কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

<<<< সম্পাদকীয় >>>>

 

কালিমাটি অনলাইন / ১১৯ / একাদশ বর্ষ : নবম সংখ্যা

 




‘কালিমাটি’ পত্রিকা ও ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের সঙ্গে খুবই ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে ছিলেন সম্প্রতি প্রয়াত কবি-গল্পকার-প্রাবন্ধিক-শিল্পী সুবল দত্ত। কতটা ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তা ‘কালিমাটি’র সঙ্গে সম্পর্কিত প্রায় সবাই জানেন। ‘কালিমাটি’ পত্রিকা যখন প্রথম প্রকাশিত হয়, আজ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর আগে, জামশেদপুরে, তখন সুবল চাইবাসায় স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় কর্মসূত্রে সদ্য যোগদান করেছেন। সেখানেই তিনি তাঁর সহকর্মী বন্ধুদের সহযোগিতায় একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা ও প্রকাশ করেছিলেন। পত্রিকার নাম ছিল ‘উইঢিবি’। এছাড়াও চাইবাসা থেকে সেইসময় ‘রোরো’ নামে আর একটি পত্রিকাও প্রকাশিত হতো। এই দুটি পত্রিকারই আমি পাঠক ছিলাম। তবে আমার কোনো লেখা এই দুটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কিনা, স্মৃতিতে নেই। না লিখলেও, এই সূত্রে আমার সঙ্গে বন্ধুত্বের সূত্রপাত হয়েছিল সুবল দত্তর। সেইসময় তাঁর লেখায় লেগে থাকত মানভূমের মাটির গন্ধ। শহুরে গন্ধ থাকত কম। পরবর্তী সময়ে তাঁকে কর্মসূত্রেই চলে যেতে হয় প্রথমে বোকারো এবং পরে ধানবাদ। যেখানেই থেকেছেন, সেখানেই তিনি নিজের মতো করে সাহিত্যের পরিমন্ডল গড়ে তুলেছেন, জড়িয়েছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে। কর্মক্ষেত্র থেকে অবসর  গ্রহণের পরে তিনি চলে আসেন জামশেদপুরে এবং এখানেই একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করে স্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন। আর ঠিক এই সময় থেকেই ‘কালিমাটি’ পত্রিকা ও ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়েন। পত্রিকা ও ব্লগজিনের প্রতিটি সংখ্যায় তাঁর লেখা প্রকাশিত হতো। তিনি মূলত গল্প লিখতেন ‘কালিমাটি’তে। আর লিখতেন ঝুরোগল্প। একেবারে অন্য বিষয়, অন্য ভাবনা, অন্য আঙ্গিক এবং স্বতন্ত্র ভাষা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, অনেকের লেখা প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায়। তাঁরা সবাই মোটামুটি ভালো লেখেন। কিন্তু সবার লেখায় তাঁদের নিজস্ব কোনো ভাষা বা ডিকশন খুঁজে পাই না। নিজস্ব ভাষারীতি বা নিজস্ব শিল্পরীতির কোনো প্রতিফলন ফুটে ওঠে না। সেই বিচারে সুবল দত্তর যে কোনো লেখায় ছিল তাঁর নিজস্বতা। বিষয় অনুযায়ী তিনি আঙ্গিক ব্যবহার করতেন, এবং আঙ্গিকের অনুসারী ভাষা প্রয়োগ করতেন। শিরোনামে লেখকের নামের দিকে দৃষ্টিপাত না করে কোনো পাঠক যদি লেখার মধ্যে অনুপ্রবেশ করেন, এবং যদি সেই পাঠক সুবল দত্তর অন্য কোনো লেখার নিবিড় পাঠ পূর্বে করে থাকেন, তাহলে তিনি অনায়াসে সনাক্ত করতে পারবেন যে, এই লেখাটিও সুবল দত্তর, অন্য কারও নয়।

সুবল দত্তর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল খুবই সহজ এবং আন্তরিক। বয়সে তিনি আমার অনুজ ছিলেন, তাই দাদা সম্বোধন করতেন। একই শহরে বসবাস, মাঝে মাঝেই চলে আসতেন আমাদের ফ্ল্যাটে। আমরাও যেতাম তাঁদের ফ্ল্যাটে। ঘন্টা দু’তিন নিটোল সাহিত্য-আড্ডা হতো আমাদের। তবে কাজ থেকে অবসর গ্রহণের পর তাঁর শরীর বিশেষ একটা ভালো যাচ্ছিল না। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি আক্রান্ত হলেন হার্টের গন্ডগোলে। আর্টারিতে ব্লকেজের সমস্যা ছিল। সমস্যার সমাধানে অপারেশন করা হয়েছিল এবং হার্টের গন্ডগোল থেকে তিনি মুক্তও হতে পেরেছিলেন। কিন্তু ঠিক এই সময়েই চিকিৎসকরা আশঙ্কার সঙ্গে ডায়গানোসিস করেন যে, তাঁর শরীরের গভীরে বাসা বেঁধেছে মারণব্যধি। বলা বাহুল্য, এরপর থেকে মৃত্যুর দিনটি পর্যন্ত তিনি  সাংঘাতিক যন্ত্রণা সহ্য করে লড়াই চালিয়ে গেছেন ক্যানসারের বিরুদ্ধে। এবং শুধুমাত্র মারণব্যধির বিরুদ্ধে লড়াই নয়, একইসঙ্গে সব প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রেখে নিরলসভাবে সৃষ্টি করে গেছেন একের পর এক গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নিবন্ধ। প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকটি বই। ছবি এঁকেছেন অনেক। নবজাত পৌত্রের সান্নিধ্যলাভের জন্য আকাশপথে পাড়ি দিয়েছেন সুদূর আমেরিকায়। একজন মানুষ কতটা প্রাণবন্ত ও সৃষ্টিশীল হলে এভাবে সৃজনানন্দে বিভোর হয়ে থাকতে পারেন, তা সত্যিই বিস্ময়ের ব্যাপার। সুবল দত্ত তাঁর জীবনকালে তা করে দেখিয়েছেন। আমাদের সামনে রেখে গেছেন অনন্য দৃষ্টান্ত। এমন একজন সৎ, সদাশিব, সজ্জন এবং বলিষ্ঠ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের বিরল মানুষকে হারিয়ে আমরা আজ সত্যি সত্যিই খুব একাকী ও অসহায় বোধ করছি।  

আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :

kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com                

দূরভাষ যোগাযোগ : 9835544675

অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ : Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India.

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন