পনিটেইল
পিনাকী সেন
ঝাড়া চল্লিশ মিনিট আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাকব্রাশ। রাউন্ড চিরুনি, ক্রু-জেল... হেয়ার-ব্যান্ডটা লাগাতেই অবশেষে হাতের মুঠোয় কাঙ্ক্ষিত নরম লোমশ দুলুনি। কতদিনের সখ। ছ’মাসের ওপর লাগল প্রায়। তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে নিজেকে দেখছিল স্যমন্তক... ঘোড়ার পিছন। একটু ফিনিসিং ট্রিম করতে হবে খালি। আজই। ছোট্ট একটু নুর রাখবে। ভাগ্যিস মৌবনীকে নিয়ে বেটটা ধরেছিল! গীটার নিয়ে ক্যান্টিনে গলা মেলালেই ঠিক প’টে যাবে। ‘যখন নীরবে দূরে...’
- কী রে দাদা? এতক্ষণ ধরে কী করছিস মেয়েদের মতো? এ বাবা পনিটেইল! দেখি দেখি
- হাত দিবি না, একদম হাত দিবি না বলছি, মার খাবি
সাইকেলের টায়ার আজই লিক হতে হলো! সারাতে দোকানে দিয়ে অগত্যা হাঁটাপথ। মোড়ের পার্লারটাই সব থেকে ভালো। মেইন রোড দিয়ে হাঁটলে এই একটা সুবিধা, বাস আসলে হাত দেখাও, স্লো হলে রানিং-এ উঠে যাও। বাস আসছিল। হাতও দেখিয়েছিল। কিন্তু হাত বাড়িয়ে যখন রডটা ধরেছে, তখনই টের পে্ গাড়ি স্লো হয়নি। প্রথম লাফটা ফসকালো। জুতোটা স্কিড করল ফুট-বোর্ডে। হড়কে অনেকটাই পিছলে গেল। আপ্রাণ দ্বিতীয় লাফটাও। খানিকটা ছেঁচড়ে যাওয়ার পর হাল যখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, শক্তিশালী কারোর একটা হাত বাসের ভেতর টেনে তুললো। সারা শরীর কাঁপছিল। দাঁড়াতে পারছিল না ভালো করে। মাথার ভেতরটা ঝাঁ ঝাঁ। তারই মধ্যে তাকে জ্ঞানদানের প্রতিযোগিতা চলছে যেন! ‘বয়সের দোষ, হিরোইজ্ম, জীবনটা সিনেমা নয়, স্টপেজ থেকে বাস ধরতে কী হয়!’ রাগে গা গোলাচ্ছিল, কোনো রকমে স্টেডি হওয়ার চেষ্টা করতে করতে স্টপ এসে গেল। ‘এই যে দাদারা, দিদিরা, দাদুরা, where there is life, there is risk’ -- শ্লেষটা ছুঁড়ে দিয়েই তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়ল স্টপেজে। ট্র্যাক-সুটটা অনেকটাই ফেঁসে গেছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে পার্লারের সিটে এসে বসে বড় করে একটা হাফ ছাড়ল। আয়নার দিকে তাকাতেই চোখ ফেটে জল এসে গিয়েছিল। সামনের দিকে অনেকখানি চুল খাবলা মেরে উঠে গেছে। ‘কী করে কী হলো?’ –- পার্লারের এক চেনা কর্মীভদ্রলোকের কৌতূহলী প্রশ্ন। ‘এখন কথা বলতে পারছি না, একদম ছোট করে ট্রিম করে দিন তো!’
মৌবনীর সংগে কাট হয়ে গেছে। স্যমন্তকের নিউ ক্রু-কাট হেয়ার স্টাইল নিয়ে বন্ধুমহলে ভিন্ন ভিন্ন ভোট অবশ্যই আছে। ইউনিভারসিটির লনে বসে একা একাই গুনগুন করছিল স্যমন্তক। ‘না জানে কোই...’। -- ‘হাই আমি আরাত্রিকা, ইউ রিয়েলি সাং ওয়েল।’ স্যমন্তক হাঁ হয়ে তাকিয়ে দেখল। ফার্স্ট-ইয়ার ইংলিশের সেই ডাঁটিয়াল বিউটিকুইন!
ঝাড়া চল্লিশ মিনিট আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাকব্রাশ। রাউন্ড চিরুনি, ক্রু-জেল... হেয়ার-ব্যান্ডটা লাগাতেই অবশেষে হাতের মুঠোয় কাঙ্ক্ষিত নরম লোমশ দুলুনি। কতদিনের সখ। ছ’মাসের ওপর লাগল প্রায়। তাড়িয়ে তাড়িয়ে মাথা নাড়িয়ে নিজেকে দেখছিল স্যমন্তক... ঘোড়ার পিছন। একটু ফিনিসিং ট্রিম করতে হবে খালি। আজই। ছোট্ট একটু নুর রাখবে। ভাগ্যিস মৌবনীকে নিয়ে বেটটা ধরেছিল! গীটার নিয়ে ক্যান্টিনে গলা মেলালেই ঠিক প’টে যাবে। ‘যখন নীরবে দূরে...’
- কী রে দাদা? এতক্ষণ ধরে কী করছিস মেয়েদের মতো? এ বাবা পনিটেইল! দেখি দেখি
- হাত দিবি না, একদম হাত দিবি না বলছি, মার খাবি
সাইকেলের টায়ার আজই লিক হতে হলো! সারাতে দোকানে দিয়ে অগত্যা হাঁটাপথ। মোড়ের পার্লারটাই সব থেকে ভালো। মেইন রোড দিয়ে হাঁটলে এই একটা সুবিধা, বাস আসলে হাত দেখাও, স্লো হলে রানিং-এ উঠে যাও। বাস আসছিল। হাতও দেখিয়েছিল। কিন্তু হাত বাড়িয়ে যখন রডটা ধরেছে, তখনই টের পে্ গাড়ি স্লো হয়নি। প্রথম লাফটা ফসকালো। জুতোটা স্কিড করল ফুট-বোর্ডে। হড়কে অনেকটাই পিছলে গেল। আপ্রাণ দ্বিতীয় লাফটাও। খানিকটা ছেঁচড়ে যাওয়ার পর হাল যখন প্রায় ছেড়েই দিয়েছে, শক্তিশালী কারোর একটা হাত বাসের ভেতর টেনে তুললো। সারা শরীর কাঁপছিল। দাঁড়াতে পারছিল না ভালো করে। মাথার ভেতরটা ঝাঁ ঝাঁ। তারই মধ্যে তাকে জ্ঞানদানের প্রতিযোগিতা চলছে যেন! ‘বয়সের দোষ, হিরোইজ্ম, জীবনটা সিনেমা নয়, স্টপেজ থেকে বাস ধরতে কী হয়!’ রাগে গা গোলাচ্ছিল, কোনো রকমে স্টেডি হওয়ার চেষ্টা করতে করতে স্টপ এসে গেল। ‘এই যে দাদারা, দিদিরা, দাদুরা, where there is life, there is risk’ -- শ্লেষটা ছুঁড়ে দিয়েই তাড়াহুড়ো করে নেমে পড়ল স্টপেজে। ট্র্যাক-সুটটা অনেকটাই ফেঁসে গেছে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে পার্লারের সিটে এসে বসে বড় করে একটা হাফ ছাড়ল। আয়নার দিকে তাকাতেই চোখ ফেটে জল এসে গিয়েছিল। সামনের দিকে অনেকখানি চুল খাবলা মেরে উঠে গেছে। ‘কী করে কী হলো?’ –- পার্লারের এক চেনা কর্মীভদ্রলোকের কৌতূহলী প্রশ্ন। ‘এখন কথা বলতে পারছি না, একদম ছোট করে ট্রিম করে দিন তো!’
মৌবনীর সংগে কাট হয়ে গেছে। স্যমন্তকের নিউ ক্রু-কাট হেয়ার স্টাইল নিয়ে বন্ধুমহলে ভিন্ন ভিন্ন ভোট অবশ্যই আছে। ইউনিভারসিটির লনে বসে একা একাই গুনগুন করছিল স্যমন্তক। ‘না জানে কোই...’। -- ‘হাই আমি আরাত্রিকা, ইউ রিয়েলি সাং ওয়েল।’ স্যমন্তক হাঁ হয়ে তাকিয়ে দেখল। ফার্স্ট-ইয়ার ইংলিশের সেই ডাঁটিয়াল বিউটিকুইন!
বেচারি ! পনিটেইল গন!
উত্তরমুছুনপড়ার জন্য ধন্যবাদ
মুছুন