কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩

বিদিশা সরকার

 



ব্যক্তিগত গদ্য




সম্ভ্রম আদায় করবার জন্য কোনও নৈতিক দায় নেই যেখানে সেখানে আঙুর ফলবিষয়ে কোনও সন্দেহই থাকতে পারে না। উদ্বোধনের থালিগার্ল একটা হাততালি পেল কি পেল না সেটা কোনো বিষয়ই নয়। বিষয় সেই পদ্ধতিটা যেটা অতিক্রম করে সে এই যোগ্যতা(?) অর্জন করেছে। অনেক ডাইবেটিককে দেখেছি  মিষ্টির দোকানে লুকিয়ে লুকিয়ে সেরে নিচ্ছেন পরমার্থ। ভোগবাদের এক চিলতেই যার মোক্ষলাভের ভ্রান্তিবিলাস, ইনসুলিন নেওয়াটা তাদের স্বপক্ষের যুক্তি। সম্পূর্ণটা তোমার হাতে তুলে দেব কেন? তুমি কে হে? আসলে আমাদের সামনে কোনও উদাহরণ নেই। নেই কোনও পথিকৃৎ। দার্শনিকতা যেখানে ভানমাত্র তার জন্য সেবায়েত ও পারিষদ নিয়মিত যোগান দিচ্ছে কিছু কালো চশমাধারী অমায়িক হাসি। চোখের গতিবিধিই আসল মানুষকে শনাক্ত করে। অতএব চশমাটা খুলে কথা বলুন!  

এই পরজীবী জীবনকে উপেক্ষা করেও বেঁচে থাকা যায়। হয়ত কেউ যতটুকু স্বাধীনতা চেয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশিই পেয়ে গেছে। উদ্বৃত্ত সময়ের মেলাংকলিই কী নৈরাশ্যবাদ? প্রার্থিতের সামনে দাঁড়িয়ে স্পর্শকে শাসন করতে করতে অবিকল সজীব থাকাটা কী খুব জরুরী? হয়ত অনুকম্পার আশ্রয়ে বেঁচে থাকাটায় কোনও মহিমা থাকে না।

টানাটানির বিষয়টা নতুন কিছু নয়। রাজা’র ঘরেও টানাটানি, মুটের ঘরেও। তোমাকে দিতে পারছি না, কারণ আমার নেই। তবে রাজার ঘুমের সঙ্গে মুটের ঘুমের ফারাক অনেক। শ্রমে ক্লান্তি, রমণেও।

কীভাবে ধারণা জন্মায়? অনেক সময় অভিজ্ঞতাও যে বোবা হয়ে যায়। অথবা বিচার সাপেক্ষ দরখাস্তের মত ফাইলবন্দী। অপেক্ষার নির্বাসন। এই ধারণা জন্মানোর মধ্যে কিন্তু কোনো কৌশল নেই। কারণ কৌশল দুষ্কৃতীর মেধা। ছুঁৎমার্গে রসের রসদ ফুরায়। নিমন্ত্রণপত্র বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিলে সঠিক সময়ে সবাই আসেন কি? তার সিদ্ধান্ত সেই নিক।

আসলে উৎসবগুলোর একেকটা চরিত্র থাকে। ঝাক্কাস ব্যানারের পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা নো-এন্ট্রিবোর্ড। সারারাত রাস্তায় বসে সঙ্গীত সম্মেলনের শোনার রাত ফুরিয়ে গেছে। একটা মানুষও রেশ রাখতে পারছে না। এই যে ফুরিয়ে যাচ্ছে, ফুরিয়ে যাচ্ছে বলেই।

ভাষণ ও মঞ্চ প্রাথমিক। ধরে নেওয়া যাক এটাই সম্পর্কের ভিতপূজো। জনসমাগম, মন্ত্রোচ্চারণ, স্পনসর্‌, মিনারেল ওয়াটার। রোদ ঝড় জল বৃষ্টি বজ্রপাত – পাশাপাশি একই আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে ওরা দেখে নিচ্ছে নিজস্ব প্রোজেক্টরে। সেভ করে রাখছে বরাদ্দ আড়াই কাঠা, সংলগ্ন পুকুরের সিলভার কার্প, কলমি শাকের বাড় বাড়ন্ত।

এই হিসেব নিকেশের, দরদামের ভিতর থেকেই উঠে আসে সম্পর্কের পচন। মেলায় হারিয়ে যায় সখের বাজার। অন্ধের ভ্রমণ শ্রবণনির্ভর। তবুও ভ্রমণ অনিবার্য। চোখ থেকেও যে অন্ধ, তার কাছে সকলই এক। ক্রমশঃ মেনে নিতে নিতে আত্মশ্লাঘার জন্ম। তীর্থ পরমার্থের অজুহাত খাড়া করে। সতীর্থরা মার্জনার ভজনা। অবশ্য এটা সম্পর্কের মেকি দিক। তবুও পরিবেশের প্রভাবকে এড়াই কী করে! জন্ম মুহূর্তেই যে কান্নার জেহাদ। তারপর শিক্ষা ও দর্শনের সাথে সাথে কান্নাও সহবত শেখে। এও এক অভ্যাস। পাখির জীবনে খাঁচার মত। আকাশ চৈতন্য। সেই অশেষ অবিনশ্বর সত্যকে আত্মস্থ করার সুপ্ত অভীপ্সাই সহজলভ্য করে দেয় বৃত্তের ক্ষুদ্রতাকে। অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা লাঘব করার একমাত্র উপায় আত্মবীক্ষণ। শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্য দিয়ে নিয়ত বায়ুর সঙ্গে আকাশও আমাদের নশ্বর দেহে সেই শূন্যতার কথা বোঝাতে চেয়েছে, যা আমাদের বোধগম্য নয়। আসলে আকাশ তো সর্বত্র। সর্বব্যাপি। সেই পূর্ণতা যেহেতু দর্শনক্ষম নয়, কেবলই বোধের – তাই এই উপলব্ধিকে তার কাছে বিলীন করে দেওয়া এক উন্মোচন। শূন্যতা মুঠোয় তাই স্পন্দন। মুঠো খুলে যায় তখনই যখন প্রাণশক্তি অক্ষম তাকে ধরে রাখতে। তখনই মৃত্যুর মুহূর্ত! সেও কম আনন্দের নয়। অসীমে বিলীন।

সেই অসীমের অপেক্ষায়--

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন