কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

অদ্বয় চৌধুরী

মাছেরা


লম্বা বারান্দাটায় ঘরের দরজার পাশেই যে অ্যাকোয়ারিয়ামটা রাখা ছিল তার মাথার উপরেই বারান্দার আলোটা জ্বলত সারা রাত। সারা রাত জ্বলাটাই নিয়ম ওই আলোটার। অ্যাকোয়ারিয়ামের তিনটে মাছ রাতভোর তাকিয়ে থাকত আলোটার দিকে এক চোখে অন্য চোখটাকে আলো থেকে আড়াল করে রাখত। ওরা বোধহয় সেই আড়াল করে রাখা চোখে ঘুমিয়ে নিত, আর এদিকের খোলা চোখে আলো মেখে কথা বলত আমার সঙ্গে। বাইরে আলো ফোটার পরে শুতে যাবার আগে আমি ওদের বলে যেতাম, ঘুমাও, ভালো করে ঘুমাও। ওরাও উত্তর দিত যে উত্তর প্রতিধ্বনির বুদবুদ হয়ে ছড়িয়ে পড়ত আলোকিত জলের কণায় কণায়

কোনো এক সময়, হয়তো বহুদিন আগে, এখন আর ঠিক মনেও আসে না দিনের হিসেব, ওরা ভালো করে ঘুমাতো রাতেতখন আমিও ঘুমাতাম সারা রাততখন ওরা ছিল একঝাঁক রঙিন আলোতারপর স্মৃতির সঙ্গে সঙ্গে ঘুম হারিয়ে যেতে স্থান বদল হলো আলোর। ওই আলোরা তখন জেগে উঠল আমার  মাথার ভিতরবুভুক্ষা ভেসে উঠল মরা মাছ হয়ে

মাঝে মাঝে বারান্দার আলোটা নিভে গেলে আমি ভাবতে শুরু করি ওদের ক্রমশ বিলীন হতে থাকা সংখ্যার কথা। তিন ধাপ পেরোলেই শূন্যতা ছুঁয়ে ফেলবে আক্যোয়ারিয়াম। শুধুই নকল বুদবুদ পড়ে থাকবে ভাগশেষে। আমিও হারিয়ে ফেলব কথাদেরসেদিন শুতে যাবার আগে তাই আক্যোয়ারিয়ামটাকে সরিয়ে দিই বারান্দার এক কোণে, যেখানে নিয়ন আলো আর খুঁজে পাবে না ওদের চোখ। বরং ঘুম খুঁজে নেবে ওদের। কিন্তু সেই রাতে, নিয়ন আলোর তলায় যখন গুটিয়ে যাওয়া ছোট্ট ছায়া নিয়ে আমি বেরিয়ে আসি, দেখি ওরা ঠিক আগের জায়গাতেই ফিরে এসেছে, সেই আলোর নিচে, যেখানে ওদের প্রাণের স্পন্দন বুদবুদ আকারে নিয়ত আলোর দিকে ধাবমান।


সেই রাতে, আলোর নিচে ছায়ার সঙ্গে মাখামাখি হয়ে দাঁড়িয়ে, ছুঁড়ে দিই প্রশ্ন ওদের দিকে ওরাও ছুঁড়ে দেয় উত্তর। সেই প্রশ্নোত্তরের যুদ্ধশেষে জানতে পারি ওরা ভয় পায় আমার বেড়ে ওঠা ছায়াকে। আলো থেকে দূরে, বারান্দার ওই দূরবর্তী কোণে, যে ছায়া ওদের ছোট্ট আক্যোয়ারিয়ামের উপর এক বিরাট প্রেতস্বরূপ খাদক হয়ে হাজির হয়। আসলে, ওরা জানে আমার নিখোঁজ ঘুম আর প্রবল সজাগ খিদের কথা।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন