বেঁচে থাকা
লক্ষ বছর বৃষ্টি ছুঁয়ে আসা চুম্বন ঘিরে
আজ হলুদ বসন্তের আগুন আগুন
আমার পলক পড়ে না, চোখ জুড়ে সবুজ বিপ্লব
তবু সে আমাকে বলে শান্ত গলায়
যাও চলে নদীর কাছে, মেঘের কাছে
যাও চলে স্বাধীনতার কাছে
দু 'ফোঁটা অমৃত
দাও শিশুটির ঠোঁটে
আমাদের মাটি নিচ্ছে এক শাশ্বত বিদায়
উড়নচন্ডী এক কবিতার উষ্ণ ছোঁওয়ায়
গলছে গ্লেসিয়ার, বরফের চাঁইয়ের ফাঁকে
আটকে আছে গুচ্ছ গুচ্ছ খন্ডিত উদ্ভিদ হৃদয়
এখনও জানলাম না জলের রসায়ন!
ওরিজিন
বিকেল গড়াতে গড়াতে সন্ধ্যে আসে
রাত্রি বন্দী হয় মহাশূন্যে নক্ষত্র ও গ্রহের হাতে
নীরবে সকালের পানে ঘুম-বন্দী আমিও যাই
ভৈরবীর নাভিতে ডুবে থাকা সেতারের ঝংকারে
আধময়লা বাসিঘরে খবরের কাগজের সাতকাহন
ভেন্টিলেটারে খড়কুটোর মধ্যে পাখিদের নীল ডিম
গড়াতে থাকে মা-পাখির বুকের ওম ওম পালকে
একদিন পাখিছানাও জন্মের পরে গড়াতে থাকে
মাতৃগর্ভের জরায়ু ছেঁড়া কান্নার দিকে
পরজনমে
আমার শায়িত আত্মাকে মাটি দিলো মৃত শরীর
পাখিরা উড়ছে আমার অবয়ব ঘিরে
বৃষ্টি শেষে জোনাকিরা আলো মাখা পায়ের ছাপ
রেখে গেলো ভেজা মাটির শরীরে
উদ্ভিদ দিলো সোনার সীতাহার বাঁধা ফসলের বীজ
ভালোবাসার সন্ন্যাসী বসে আছে অদূরে
মেঘজন্ম এলে বলবো তাকে এই মৃত্যু মানাচ্ছে না,
পরজনমে হবো কৃষক-পাখি রাখাল বাঁশির সুরে
নারী
সে কি আমাকে কখনো চোখ তুলে দেখেছিলো
বালিহাঁসের মত উড়ে উড়ে ছুঁয়েছিলো কি
আমার অপমানে শতচ্ছিন্ন শাড়ির আঁচল
তার কিশোর বাতাস এখনও কি জেগে আছে,
ঝড়ের দুপুরে বীরপুরুষের মত কুড়িয়ে আনা
কাঁচামিঠা আমের গাঢ় সবুজ রক্তের ঘ্রাণে,
সে কি আজও নদীর কাছে আসে পলির নরম
হৃদয় নিয়ে, ধানের শিষের
রঙ গায়ে মেখে
কুয়াশায় ছেয়ে গেছে চেনা নগরীর অলিগলি
বছরের পর বছর কেটে গেলো ইলোরার গুহায়
যে রাতে নগ্ন হয়েছিলো নদীর বিপন্ন ঢেউ
সে রাতে আমার শাড়ি হতে চেয়েছিল অসুস্থ মেঘ
দু 'হাতের মুঠোয়
লুকিয়ে প্রেম, ফুটপাতে শুয়ে পড়ি
শেষ অপরাজিতার ঘুমে, আমার ঘুমের মধ্যে
তোলপাড় হলো নদীর তরঙ্গ সারারাত ধরে
তবু ওরা ভাঙতে পারেনি আমার জলের শরীর
অনেক বছর পরে আবার নতুন জন্মে ফিরেছি
চেনা পাড়ার গলিতে, আমার ফিরোজা শাড়ির
নকশায় মাছরাঙা এসেছে ফিরে চেনা শাখায়
গ্রীবার মুক্তোছড়ায় জমা হয়ে আছে বেদনার নীল
খোঁপার পলাশ পাপড়িতে পূর্বজন্মের আঁচড়ের দাগ
আজ কপালে যত্ন করে এঁকেছি তীব্রতর তৃতীয় নেত্র
আমি ফিরে এসেছি, গর্ভে মানুষের জন্ম দেবো বলে
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন