কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

১৪ তপনকর ভট্টাচার্য

সংঘর্ষ ও প্রতিকার
তপনকর ভট্টাচার্য


অফিস যাওয়ার রাস্তায় অতনুকে ধাক্কা। রাস্তায় গড়াগড়ি। ধুলোমাখা জামাপ্যান্ট। হাতের চামড়া ছড়ে রক্ত। উঠে দাঁড়াতে হবে। তারপর ডেটল। কিন্তু ধাক্কা কে দিল, কেন-ই বা? ষাঁড় হতে পারে। ঢুসো অথচ শিং নেই। মোষের মতো গায়ের জোর। অতনু শুয়ে ছেদরে ফুটপাথে, দশটার রোদে। অতনুর জ্বালা অনুভব ছ্যাঁচা কনুই থেকে। গত সপ্তাহে পেছন থেকে এইখানে। সে তো ল্যাং ছিলো। আততায়ী এখনো অধরা। থানায় পাত্তা দেয়নি। পাগলের প্রলাপ এই বিশ্বাসে। তবে কেন আজ অথবা বারবার, প্রায় নিয়মিত। এটা ঘটনা, কারণ দুর্ঘটনা তো চরিত্রে আলাদা! খুব অসহায় অতনু পরের কাজগুলো ঠিক করে নেয়। যেমন,উঠে দাঁড়ানো, ডেটল এবং থানা। ল্যাং লাথির পর কিল চড় ঘুসি, তখন কে সামাল দেবে। এবং এইসব চলবেই, কেননা অতনু শত্রু পরিবৃত এবং একথা তার চেয়ে বেশি আর কে জানে! শত্রু অনেক। তারা বিব্রত করে চলেছে। অতনুর মেজ জ্যাঠার ছেলে চন্দ্রিল তাকে হিংসে করে। পাশের বাড়ির ভ্যান্টা, যখন তখন জিভ ভেংচে চোখ পিটপিট। মাঝে মাঝেই বক দেখায়। অতনুর সহকর্মী প্রচেত, কারণে অকারণে কাজে ভুল ধরে। এবং অফিসের বস্ ওমপ্রকাশ। ওত পেতে বসে আছে, কবে ঘাড় ধরে বের করে দেবে।

ডেটলের জন্য ওষুধের দোকান, অতনু শুনলো, ডেটল নেই। একটাও নেই।কনুই চুঁইয়ে রক্ত, হাঁটু ছড়ে জ্বালা, জামা ছেঁড়া, প্যান্টে দু’চারটে ফুটো। এ সব ওই ধাক্কার ফল। এই সব শরীরে ধারণ করে অতনু ঢুকে পড়লো থানায়।

থানার সেজবাবু হাসলেন।

-আজও কী ল্যাং?

মেজবাবুর খাঁকারি গলায়।

-চিনতে পেরেছেন?

বিরক্ত বড়বাবু।

-যত সব পাগল...

অতনু হাসলো। তিন বাবুও হাসি হাসি। অতনু বললো, ল্যাং নয়, আজ ধাক্কা। ডেটল আছে, ডেটল?

তিন বাবুর তিনটে ড্রয়ার, সেখান থেকে ডেটল তিন বোতল। তুলো তিন প্যাকেট।

স্বস্তির নিঃশ্বাস তিনটে টেবিল থেকে। এত অল্পে রেহাই!

ধাক্কা এবং আততায়ী ব্যাকস্টেজে। সামনে পরিচর্যা। ফার্ষ্ট এইড।

ইতিমধ্যে দু’তিনটে চোর অথবা পকেটমার। ধর্ষক, নিদেনপক্ষে ইভটিজার।

তার অপেক্ষায় থানা বাড়িটা। তুলোয় ভেজা ডেটল অতনুর ছড়ে যাওয়া কনুই, ছ্যাঁচা হাঁটু, ছেঁড়া জামা, ফুটো ফুটো প্যান্টে। শুশ্রূষা তো পাওয়া গেল -- এই ভেবে তিনটে ডেটলের বোতল খালি করে অতনু থানা থেকে বেড়িয়ে এল।

চড়, থাপ্পর, লাথি, ঘুসি, খিস্তি ও ভয় দেখানোর মধ্যেও থানায় ডেটলের গন্ধ। পরিচর্যা, শুশ্রূষা এবং ফার্ষ্ট এইড।

অতনু তার বসকে বললো -- বুঝলেন স্যার, ল্যাং আর ধাক্কা...পুলিশ থেকে আচ্ছা আচ্ছা মস্তান পর্যন্ত কাত। আমি আপনি তো নস্যি।

-এত ধকল। এত কিছু। আপনি কিন্তু অনেক স্টেডি।

অতনু্র চোখ পি্টপিট করে। বলে, স্টেডি, বাট স্লো। 
 
 

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন