কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৩

০৪ শ্রাবণী দাশগুপ্ত

জল, চশমা ও সবুজ গল্প
শ্রাবণী দাশগুপ্ত



আর কোনও কিছু না, নিশীথের মনে পড়ছিল চশমাগুলোকে। বাহারি ফ্রেম সুদৃশ্য বাক্সে। পাঁচ বছরে পাঁচটা। শেষেরটা মোটে তিনমাস আগে, জন্মদিনে। ঝুমুর বিরক্ত, য ত্ত স ব! যদিও চালশে দেরিতে –- গড়িয়ে গড়িয়ে পাঁচবছর পরে। দেখতে অসুবিধে... একবারেই বাইফোক্যাল। প্লাস ওয়ান আর মাইনাস ওয়ান। এখনো প্রায় একই পাওয়ার, তফাত ইতর বিশেষ। দোকানের আয়নায় চশমার নতুন ডিজাইনে মোটামুটি সাধারণ নাকচোখও একই। তবু সূক্ষ্ম পরিবর্তনটুকু খুব মন দিয়ে নিশীথ নিরীক্ষণ করে। হাফ-রিম দুটো, একটা রিমলেস, নতুনটা বড়সড় ফ্রেমে। সেলফ-অবসেস্‌ড্‌ লোক একটা... ভেঙিয়েছিল ঝুমুর।



ঠিক পেছন ফিরল না নিশীথ, ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল। মাঝারি মাপের একটা গল্প; দুলছে। কিন্তু তার সমস্তটুকু মজবুত ভাবে মনে নেই। টুকরো টাকরা এদিক ওদিক। ঠিক দুঃখ হলো না। একটু ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছিল পায়ের দিকে। সবে গয়ংগচ্ছ দুপুর শেষ। ঘাটলা থেকে খানিকটা নিচে সিঁড়িতে সে দাঁড়িয়ে। ধাপিটা গেছে বিশ্রি রকম ভেঙে। সবুজ জলের নিচে আরো কতখানি গভীর দেখতে পাওয়া যায় না। তার পা থরথর। অল্প হাওয়া ছাড়লে কী হবে বলা যায় না। বাবার কথা ভুলে গেছে। একদশক আগে মাকে পৌঁছাতে এসে ওপরের ঘাটলার শুকনোতে দাঁড়িয়েছিল। ভারি জল তেমনই ঠান্ডা। মা অবলীলায় সিঁড়ি ভেঙে তরতর কতদূর... একবারও পেছন দিকে তাকায় নি। তাকাতে নেই? তার আর অতদূর যাওয়া হলো কই? সিঁড়িটা এখনই ভাঙা, নড়বড়ে। পেছনে ঝুলন্ত গল্পে পাশাপাশি একজোড়া মসৃণ উঁচু কচি ঘাসের ঢিবি। কী অদ্ভুত! এর সঙ্গে ঝুমুরের কী সম্পর্ক?



হাতটা একভাবে টান করে রাখায় অবশ লাগছিল। নিশীথ জোর করে গুটিয়ে নিতে চেষ্টা করল। পারল না। কে হাঁ-হাঁ করে ছুটে এসে যতটা গুটিয়েছিল তাও সোজা করে দিল। চশমাবিহীন চোখে সবুজ গল্পের খামচা খামচা কিছু অংশের আলোময় ধাক্কা। শেষ চশমাটা বিশিষ্ট। প্রোগ্রেসিভ। ভাল মতো অভ্যাস হয়নি এখনও। দামও প্রচুর। দোকানদার নিখিলবাবু টুপি পরাল কিনা জানার উপায় নেই। চশমাটা কি আশেপাশে কোথাও... হাতটা বাড়ানো, অথচ একেবারে নাড়ানো যাচ্ছে না। গল্পটার মাত্র মাঝামাঝিটায় এমন ভাঙা সিঁড়ি। আর সামনে যাবার উপায় নেই। কষ্ট করে পিছনের ধাপিগুলোতে ফেরা যাবে কি? তাও কি হয়! কারা যেন ভাসছে এধার থেকে ওধার। ঝুমুর কোথায় এখন! প্রত্যেকবার চশমা কেনার সময়ে পঁচিশ পার্সেন্ট রিবেটে পালটে নেওয়ার কথা বলেছে। ওগুলো শেষ অবধি বোধহয় শোকেসে শোভা... গল্প শেষ হওয়ার আগেই তাকে কি তুলে রাখবে?




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন