কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

সুদেষ্ণা দত্ত

ধাক্কা
সুদেষ্ণা দত্ত


রুবান অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ভাবছিল চলেই যাবে। সার্কুলার রোডের ক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে রিচি রোডের কাফেতে বসা ভালো। পিয়াল আসবে বলেছিল ঠিক এগারোটায়।

অদ্ভুত সময়ে। এ সময়ে অফিস থেকে বেরোনোর অনেক হ্যাপা। তবু না বলতে পারেনি। কলেজের পুরনো দিন -- নস্ট্যালজিয়া -- বিশেষত তপস্যাকে বিয়ের পর পিয়ালের একদম গুটিয়ে যাওয়া -- এসব নড়েচড়ে কেমন ব্যথা জানান দিচ্ছে বুকের ভেতর। গাড়ি, বাড়ি -- সব করতে বড় জোর বছর বারো লেগেছে । এত বড় একটা পোস্টে পৌঁছতে আরও পাঁচ বছর।

তবুও সেদিনের কষ্টটা একটুও কমল না। কলেজের পোর্টিকোয় তপস্যার পাঞ্জাবির কোণটা দেখামাত্র রুবান বলতে পারত, সে কোন্‌ মুডে আছে, কী রঙের লিপস্টিক পড়েছে অথবা বড় টিপ পড়েছে কি না! তপস্যার মতো আর কাউকে এতটা খুঁটিয়ে কখনো দেখেনি সে। মা’কে একবার পুজোর সময় রুবান শাড়ির কুঁচি ধরে দিয়েছিল, সেদিন মা’কে এমনই খুঁটিয়ে দেখেছিল। বড় টিপ, শাড়ি এসবে মা’কে একদম অন্যরকম দেখায়।

কাফের দরজায় অন্যমনস্ক ধাক্কা খেল রুবান। ভেতরটা একদম ফাঁকা। আচ্ছা, আজ কি তপস্যা আসবে? ওদের মেয়ে? ''আমাদের মেয়ে হলে নাম রাখব রূপসা -- রুবান আর তপস্যার মেয়ে '' -- তপস্যা বলত। সেই মেয়ে যেদিন হলো, রুবান অসম্ভব কেঁদেছিল। খুব ইচ্ছে ছিল যাবে মা-মেয়েকে দেখতে। ঈশা বারণ করেছিল-- ''দাদা তোর কি কোনো পার্সোনালিটি নেই?'' কাল পিয়ালের ফোন পেয়ে এখনো অবধি অপেক্ষায়। কেন আসবে, কে কে আসবে, কিছুই জানা নেই। শুধু এক অমোঘ আকর্ষণে কাউকে না জানিয়েই ছুটে এসেছে। গাড়ি না নিয়েই। তার স্ট্যাটাস বাদ দিয়ে রুবান আজ সেই কলেজের দিনের মতোই দেখা করতে চায়। কার সঙ্গে আসলে? পিয়াল না তপস্যা? না, ঐ ছোট্ট মেয়েটির সঙ্গে? যার স্বপ্ন আজকাল প্রায়শই দেখে...

পিছনে পিয়াল দরজায় দাঁড়িয়ে... প্রায় বুড়ো। চুল দাড়ি সব আগের মতোনই... শুধু ছাই রঙের। আরও দেখতে চায় রুবান। বিপর্যয়ের ছাই রঙ যেন ওদের পুরো সংসারযাত্রায় ছিটিয়ে দিতে চায় রুবান। কিন্তু এই ভেঙে-পড়া পিয়ালের অসম্ভব দুটো জ্বলজ্বলে চোখ যে প্রতিফলিত হচ্ছে ওর প্রায় হাঁটুর উচ্চতার ছোট্ট একটা মুখে! তপস্যাকে ছোটবেলায় দেখেনি রুবান। এমনই হয়তো ছিল, নিশ্চয়ই !

''আমি পিয়াসা... তুমি তো রুবান... বাবা বলেছে, তোমাকে প্রণাম করলে তুমি রাগ কর ...তুমি বিপ্লবী?'' রুবান কোনো উত্তর দিতে পারছে না -- স্বপ্নের রূপসা এসে ধাক্কা দিচ্ছে বুকে। ‘পিয়াসা’!... ‘রূপসা’ নয়! -- যাকে দেখবে বলে প্রায় পাগলের মতো এতটা পথ হেঁটেছে।

''চেকটা নিয়ে যা... যখন পারিস্‌ ফেরত দিস্‌... তাড়া নেই। দেখিস্‌... ভালো ডাক্তার দেখানোই ভালো... যদিও...'' রুবান থামে। ''এ রোগের কোনো চিকিৎসা নেই, তাই তো!'' পিয়াল হাঁটতে থাকে রুবানের পিছনে।

রুবান প্রায় ভূতগ্রস্তের মতোন দৌড়ায়...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন