কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৪ |
ডিভোর্স
প্রবীণ অ্যাডভোকেট নরেন সরকার সৃজিতাকে
দেখা করার জন্য সময় দিয়েছিলেন রাত আটটা নাগাদ। তাঁর দোতলা বাড়ির নিচের তলায় নিজস্ব
চেম্বার। সৃজিতা সময় মেনে চলতে অভ্যস্ত। তাই আটটা বাজার কয়েক মিনিট আগেই পৌঁছে গেল
চেম্বারে। নরেন সরকারের চেম্বার এখন ফাঁকা। সৃজিতা স্বস্তিবোধ করল। নরেন সরকার বললেন,
হ্যাঁ, আপনার কথা শুরু করুন!
সৃজিতা সামান্য ইতঃস্তত করে বলল,
আসলে যে সমস্যা নিয়ে আমি আপনার কাছে এসেছি, তা বলতে একদিকে যেমন সংকোচ হচ্ছে, তেমনি
খুব খারাপও লাগছে।
নরেন সরকার আশ্বস্ত করে বললেন,
কোনো সংকোচ করবেন না। আপনি আমার কাছে এসেছেন অর্থাৎ কোনো সমস্যার কারণে আইনি পরামর্শ
নিতে এসেছেন। সুতরাং সবটুকু খুলে না বললে আমি তো আপনাকে কোনো সাহায্যই করতে পারব না!
সৃজিতা নিজেকে একটু গুছিয়ে নিয়ে
বলল, হ্যাঁ স্যার, আমি বুঝতে পেরেছি, আসলে সমস্যাটা আমার একইসঙ্গে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক।
-বেশ বেশ! বলে যান!
-সমস্যার মূলে আমার স্বামী।
-আপনার স্বামী! স্বামীকে নিয়ে কী
সমস্যা? পরকীয়া? অথবা গার্হস্থ্যহিংসা?
-না, না! সেসব কিছু নয়। আসলে আমি
আর আমার স্বামীর সঙ্গে থাকতে রাজী নই। আমি বিচ্ছিন্ন হতে চাই। ডিভোর্স কেস ফাইল করতে চাই।
সৃজিতার কথায় প্রবীণ অ্যাডভোকেট
নরেন সরকার নড়েচড়ে বসলেন। সৃজিতাকে আরও সহজ করার উদ্দেশ্যে গল্প করার ঢংয়ে জিজ্ঞেস
করলেন, আপনি থাকেন কোথায়? বাড়িতে আর কে কে আছেন? কত বছর বিয়ে হয়েছে? বাবার বাড়ি কোথায়?
সৃজিতা সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে
বলল, আমাদের পাঁচবছরের বিবাহিত জীবন। আমি আর আমার স্বামী মানে সুজন দুজনেই বেশ দেরি
করেই বিয়ে করেছি। আসলে আমার বিয়ে হওয়ার কোনো কথাই ছিল না। কম বয়সেই শারীরিক অসুস্থতার
কারণে আমার জরায়ু অপারেট করতে হয়েছিল। সুস্থ হবার পরে জেনেছিলাম, গর্ভধারণ আর সম্ভব
নয়। আমি তাই নিজেকে যতটা সম্ভব শিক্ষিত করে কর্মক্ষেত্রে নেমে পড়েছিলাম। বলতে দ্বিধা
নেই, আমি এখন আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত।
-আর আপনার স্বামী!
-সুজন আমার জীবনের ধারেকাছেও ছিল
না। আমি ভাবিওনি আমার বিয়ের কথা। হঠাৎ কোনো আত্মীয় আমার সঙ্গে সুজনের বিয়ের সম্বন্ধ
নিয়ে এলো। আমরা দুজনেই তখন চল্লিশ উত্তীর্ণ। সুজন আমার শারীরিক সবকথা জেনে, এমন কী
আমি যে কোনোদিন সন্তানের জন্ম দিতে পারব না তা জেনেও আমাকে বিয়ে করতে রাজী হলো। বাড়ির
চাপে বিয়েটা হয়েও গেল।
নরেন সরকার বললেন, বাঃ! বেশ ভালোই
তো হয়েছিল!
সৃজিতা বলল, না স্যার, বিয়ের পরই
আমি বুঝতে পারলাম, আমি ভুল করেছি।
-সেকী! ভুল কেন? সুজন খারাপ মানুষ?
-না, খারাপ নয়, বরং অতিরিক্ত ভালো
মানুষ। এতটা ভালো মানুষ যে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। আপনি বিশ্বাস করুন, দাম্পত্য জীবনের
বিগত পাঁচবছরে আমাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়নি, ঝগড়া হয়নি, মনোমালিন্য হয়নি, কোনো ব্যাপারেই
দ্বিমত হয়নি। না, আমার পক্ষে এজীবন অসহ্য হয়ে উঠেছে। আমার দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমি এই
পরিবেশ থেকে মুক্তি চাই। আমি ডিভোর্স চাই।
দারুণ তো!
উত্তরমুছুনএই গল্পটাকে আমি কোনোভাবেই ঝুরোগল্প বলতে পারছি না। বরং এটা একেবারেই যেমন বিষয়গত দিক থেকে একটা গতানুগতিক গল্প, তেমনি গঠনগত দিক থেকেও নতুন কোনো প্রকরণের উপিস্থিতি পাইনি ডিভোর্স গল্পে।
উত্তরমুছুন