কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৩

যশোধরা রায়চৌধুরী

একটি শরীরী গল্প
যশোধরা রায়চৌধুরী



ভদ্রলোকটি, ও মহিলাটি। শরীরী... খুবই শরীরী কারণেই ওদের দেখা সাক্ষাত। পেশাগত ভাবে মেয়েটি…

না, ভদ্রলোকের বগলে ব্রাউনপেপারে মুড়ে মদের বোতল বা পকেটে বেলফুলের মালা নেই। রেস্তরাঁয় সঙ্গিনীকে ড্রিংকসে ড্রাগস মুড়ে দিয়ে কাত করে ফেলাটাও অবাস্তব। এর পক্ষে। ভদ্রলোকটি, অকালে স্ট্রেসজনিত কারণে যার সুগার হয়ে গেছে, এবং টাক পড়ে গেছে, এবং ভুঁড়িটি নাদা থেকে চুপসাতে চুপসাতে এখন সেমি বাতাপিলেবু স্টাইল, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক হিরো। এই মুহূর্তে।

ভদ্রমহিলাকে নিয়ে শরীরী চিন্তাগুলি কেন যেন থামতেই চাইছে না। উনি ঘামছেন, প্রোফিউজলি ঘামছেন, ভদ্রমহিলার সঙ্গে দেখা হবার আগের মুহূর্তে। দেখা হবার জায়গা একটাই। সেখানেই, যেখানে প্রথমবার দেখা। মহিলার কর্মস্থলে।

করিডোর। মহিলা মুখে পান ঠুসে বেরিয়ে এলেন কাচের দরজা ঠেলে। মরণ হয় না বুড়োর, টাইপস মুখ। বললেন, গজাননবাবু, আবার এসেছেন।

ইয়েস ম্যাডাম। আপনার জন্য একটা ছোট্ট ইয়ে...

আপনাকে তো অনেকবার বলেছি, এভাবে আমাকে মিসড কল দেবেন না। আমার হাজব্যান্ডের নজর খুব খারাপ। সব কল লিস্ট চেক করে আজকাল। ওর সন্দেহবাতিক আছে।

গজানন পকেট থেকে রুমাল বার করে ঘাম মুছলেন। স্বপ্নে এই মহিলাকে বহুবার আদর করেছেন। এখন পারবেন না।

অথচ এই করিডোর নীরব, অর্ধ অন্ধকার, শুনশান। পেছনে ভ্যাট রাখা তিন রঙের। তিনটিতে তিন রকমের বর্জ্য ফেলার নিয়ম, বিপজ্জনক বায়োডিগ্রেডেবেল যথা, অসুখ ঘটিত, শরীরাংশ সমেত, এমনি বায়োডিগ্রেডেবল, নন বায়োডিগ্রেডেবল ইত্যাদি...

একটা গোলাপ ফুলের মতো আকৃতির জিনিস বার করলেন তিনি একটা কালো, পাশ দুমড়ে যাওয়া, ফুলে উঠে ফেটে যাওয়া ফোলিও ব্যাগ থেকে। খোলার পর বোঝা গেল ওটা বেনারসি জর্দার প্যাকেট। তমসার জন্য।

তমসার মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটল। ‘যাঃ কী করছেন! এসব কেউ আনে? আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে?’

‘প্লিজ, প্লিজ, অ্যাক্সেপ্ট ইট। আপনি কেমন আছেন?’

‘আপনি কেমন আছেন? রিকাভারি ঠিকঠাক হয়েছে?’

‘ঈশ্বর রক্ষা করেছেন, ওই রিপোর্টটা, ইয়ে হয়েছে।’

‘বলেই ছিলাম আপনাকে! রুটিন বায়োপ্সি। কিচ্ছু পাওয়া যাবে না। তাছাড়া পেলেই বা কী! আমাকে তো দেখছেন। যমেরও অরুচি।’

‘ছিঃ এভাবে কেন বলছেন?’

এদিক ওদিক দেখলেন গজানন। একবার হাতটা ছোঁবেন? ভর্তি ছিলেন আড়াই সপ্তাহ। তখনই ব্যাপারটা দানা বাঁধে।

একটা অঙ্গ বাদ যাবার পর শরীরে কী যেন নেই কী যেন নেই বোধ হয়। সারাদিন মন আনচান করে। তমসাদি বলেছিলেন, ‘বায়োপ্সিতে অঙ্গ গেলে মানুষের, বিশেষত মধ্যবয়সী পুরুষ মানুষের, অদ্ভুত ইনসিকিওরিটি হয়। আপনার যা হচ্ছে, তাতে অবাক হবার কিছু নেই।’

গলা নামিয়ে বলেছিলেন, ‘আমারও ব্রেস্ট ক্যানসারের একদম ফার্স্ট স্টেজে কাটা পড়েছে। এখন ভালো আছি। প্যাডেড ব্রা, সঙ্গে সাপ্লিমেন্ট।’

স্বপ্নে লজ্জাহীন দেখেন গজাদা। ফুলন্ত, ভরন্ত, পুরন্ত বুক; তমসা তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন।

এখন ঘামছিলেন। আড়চোখে ঐ তিনটে বর্জ্যর ভ্যাট দেখলেন। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কোনো অস্বাভাবিক গ্রোথ বা ম্যালিগন্যান্সি পাওয়া যায়নি। এই ছোট্ট স্যাম্পল ছাড়া বাকি সব পরিত্যাগ করা হলো।

একটা অঙ্গ কি ওই ভ্যাটের মতোই কো্নো একটা ভ্যাটে চলে গেল?

সমস্ত শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। তমসার শরীর ভাবেন রাতে শুয়ে। পরিপূর্ণ নারীর শরীর, মাতৃত্বময়, পৃথুল, তাঁকে ঢেকে দিচ্ছে স্তনদুটি, শ্বাসরোধ করে ফেলছে।

গজানন চলে গেলে, হাতের জিনিসদুটো নিয়ে তমসা ভ্যাটগুলোর দিকে এগিয়ে যান। বুড়ো বয়সের চুলকুনির দোষ। যাকগে, প্রৌঢ় লোক, এমনিতে ভদ্র টদ্র। গায়ে তো আর হাত দিতে সাহস পায়নি! রাতে, কেবিনে ইঞ্জেকশন পুশ করতে করতে চোখে যেন জলও দেখেছিলেন দু’একবার। বেচারা!

4 কমেন্টস্: