
তোর ভালো লাগছে না রঙ করতে?”
“- বাল
অঞ্জন চুপ হয়ে যায়। ব্রাশ দিয়ে আবার সাদায় গরিমার নাম লেখে, লিখে সাদা দিয়েই মুছে দেয়।
এই দেখ, জুলপি, এইখানে লিখছি, ‘জুলপি একটা গান্ডু’, দেখতে পাচ্ছিস?” সাদার উপর সাদায় লিখে রাজীব গর্বিত চোখে অঞ্জনের দিকে তাকায়।
অঞ্জন চেষ্টা করে দেখার, কিন্তু ধরতে পারে না ঠিক কোথায় লেখা, “নাহ, পাচ্ছি না...
ধুর বাল, কিছু যদি হয় তোকে দিয়ে!রাজীব আবার ব্রাশ বোলাতে শুরু করে।


প্রিয় সাব্বির,

তিনি বললেন, “Before you embark on a journey of revenge, dig two graves.”

তবু কেন ইচ্ছে হয় টেনে বের করে আনি, হড়হড় করে নামিয়ে দিই বেসিনে, তুমি জানো কার কথা বলছি, কি বলছি, কেন সারাটাদিন আমার চোখদুটো জ্বালা করে, জ্বালা করে বেড়ায়...
গতকাল তোমায় জ্বালিয়ে দিয়েছিলাম। তবু আজ, তবু কেন বার বার তোমার কাছে ফিরে আসি সাব্বির? ঋতমকেও জিজ্ঞেস করেছি সাব্বির কে?- বলতে পারেনি। আমিও কি পেরেছি কখনও? তুমি কে সাব্বির?
কে তুমি?

যখন আকাশে তাকাই, সপ্তর্ষিমন্ডল দেখতে পাই, প্রশ্নচিহ্ন। কেন এত প্রশ্নচিহ্ন সাব্বির? কেন এত উত্তরহীনতা! কেন এত ঠাণ্ডা, কেন সব কিছু এত শীতল, কোল্ড!
জানি না আবার তোমার কাছে ফিরব কি না, হয়ত এই শেষ। ভালো থেকো সাব্বির,
ইতি,
রঞ্জনা।

পুনশ্চঃ তিনি এও বললেন, “Revenge is a dish which taste best when served cold.”

পেন নামিয়ে রেখে রঞ্জনা কিছুক্ষণ বসে থাকে। তারপর পৃষ্ঠাটা কুঁচকে দলা পাকিয়ে ব্যালকনির দিকে ছুঁড়ে দেয়।


ওর নাম গরিমা”, ব্রাশ চালাতে চালাতে বলে অঞ্জন।
কি?... কার নাম, ও! মাল, ভালোই তো পুরকি তোমার, ঠিক নাম জেনে এসেছো
রাজীবের কথা শুনেও না শোনার ভান করে অঞ্জন রঙ করা জারি রাখে।
তা কদ্দুর ভাই?”
কি কদ্দুর?”
মানে কিছু এগোলো?”
কি এগোবে?”
আরে বাল গরিমার কেসটা...
কেসের কি আছে
গাঁড় মারাবলে ড্রেনে থুতু ফেলে রাজীব রঙ করায় মন দেয়।
ঠিক তখনই উপর থেকে কি যেন একটা অঞ্জনের ডান কাঁধে এসে পড়ে, ভয়ে ভয়ে উপরে তাকায় অঞ্জন। কাউকে দেখা যায় না। নিজের কাঁধেও কিছু খুঁজে পায় না অঞ্জন। রাজীব এক মনে রঙ করে চলেছে, প্রায় শেষ হয়ে এসেছে কাজ। রাজীবকে আড়াল করে এদিক ওদিকে তাকিয়ে অঞ্জন দেখে একটা দলা পাকানো কাগজ পায়ের কাছে পড়ে আছে। নিচু হয়ে তুলে আনতেই টের পায় কিছু লেখা আছে তাতে।
চল বে, শুকোক মালটা,” কোমরে হাত দিয়ে রঙ করা পাঁচিল দেখতে দেখতে রাজীব বলে।
অঞ্জন দ্রুত কাগজটা পকেটে চালান করে বলে, “এক মিনিট”, পাঁচিলের প্রায় শুকিয়ে আসা এক অংশে বড় বড় অক্ষরে কালো রঙে লিখে দেয়, ‘এখানে প্রস্রাব করিবেন না

আরেকটা নুচি দি?”
না কাকিমা, আর না...অঞ্জনের বারণ না শুনেই আরো দুটো লুচি তার থালায় ফেলে দিয়ে চলে আসেন কাবেরী। দেখেন রান্নাঘরের দরজায় রঞ্জনা দাঁড়িয়ে, তাকে উপেক্ষা করেই কড়াইতে দুটো বেগুন ছেড়ে দেন।
তুমি বাড়ি ডেকে ওই মুতানোটাকে লুচি খাওয়াচ্ছো!
আস্তে জিজি! কি হচ্চে!
কি হচ্ছে মানে, ওকে ডেকে বাড়িতে বসিয়ে খাওয়াচ্ছো তুমি! কি তুমি মা!
চুপ! ওরা পাঁচিলে রঙ করে দিয়েচে আজকে, অনেক খেটেচে অঞ্জন আর তোর ভাই
বাহ্‌, অঞ্জন! ছিল জুলপি, পাঁচিলে রঙ করে অঞ্জন বনে গেল! আর যে মুতেছিল আগে, সেটা মাফ! দারুণ!হাততালি দিয়ে উঠল রঞ্জনা।
অ্যাট লিস্ট তোমার মত বাড়ি বসে আমার পয়সা ওড়াচ্চে না ওরা!দরজায় এসে দাঁড়ালেন সুনীল মজুমদার, “কাবেরী, টোটো আর টোটোর বন্দুকে দেকেশুনে খাইয়ো,”
রঞ্জনার মাথায় যেন আগ্নেয়গিরি জ্বলে ওঠে, সে বেরিয়ে আসতে যায় রান্নাঘর থেকে। সুনীল মজুমদার তার পথ থেকে সরে যান। বলে ওঠেন, “আর সত্যি কতাটা জানো তো কাবেরী, পাঁচিলের গায়ে ওরা লেকেনি, লিকেচেন ইনি। লজ্জাশরম তো নেই, ওদের উপর দোষ দিয়েচেন, ভেবেচেন আমি বুজবো না, সুনীল মজুমদারকে ফাঁকি দেওয়া অত সোজা নয়!
রঞ্জনা চলে যেতে গিয়েও থেমে দাঁড়ায়, তার মাথার ভেতরটা দপ দপ করতে শুরু করে, “মা, আরেকটা সত্যিকথা জানো?”
কাবেরী প্রমাদ গোনেন, রঞ্জনা বলে চলে, “ও হ্যাঁ, তুমি তো জানোই, তোমায় তো সেইদিনই এসে বলেছিলাম, আর তুমি বলেছিলে, এসব বলতে নেই!
সুনীল মজুমদার বলেন, “কি বলতে চাইচে ও কাবেরী?”
কাবেরীর মুখ কালো হয়ে যায়।
জানো না তুমি জ্যে, মনে নেই তোমার! এত সহজে ভুলে গেলে! অবশ্য এটা অনেক বছর আগেকার ব্যাপার, এই ধর বছর ষোলো আগে, রিক্সায়... মনে পড়ে জ্যে?”
কি, কি বলতে চাইচো?” খাবি খান সুনীল মজুমদার।
রঞ্জনা চেঁচিয়ে ওঠে, “শালা পার্ভার্ট মলেস্টার!
সপাটে রঞ্জনার গালে চড় মারেন সুনীল।
রঞ্জনার মাথা ঝন ঝন করে ওঠে। সাথে সাথে সে সুনীল মজুমদারের যৌনাঙ্গ লক্ষ্য করে লাথি চালায়।
চিৎকার করে মাটিতে বসে পড়েন সুনীল।

পাশের ঘরে বসা অঞ্জন রাজীবকে বলে, “আমার মনে হয় এখন চলে যাওয়া  উচিৎ। খাবারের থালা রেখে এঁটো হাতেই কোনো রকমে চটি গলিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে রাজীবদের বাড়ি থেকে। লুচি, বেগুন ভাজার থালা হাতে মাথা নিচু করে বসে থাকে রাজীব। ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া বেগুন ভাজার উপর এক ফোঁটা জল এসে পড়ে।

 (ক্রমশ)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন