কালিমাটি অনলাইন / ৪৯
আমাদের সবারই কিছু কিছু নিয়মিত অভ্যেস আছে, যা আমরা কোনো
ভাবনা চিন্তা না করেই নিশ্চিন্ত মনে পালন করে যাই। অবশ্য তারও কিছু শ্রেণীবিভাগ
আছে। গুরুত্ব ও প্রয়োজন অনুযায়ী কোনো অভ্যেস যেমন দৈনিক, তেমনি অন্যান্য অভ্যেস
সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, বাৎসরিক ইত্যাদি। যেমন আমাদের প্রাতঃকৃত্যের ব্যাপারটা
নিতান্তই দৈনিক। সেটা সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক অভ্যেসে কখনই পরিবর্তিত করা যায় না। অথবা
যেমন সাপ্তাহিক অভ্যেস সারা সপ্তাহ চুটিয়ে কাজ করে মালিকপক্ষের মুনাফার ভান্ডার মজবুত
করে সপ্তাহান্তে একদিন ছুটির মেজাজে – ‘মেজাজটাই আসল রাজা’ – ভেবে রাজত্ব করার
ব্যাপারটা দৈনিক অভ্যাসে পরিবর্তিত করলেও সমূহ বিপদ। আর তাই অভ্যেসের বিভিন্ন
বৈচিত্রগুলো যথাযথ জায়গায় ব্যবহার করাই
সবার পক্ষে মঙ্গল। এই ধরুন আপনার প্রতিদিনের অভ্যেস সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধুয়ে
বা না ধুয়ে এক কাপ গরম চায়ের সঙ্গে খবরের কাগজটা টেনে নিয়ে চোখ বোলানো। এটা আপনার
না হলেই নয়। কেননা এর পরই আপনি নিশ্চিন্তে পটি করার জন্য নির্দিষ্ট ঘরে প্রবেশ করবেন
এবং যা কিছু অবাঞ্ছিত পদার্থ তা হাল্কা মনে ত্যাগ করতে পারবেন। অথচ মজার কথা
হচ্ছে, তার আগে যদি কোনো কারণবশত চা এবং খবরের কাগজ থেকে আপনি বঞ্চিত থাকেন, তাহলে
সেদিন সেই অবাঞ্ছিত পদার্থ ত্যাগ করা যে কতটা বিড়ম্বনার ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, তা
ভুক্তভোগীরা বিলক্ষণ জানেন। তবে এইসঙ্গে একথাও অস্বীকার করা যায় না যে, সময় পরিবেশ
পরিস্থিতি আমাদের অনেক অভ্যেসের পরিবর্তন ঘটায়। আমরা এক অভ্যেস থেকে অন্য অভ্যেসে
চলে যাই, বা কোনো কোনো অভ্যেস আর বজায় রাখাও সম্ভব হয় না। এই যেমন কিছুদিন আগেও
আমাদের ছিল নিয়মিত চিঠি লেখার অভ্যেস। পোস্টকার্ড, ইনল্যান্ড লেটার, খাম বা
এনভেলাপ কত কিছুই ব্যবহার করতাম চিঠি লেখার জন্য। এমনও হয়েছে, কাউকে হয়তো সারা বছর
কোনো চিঠি লেখা হয়নি, কিন্তু বাৎসরিক অভ্যেসে তাকে শুভ বিজয়ার প্রীতি শুভেচ্ছা
শ্রদ্ধা বা প্রণাম জানিয়ে চিঠি লিখতে ভুল হয়নি। আজও আমরা দুর্গাপুজোর দশমীর পরে
অনেককেই প্রীতি শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা বা প্রণাম জানাই ঠিকই, কিন্তু তা চিঠি লেখার
মাধ্যমে নয়। প্রসঙ্গত মনে পড়ছে, বেশ কিছুদিন আগে প্রতি বছর শারদ উৎসবের প্রাক্কালে বাংলা গানের
বিশিষ্ট শিল্পীদের পুজোর গান হিসেবে অসাধারণ সব গানের রেকর্ড বাজারে কিনতে পাওয়া
যেত। আমরা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকতাম সেইসব অবিস্মরণীয় গান শোনার জন্য। এটাও ছিল
আমাদের একটি বাৎসরিক অভ্যেস। দুঃখের কথা, এই অভ্যেসটাও সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে
আমরা হারিয়ে ফেলেছি। এইভাবে হারিয়ে গেছে অনেক অনেক কিছুই। পুরনো অভ্যেস থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে আমরা প্রবেশ করেছি নতুন নতুন সময়োপযোগী বিভিন্ন অভ্যেসের মধ্যে। বলা
বাহুল্য, নতুন বা নতুনতর প্রজন্মের জীবনে তার কোনো প্রভাব পড়েনি, তারা তো সেইসব
পুরনো অভ্যেসের সঙ্গে আদৌ পরিচিতই নয়! কিন্তু আমরা যারা এই দুটি সময়েরই সাক্ষ্য
বহন করছি, তাদের এই নস্টালজিক ব্যাপার
স্যাপারগুলো বড্ড উদাস করে দেয় মন। বিশেষত এই শারদ উৎসবের দিনগুলিতে। এসব অবশ্য আদৌ নতুন কিছু
কথা নয়, আপনারা সবাই এসব জানেন, বোঝেন। সময় ও সমাজ এই খাতেই নিরন্তর প্রবাহিত হয়ে
চলেছে। কিন্তু দুঃখটা তো দুঃখই হয়ে থাকে। কিছুদিন আগে ক্যাসেটে, সিডিতে এবং এখন ইউ টিউবে সারা বছর
‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার ঢালাও সুযোগ ও সুবিধে আছে। শোনেনও অনেকেই। কিন্তু একটা
সময় প্রতি বছর মহালয়ার দিন ভোরবেলায় তা শোনার যে বাৎসরিক অভ্যেস ছিল আমাদের, তার
যে আকর্ষণ ও আনন্দ, তা কি হারিয়ে যায়নি আমাদের জীবন থেকে! সেই দুঃখ আমরা রাখব
কোথায়! আসলে আজকের এই সদা ব্যস্ত জীবনে মহালয়ার ভোরে উঠে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার অভ্যেসটাই হারিয়ে
গেছে। প্রতি মুহূর্তে যা অতি সহজলভ্য, তার প্রতি কি আর কোনো আকর্ষণ থাকে!
এ বছর শরতের এবার বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে এসেছে। হেমন্ত আসার
জন্য প্রস্তুতি সেরে ফেলেছে। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আনন্দে থাকুন।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com /
kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal
Sen, Flat 301,
Phase 2,
Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar,
Jamshedpur 831002,
Jharkhand, India
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন