কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

অম্লান বোস

 

সমকালীন ছোটগল্প


কাটলো কুয়াশা কসৌলিতে

 

ডানদিকের সামনের চাকা বিপজ্জনকভাবে একেবারে খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে পড়েছে, ব্রেকটা ডানপায়ে প্রাণপণে চেপে ঠেসে দিয়েছে কোরক ফুটবোর্ডের পাটাতনে। নিঃশ্বাস বন্ধ, সেকেন্ডের ভগ্নাংশ দেরী হলেই বিপর্যয় ছিল অনিবার্য, শেষমুহূর্তেই থামাতে পেরেছে সে। কয়েকটা সেকেন্ডে যুগান্তরের অনিশ্চয়তা ঝুলছে। বাঁ পায়ে ক্লাচটা নীচে দাবানো, গীয়ারকেও রিভার্স মোডে দেওয়া, সঙ্গে সঙ্গে ব্রেকের ওপর চাপ ধীরে, অতি ধীরে হাল্কা করা - সব একসাথেই করতে হবে, অতি সন্তর্পণে। সামনে কাছে দূরে পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে  মেঘবৃষ্টির কুয়াশা। ঠোঁটদুটো দাঁতে চেপ, দম বন্ধ করে এ্যাক্সিলেটরে প্রবল চাপ দিল কোরক, পেছনের চাকা তীব্র কয়েকটা উল্টো পাক দিয়ে এক ঝটকায় গাড়িকে রাস্তায় তুলে ফেলল। চোখদুটো তখনও অবিশ্বাস্য অব্যহতির ভারে নিমীলিত।

প্রত্যেক শুক্রবার সন্ধ্যেটা নিজেদের সময় ঠিক করাই থাকে, তাই এই দুর্যোগের মধ্যেও বেরোতে হয়েছিল কোরককে চিরাগের জন্যে। প্রথম ডেটিং-এই পরিস্কার করে দিয়েছিল চিরাগ, চন্ডীগড়ে এলাঙ্গ মলের কফি হাউসের জানলার ধারে বসে। ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে উঁচু পদেই আছে সে। সোম থেকে বৃহস্পতি দিল্লী আর বাকি দিনগুলো কসৌলিতে। চন্ডীগড়ে সেক্টর নাইনে থাকে কোরক, প্রাথমিক স্কুলে পড়ায়। এবারে কসৌলিতে ওর জরুরী দরকার আছে, চিরাগের সাথে।

আর নিতে পারছে না কোরক, ওষুধের বিলে একজনের নাম আর পেছনে লেখা একটা ফোন নাম্বার খচখচ করছে - শায়মা, শায়মা চোপড়া। দুটো ওষুধ কিনেছে, নেটে দেখে নিয়েছে কোরক, এগুলো গর্ভাবস্হায় লাগে। আজ এর একটা বোঝাপড়া করতেই হবে। আর কোন ভুল বুঝতে বা ভুল করতে চায় না এতটা এগোবার পর। তাই এই দুর্যোগের মধ্যেই বেরোতে হয়েছে ওকে। দুপুরেই ফেসবুকে নাম ঠুকে শায়মার সম্বন্ধে জানতে পেরেছে সে।

-বিয়ে না হলেও তুমি তো এমনিই আমার অর্ধাঙ্গিনী। হাল্কা চালেই বলেছিল চিরাগ জাপানী গার্ডেন্সে অলস পায়চারীর মধ্যে।

-সে তো বটেই, সপ্তাহের কেবল অর্ধেকটা তো বরাদ্দ আমার জন্যে - তাই না? আর- বিয়ে না হলেও মানেটা কী? কেবল ঐ সিঁদূরটাই তো? ওটা তো…

কথা শেষ করতে দেয়নি চিরাগ, ঝাঁপিয়ে পড়েই বলেছিল, সে টপিকটা আপাতত থাক্ না কড়ি, প্লীজ্! ঐ বলেই ডাকত কোরককে, তার চেয়ে চলো না কাল সকালে কসৌলিতে আমার সঙ্গে জঙ্গল ইন্সপেক্শনে!

গেল না কোরক।

২০১২ হন্ডা জ্যাজ দাঁড় করিয়ে তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে তিরিশ ফুট ওপরে ‘সানি রে’র দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিভেজা শাড়িটা ধাতস্থ করার আগেই দরজা খুলে গেল, বাজপাখির মতই ছোঁ মেরে তাকে হাওয়ায় উড়িয়ে মেঝেতে নামাল চিরাগ। ডান পা দিয়ে সশব্দে বন্ধ হল দরজা, হাল্কা সবুজ আলোয় স্বপ্নের আবেশ, চালিয়েছেও একটা যুত্সই গান - আজ ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার’। উন্নত মানের টেকনোলজির দৌলতে মনে হচ্ছে কানের পর্দাতেই ফিসফিস্ করছে রেজওয়ানা।

-তোমার জন্যে সারপ্রাইজ্ আছে, নতুন কিছুর গন্ধ কি পাচ্ছো ম্যাডাম? খাঁটি তিব্বতি।

উত্তরের অপেক্ষা না করেই বড় বড় কাগজের ক্যারিব্যাগ থেকে একটা একটা করে কন্টেনর বের করছে চিরাগ আর সঙ্গে রানিং কমেন্টারী - শা মোমো, মাটন, মোকথুক পোর্ক, ভেজিটেব, এটা গোঙ্গলা মোমো, আর এটা চিকেন সাতে। স্যূপগুলো প্রত্যেকটার আলাদা। ডোসার্ট? ‘তু’ মানে এদের চীজ কেক্। সবকটাই ভাল লাগবে তোমার। মুখটা ঝলমল করছে চিরাগের।

ওয়াইনের গ্লাস ঠোকাঠুকি হল, নিয়মমতো দুতিনটে চুমুকও দিলো কোরক পাতলা গ্লাসের কিনারায় মেরুন লিপস্টিকের অস্পষ্ট ছাপ রেখে। এবারে কোরককে স্টেজে নামতেই হবে, হেস্তনেস্ত একটা করতে হবে আজ। বিয়ের কথা তুললেই পিছলে যাচ্ছে ও। গত চারবছরে দু-দু বার ভুল করে ফেলার জন্যেই দুজন সম্ভাব্য জীবনসঙ্গীর সংগে ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। মানসিকভাবে একেবারে থুবড়ে পড়েছিল কোরক, প্রচন্ড হিংস্র আর ভয়ানক হয়ে উঠেছিল। ছ’মাসের ওপর সাইকিয়াট্রিক হোমে চিকিৎসায় থাকতে হয়েছিল কোরককে। ভুল ভাবা, ভুল দেখা, ভুল ভাবনার তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল ওর সাধারণ বোধবুদ্ধি। জোর করেই হোম থেকে বেরিয়ে এসেছিল মুচলেখায় সাক্ষর করে, ডঃ চ্যাটার্জির সাবধানবাণী নস্যাত করে - মানসিকভাবে অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্হা তখন।

তোমার আর এক অর্ধাঙ্গিনী এই শায়মার সঙ্গে কতদিনের মেলামেশা?

দুটো তালুর উল্টোদিক চিবুকের নীচে আঙ্গুলে আঙ্গুল বাঁধিয়ে সোজা চোখে চোখ রেখে তীরটা ছুঁড়ল কোরক।

মুহূর্তে সব রোমান্টিক আবহাওয়া গেল উড়ে, পাল্টে গেল পরিবেশ। জোর করে ঠোঁটে একটা হাসির চেষ্টা  ঝুলিয়ে ব্যাপারটা সরল করার চেষ্টা করল চিরাগ - আমি ঐ নামে কাউকে চিনি না তো! উল্টোদিকের মুখ কিন্তু একেবারে পাথর। ঊড়ন্ত ভুরুদুটো এখন কুঁচকে আছে, ঠোঁটের কোণে জিঘাংসার ফণা।

-তবে এটা কি, এটা? পুরনো রসিদের পেছনে একটা ফোন নাম্বার - ভাল করে দেখার আগেই এক ঝটকায়  রসিদ উল্টে দিয়ে যেখানে আঙ্গুল ঠোকরাতে লেগেছে কোরক সেখানে লেখা আছে ‘শায়মা সুলতানা’।

কাগজটা ছিনিয়ে আনলো চিরাগ, ভালো করে দেখার জন্যে। ঐটুকু সময়ের মধ্যেই আর একটা বোমা ফাটলো-

-কীভাবে ম্যানেজ করবে ভেবে পাচ্ছো না তো?

কোঁচকানো দুই চোখে দুর্বিসহ বিষ কোরকের।

-এই নাম্বারে ফোন করে তোমার পেয়ারের শায়মাকে তো পেলামই না, ধরলেন এক বয়স্ক মহিলা। যতসব ভূয়ো মেয়েছেলে জুটিয়েছ!

-এটা দিল্লীর ওষুধের দোকান থেকে তোমার জন্য সাইকিয়াট্রিকের রেফারেন্স কুঁড়ি। এই নাম্বারের মহিলাই ডাক্তারের পেশেন্ট ছিলেন।

-আর ঐ অসহ্য নামটা - শায়মা?

-ওটা ঐ নামের মহিলার পুরনো বিল হবে, আমি ওনাকে চিনি না, বিলের পেছনে নাম্বারটা লিখে দিয়েছিল মানব, ওকে ফোন করে স্পেসিয়ালিস্টের খোঁজ নেবার জন্যে।

এখন কোরকের চোখ মুখের ভাষায় অবশ্যম্ভাবী অগ্নিকান্ডের পূর্বাভাস। ঠিক তিরিশ সেকেন্ডের নীরব উত্তাপ, চোখ সরেনি এখনও চিরাগের চোখ থেকে।

চিবিয়ে চিবিয়ে হিস হিস করে উঠল কোরক, গলাটা অস্বাভাবিক খসখসে - আমি ফেসবুক, হোয়াট্স্ অ্যাপ থেকে তোমার শায়মার সব খবর পেয়ে গেছি। আমার বান্ধবী দিল্লী থেকে ফোন করেছিল যে, ‘ভেগাস টপ্’ হোটেলে মার্চমাসে তোমরা চেকইন করে দুরাত্তির কাটিয়েছ, সেখানেই তোমার শয্যাসঙ্গিনীর সঙ্গে ওকে নাকি আলাপ করিয়ে দিয়েছ? উঁচু ডালের মডেল, পোরশা ৯১১ চালায়।

হঠাৎ বজ্রপাতে চৌকশ চিরাগও হতভম্ব, উল্টোদিকে দেওয়ালে টাঙানো যামিনী রায় ছাড়া এই মুহূর্তে কোন গতি নেই তার।

-কুঁড়ি শোন, তোমার ভুল হচ্ছে কিন্তু…

শেষ করতে দেবার ধৈর্য নেই কোরকের।

-হ্যাঁ। জানি তো এছাড়া তোমার আর কিছুই বলার নেই। বলো, বলো আমার মাথার রোগ আছে এখনও, তাই তো? তারপরে আমরা যেবার পুরী গেলাম সেখানে যে এই দুশ্চরিত্রা মেয়েটা কোথা থেকে এসে তোমাকে টেনে সমুদ্রের ঢেউ-এর পেছন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল? এক চিলতে পোষাকে অশ্লীল চেহারায় হাজার মানুষের নোংরা দৃষ্টি টেনে? কেন আমাকে হোটেলে ফিরতে হয়েছিল অপমানিত, পরাজিত, বিদ্ধস্ত হয়ে? একাই পুরী থেকে ফিরে এসেছিলাম, মনে আছে?

জানলার বাইরে মাতাল হাওয়ার শনশনানি আর পাহাড়ের ভাঁজে বৃষ্টির ঝিপঝিপ শব্। বাইরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়েই চিরাগ শান্ত গলায় বললো, কুঁড়ি এগুলো তোমার কেন মনে হচ্ছে জানি না। এসব কখনই হয়নি, আর আমি শায়মা বলে কাউকে চিনিও না। মাথায় ভুল ধারণা পুষে রেখো না কুঁড়ি, প্লীজ! উত্তেজিত হলে তোমার সাইকোলজিকাল ব্রেকডাউন…

-হ্যাঁ হ্যাঁ, সেটাই চাউর করে আমাকে ছেড়ে তুমি ঐ কদর্য সেক্সী মেয়েটাকে ঘরে তুলতে চাও তো?

-কী বলছ তুমি কুঁড়ি? বিশ্বাস হচ্ছে না? কালই দিল্লীতে কনট্ প্লেসে চলো, ঐ হোটেলের রেজিস্টারে গেস্ট লিস্ট দেখব আমরা। ঠিক আছে?

-তুমি মানবে না। আমাকে পাগল বানিয়ে হাসপাতালে পাঠাবেই? “ দাঁতের ফাঁক দিয়ে চেপে পরিষ্কার উচ্চারণে বললো কোরক।

কাঠের মেঝেতে কাঁপুনিটা হাল্কা হলেও চিরাগকে পেছনে তাকাতে হল। মূর্তিমতী পিশাচিনী, মাংস কাটার একটা ছুরি ডানহাতে, এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। ড্রায়ারে শুকিয়ে নেওয়া চুলের ঝাড় তখন বাঁচোখ ঢেকে গালের পাশে ঢল নামিয়েছে, অন্য চোখের কালো মণিটা ঠিকরে ফেটে বেরোচ্ছে। ধ্যাবড়ানো কাজলের ফাঁক দিয়ে অস্বাভাবিক জ্যোতি। জরি ঝলমল হাল্কা নীল আঁচল কোমর থেকেই গড়াচ্ছে পালিশ করা কাঠের মসৃণ মেঝেতে। চোখে বিভীষিকার বিদ্যুৎ, বাঁহাতে অবিন্যস্ত আঁচলে উথাল পাথাল উর্ধাঙ্গ ঢাকতে গিয়েই অঘটনটা ঘটল। আলগা ছড়ানো আঁচল এলোমেলো পায়ের তলায় পড়তেই পা পিছলে হাতের ছুরিটা নিয়ে, মুহূর্তে কোরক উপুড় হয়ে থুবড়ে পড়ল আর ঊর্ধমুখী ছুরিটা সোজা গেঁথে গেল ঠিক বুকের মাঝখানে অনাবৃত বিন্দুতে। চিরাগ শিকারী বাঘের ক্ষিপ্রতায় ঝাঁপিয়ে ওর ওপরেই পড়ল ওকে বাঁচাতে। কিন্তু দেরী হয়ে গেছে। মাধ্যাকর্ষণ নিজের অবশ্যম্ভাবী কাজ করতে ভুল করেনি। তিন চার সেকেন্ডেই কোরক আর চিরাগের শরীরে, পোষাকে, মাথার চুলে রক্তগঙ্গা। হ্যাঁচকা টানে পেছনে ব্লাউজের হুকগুলো ছিঁড়েই বাঁদিকের হাতটা ছাড়িয়ে ফেলল চিরাগ। কিচেন টাওয়েল দিয়ে চেপে ধরলো রক্তের উৎস পাগলের মত। রক্তটা বন্ধ করতেই হবে।

সেই মুহূর্তেই ইলেক্ট্রিসিটি দপ্ করে উধাও। ফিকে নীল ব্রা-তে তখন সবে রক্তের ছোপ্ লাগছে।

কসৌলির মিলিটারী হাসপাতালে জরুরী ব্যবস্হা, পুলিশে রিপোর্ট করা, ও টি থেকে সরিয়ে কেবিনে নেওয়া, সবই করা হলো নিয়মমতই আর  চিরাগকে পুলিশ জেল কাস্টডিতে রেখে নিল।

অনেক অসংলগ্ন কাহিনী শুনল চন্ডীগড় পুলিশ কোরকের জড়ানো কথার ঘোরে। চিরাগের অন্য নারীতে আসক্তি, কোরককে নিয়ে ভালবাসার অভিনয়, সেই সন্ধ্যেতে বাড়িতে ডেকে চিরাগ মদ খাইয়ে, ব্লাউজের হুক ছিঁড়ে অশালীন অত্যাচার করেছে। জানাজানি হবার ভয়ে তাকে অনেক টাকা দিতে চেয়েছিল এবং সে রাজী না হওয়াতে তাকে খুনের চেষ্টা।

ঐ নির্জন বাড়িতে কেউ ছিল না সেটা তো ঠিক, জামা কাপড়ের অবস্হা বর্ণনার অযোগ্য, দুজনের পেটে অ্যালকোহলের চিহ্ন, সর্বোপরি ছুরির হাতলে ওর আঙ্গুলের ছাপ। চিরাগের বিপক্ষে বিপদের লাল আলো দপ দপ করছে। মামলার গতি একতরফা রায়ের পথে।

জজসাহেব শেষ দুদিন সাক্ষ্য নিলেন পুলিশ সুপার, দুজন মানীগুণী প্রতিবেশী আর ডঃ চ্যাটার্জীর। প্রতিবেশীদের বক্তব্য কোরক বিগত বছরে শহর ছেড়ে একদিনের জন্যে কোথাও যায়নি, স্কুলের হাজিরাতেও একই রিপোর্ট। ভেগাস্ টপ হোটেলের রেজিস্টারে ম্যানেজারের সাক্ষ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত কোন চিরাগ নন্দী চেক ইন করেননি, এমন কি  গোটা মার্চ মাসের ক্যামেরা ফুটেজে কোনও রেস্টুরেন্টে বা লবীতেও ছবির সঙ্গে মিলিয়ে তার কোন অস্তিত্ব দেখা যায়নি। ডঃ চ্যাটার্জী এর মধ্যে পরীক্ষা চালিয়ে প্রমাণ সমেত আত্মবিশ্বাসে জোর দিয়ে সাক্ষ্য দিলেন যে এটা মানসিক রোগের লক্ষণ। কিছুদিন আগে আরেকবার একটু কম মাত্রায় এটাই কোরকের জীবনে ঘটেছিল এবং রিপোর্ট অনুযায়ী ছোটবেলা থেকে ওর মানসিক ভারসাম্য টলমলে ছিল। ভবিষ্যতে রোগটির হঠাৎ ফিরে আসার সম্ভাবনাটা বিলুপ্ত করা যায়নি সেবার। কোরক পুরী বা দিল্লীর হোটেল সম্বন্ধে যা বলেছে, সবই অলীক কল্পনা, পিওর হ্যালুসিনেশন। উনি তথ্য আর বিজ্ঞান দিয়ে আদালতকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হলেন, এটা সিজোফ্রেনিয়ারই স্বাভাবিক লক্ষণ।

যতদিন কোরক মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসায়, পুলিশ ততদিনে তার মোবাইল, আই প্যাড, অসংলগ্ন ভাবে লেখা ডায়েরী, ওর পুরনো ইতিহাস সব ঘেঁটে নিয়েছে। শেষমুহূর্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া সি সি টি ভি’তে সারা সন্ধ্যের ফুটেজটাও দেখে নিয়েছে তারা। অভিশপ্ত সেই সন্ধ্যের খুঁটিনাটি, কোরকের পা পিছলে পড়ে যাওয়া, আর ছুরিটা বুকে গেঁথে যাবার পর তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টাতেই যে ছুরির হাতলে চিরাগের আঙ্গুলের ছাপ পড়েছিল, সব পরিষ্কার হয়ে গেল ফুটেজ থেকে, কোন অশ্লীলতার চিহ্ন নে, দায় নেই চিরাগের।

কোরক আর চিরাগের মুক্তি প্রায় একই সঙ্গে হল। তারপরই ডাক্তার একটা অপারেশন করে নিশ্চিন্ত হলেন যে এই মানসিক জটিলতার মূল সমস্যা তিনি নির্মূল করে দিতে পেরেছেন। কোরক এখন অতিমাত্রায় স্বাভাবিক এক নারী।

আড়াই মাস পরে সন্ধ্যাবেলা ডঃ চ্যাটার্জীর মোবাইল ফোনটা কফি টেবিলের ওপর ঝনঝনিয়ে উঠলো - কোরক বলছি ডক্টর চ্যাটার্জী, চিনতে পারছেন? ২৬ শে মার্চ তারিখটা আমাদের জন্যে ব্লক করে রাখবেন প্লীজ! ঐ দিন সকালে আমার আর চিরাগের রেজিস্ট্রেশন আর বিকেলে রিসেপশন। আপনাকে তো আসতেই  হবে। ফরমাল কার্ডটা শিগ্গিরই পাঠাচ্ছি ডক্টর!

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন