হ্রদের উপরে বৃষ্টি
কান্নার শব্দে বৃষ্টির হ্রদে তোলপাড়
আর আমার শরীর
তোমার শরীরে শুধুই ডুব সাতার কেটে চলছে।
পৃথিবীর তিনভাগ জলের মতো
তোমার চোখের তিনভাগ হ্রদে
আমি মাছ হয়ে আছি
তুমি কি তা টের পাও?
হ্রদের উপরে বৃষ্টি,
টুপ-টাপ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে
তোমার শরীরে, তোমার জলের গহীনে
মাছ হয়ে লুকিয়ে থেকে আমি সেই শব্দ শুনি।
বৃষ্টি আর কান্নার জলে
তোমার হ্রদের ভেতর
আমি উগড়ে দিই কিছু স্বপ্ন।
স্বপ্ন থেকে এখন শিমুল তুলো উড়ছে
এখন টুপ-টাপ শব্দে তোমার হ্রদ সন্তানবতী।
উড়ছে সব
আকাশের নীল অন্ধের চোখকেও ছুঁয়ে যায়।
তোমার বুক আমি ছুঁয়ে দেখেছি
সেখানেও নীলের ছোঁয়া
আমার ঠোঁটে নীল ছাড়া আর কিছু কি পেয়েছো কখনো?
বাতাসে আমার শরীর তোমার শরীর থেকে
কেমন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল
যেন ছিঁড়ে গেল সূতো থেকে ঘুড়ি।
উড়ছে, উড়ছে লাল ঘুড়ি, উড়ছে সূর্যাস্তের লালে।
সাদা সূতো ফ্রিজ হয়ে আছে মধ্যাহ্নের
ঝিকমিকে সাদা রোদ্দুরে।
সব বিচ্ছিন্ন, সব উড়ছে
উড়ছে আমাদের চুমো, হৃদপিন্ডের ধ্বনি
উড়ছো তুমি উড়ছি আমি, উড়ছে আমাদের শব্দ
যা কিছু উচ্চারিত
এবং যা এখনো উচ্চারিত হয়নি।
গোর থেকে শব বিচ্ছিন্ন
জীবন থেকে স্বপ্ন তাড়িত
এবং তোমার নিম্নাঙ্গ
এখন একটি কালো সিন্দুক
উড়ছে কালো সিন্দুক নিশীথের কালো গহ্বরে।
শুধুই উড়ছে না একটি নীল।
নীল মানেই
বিষাদের কাছে ভালোবাসার কৌমার্য অর্পণ।
নীল মানেই
অনুপস্থিতির মাঝে উপস্থিতির হরণ।
এবং নীল মানেই
বিষাদ ভালোবাসা এবং অনুপস্থিতি ও উপস্থিতির অনন্ত কালের বন্ধন।
উড়ছে সব
উড়ছে চুমোর আর্দ্রতা, হৃদপিন্ডের ধ্বনি
উড়ছো তুমি উড়ছি আমি
উড়ছে সূতো উড়ছে ঘুড়ি।
সবই উড়ছে নীলে
আকাশের নীলে, বাতাসের বধিরতায়।
শুরুর আগে আর
শেষের পর
আরো একবার যদি ফিরে আসি
আমাকে তুমি নিঃশ্বাসে তুলে নিও।
আরো একবার আমি তোমার নিঃশ্বাসে
শূন্যতা হয়ে ঢুকে যেতে চাই। শব্দের প্লাবন
স্পর্শের উত্তাপ সবই তো একসময়
শূন্যতার বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে যায়।
মানুষের দুঃখের কি কোনো রং হয়?
অথবা রং-এর কি আছে কোনো শব্দ?
দুঃখ রং শব্দ সব কিছুই আরম্ভে
কুয়াশার আস্তরণ, সব কিছুরই শেষে ইতিহাসের গাম্ভীর্য।
কেবল মাঝামাঝি সময়টুকুতে ভাষা, ব্যাকরণ, প্রার্থনা
মাঝের ব্যাপ্তিতেই তোমাকে চাওয়া এবং না পাওয়ার কান্না।
শুরুর শুরুতে এবং শেষের শেষে
তুমি নেই—কান্না এখানে অশ্রুহীন, শব্দহীন।
শুরুতে এবং শেষে
ঈশ্বর নেই, পবিত্র বর্ণমালা অর্থহীন
এবং অবতার এখানে কর্মহীন।
শুরুর আগে এবং শেষের পরে
শুভ অশুভে কোনো প্রভেদ নেই।
পবিত্র বর্ণমালা নিয়ে অপেক্ষাতেই সময় ফুরোবে
ঠোঙা বানাতেও কেউ কিনে নেবে না।
কারণ, শূন্যতা বাজারে বিক্রির জন্য
কোনো ফেরিওয়ালা নেই
কোনো মনোনীত জনের দরকার হয় না।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন