কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০১৭

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

দেবু


দেবু  দেবু  দেবু!
ষন্ডামার্কা লোকটার নাম দেবু বাপস্ গায়ে কী জোর! কুস্তি টুস্তি করে বোধহয় চেককাটা আন্ডার ওয়ারের ওপর কাঁধে গলানো হাতকাটা ময়লা স্যান্ডোগেঞ্জী হাতের শক্ত মাংসপেশী দুদিকে ফুলে উঁচু হয়ে আছে হাঁটুর নীচে কর্কশ লোম লক্ষ্মীর বাঁ হাতে মোচড় দিয়ে মা বলল, ফের যদি আজ থেকে ঘরের বাইরে পা দিবি, তো একেবারে গলা টিপে মেরে ফেলব!
কথা বাড়িয়ে লাভ নেইমায়ের হাত থেকে ছাড়া পাওয়া দরকারনিজেকে  ছাড়ানোর চেষ্টা করে লক্ষ্মীছেড়ে দাও! উঃ...
লক্ষ্মীর শরীরের প্রায় অর্ধেকটা মায়ের নাগালেডান হাতে চুলের মুঠি পাকিয়ে ধরে রেখেছে শক্ত করে। মায়ের সামনে দেবু যেন আলেয়ার মতো হাতছানি দিয়ে ক্রমশ লক্ষ্মীর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আবার ঝটকা দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল লক্ষ্মীকিন্তু বাসন মেজে আর আছড়ে কাপড় কেচে গত তিরিশ বছরে মায়ের হাত  সাঁড়াশীর মতো শক্ত হয়ে গেছে। লক্ষ্মী মাত্র হালে এই মাস খানেক হলো কাজে ঢুকেছে একটা বাড়ির কাজ, যেখানে বাসন মাজা হয় ডিস ওয়াশারে আর ওয়াশিং মেশিনে জামা কাপড় ধোয়া হয়ধাক্কাধাক্কিতে মোবাইলটা ছিটকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। আর পড়তেই দু’টুকরো । ব্যাটারিটা খুলে গেছে। সবসময় ব্রা-এর ভেতরে  লুকিয়ে রাখে ফোনটাদেবুর সঙ্গে সেলফি তোলার ইচ্ছেটা মনে হয় অধুরাই থেকে গেল! কোন্ হারামী তাকে দেবুর কাছাকাছি ঘুরঘুর করতে দেখে মায়ের কাছে চুকলি কেটেছে কে জানে! দেবুকে ছাড়া বাঁচবেই না লক্ষ্মী! দেবু  দেবু দেবু!

ঠাস করে একটা চড় পড়ল বাঁ-গালেখন্ডযুদ্ধে হেরে গিয়ে নাকিসুরে কান্না শুরু করে দিল মা।  ওরে  কী  হবে রে ...এ...এ! ওরে  ও বারোভাতারীর পুত, তোর চোখ অন্ধ হয়ে যাবে! পায়ে কুঠ হবে! অমন সোনার পিতিমের মেয়ে আমার, তাকে কিনা শেষে কুদৃষ্টি দিলি! এমন অসোটা সইবে না তোর। মর! মর!
লক্ষ্মী আর সহ্য করতে পারল না। ও কেন আমায় বশ করতে আসবে! যা খুশি বলছ যে! ও একটা ফ্ল্যাটের মালিক, জানো? বাইক চালায়। ওর অনেক বন্ধুলোক আছে, তারা সব বড় বড় অফিসে চাকরি করে –
লক্ষ্মীর মা হতবাকনির্ঘাৎ দেবু নামের লোকটা মেয়ে পাচারের দালাল

ওদিকে দেবু তখন মরিয়া হয়ে লোকটার তলপেটে এক গুঁতো মেরে দিয়েছে। তারপর দু’হাতে পাঁজাকোলা করে লোকটাকে ওপর দিকে তুলে ধরতেই...  সাবাশ্!  সাবাশ্  দাদা!
চারপাশের ভিড়ে অনেকেই হাততালি দিয়ে ওঠেদেবু লোকটাকে দু’হাতে ওপর নীচ করতে থাকে। তারপর খেলার পুতুলের মতো দূরে ছুড়ে ফেলে তারপর খিচিক করে একদলা পানের পিক নিজস্ব ভঙ্গিতে ছুঁড়ে দেয় দেবুরাস্তার ধারের এই ভাঙ্গা দেওয়ালটা দেবুর ছুঁড়ে ফেলা পিকেই লাল হয়ে গেছে ।  

আমি প্রোমোটার দেবকুমার  ... যে কোনো রকম কাজ জানি। কারুর বডিগার্ড হওয়া, গোয়ান্দাগিরি করা, চোরাইমাল চালান দেওয়া, কাউকে ধরে পিটিয়ে দেওয়া ... সব সব। সেন্ট পার্সে্ন্ট গ্যারান্টী, আগে কাজ পরে টাকা। এই যে আমার বিজনেস কার্ড –
ভিড়ে কার্ড বিলোতে থাকে দেবু। দু’একজন হাত বাড়িয়ে কার্ড নেয়। বাকিরা কেটে পড়েএকজন কার্ড নেয় না আবার চলেও যায় না। তাকিয়ে থাকে দেবুর দিকে –
কিছু বলবেন?
নাহ্!
তবে শুদুমুদু দাঁড়িয়ে? ... খিচিক থুতু আবার গিয়ে পড়ে ভাঙ্গা দেওয়ালে ।
পোস্টমর্ডানিজম ... যাদু বাস্তবতা ... সমীর রায়চৌধুরী ...  আনমনে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করেন ভদ্রলোক
প্রত্যুত্তরে দেবু শুধু বলল, আসুন...

ঘন্টাখানেক পরের কথাশহরের বাজার এলাকার ঠিক মাঝখানে ছ’তলা এক ফ্ল্যাটের চারতলায় এক ঘরে সেই ভদ্রলোকটিকে নিয়ে ময়লা আন্ডারওয়ার পরা দেবু দাঁড়িয়েদেওয়ালের একদিক জুড়ে বই আর বই। দেখার মতো কালেকশন চিবিয়ে চিবিয়ে দেবু উচ্চারণ করল, যা বই ইচ্ছে হয় এখান থেকে নিন, কিন্তু ফ্ল্যাটের  চৌহদ্দির বাইরে যেন কোনো বই না যায়...

প্রেমের ছবি আঁকব বলে
নিলাম একটা সাদা ক্যানভাস
সমস্ত কাগজ জুড়ে সবুজ আর সবুজ
আর সবুজের সমারোহ
প্রেম মানে কী শুধুই লাল গোলাপ?
সবুজ থাকবে না?
ক্যানভাসের গোলাপেরা খেলল হাসল দুলল
তোর জন্য ক্যানভাসে এখন সবুজ সূর্যোদয়  
পৃথিবী ভরে ওঠে আশ্চর্য সব আওয়াজে
আর সাদা ক্যানভাসটা ধীরে ধীরে সবুজ হয়ে উঠছে
ঝণ স্বীকারঃ  অশোক তাঁতী (কবিতা)


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন