কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

মিষ্টি মিত্র

 

সমকালীন ছোটগল্প


পতঝড় মে কুছ পত্তো কি, গিরনে কি আহট...

টেবিলের ওপর খোলা কম্পিউটার, অভ্র কিবোর্ড, সাদা কাগজ, একজনের দেওয়া কমলা পেন, কিন্তু রিতু লিখতে পারছে না কেন? বারবার চশমা খুলে পাশের রুমাল দিয়ে চোখ মুছছে। ভয় হচ্ছে, যদি হঠাৎ দরজা খুলে কোন স্টুডেন্ট চলে আসে! যদিও রিসেস টাইম, তাও। জোর করে রিতু রুমাল দিয়ে চোখ শুকনো করছে – কিছুতেই আজ যেন হচ্ছে না। কানে একটাই গুনগুন – ‘মেরা কুছ্‌ সামান তুম্‌হারে পাস পড়া হ্যায় / সাবন কে কুছ্‌ ভিগে ভিগে দিন...’। গানের সুর আর চোখের জল, দুটোই যেন সমানুপাতে বেড়ে চলেছে। রিতু স্ক্রিনে ট্যাপ করে গানটা বন্ধ করে।

‘ঔর মেরে এক খত্‌ মে লিপটী রাত পড়ি হ্যায়’ – মনে পড়ে রাতের পর রাত মোবাইল অ্যাপে চোখ রেখে অপেক্ষা। সারাদিনের প্রোটোকল, ডেকোরাম, কার্টেসি সব টপকে রাতে একটু নিজের মনের কথা খুলে বলা, গল্প করা। অ্যাপের দু’প্রান্তে মন থেকে মনের এক অদৃশ্য সূতো। ওপাড়ের লোকটাও কিন্তু কম যায় না – জানে রিতু খুব ভোরে ওঠে, তাও জাগিয়ে রাখে, ইচ্ছে করে অপেক্ষার শেষপ্রান্তে আসে। ‘ঝুট্‌মুট্‌ কে শিকবে কুছ’ – ও এলেই রিতু রেগে ওঠে – ‘এত দেরি হল কেন? কী করছিলে?’ কিছুক্ষণের মধ্যেই রাগ গলে জল। রাত গভীর হয়, শব্দের আলিঙ্গনে দু’পক্ষ বাঁধা পড়তে থাকে, ওদের মনে গভীর রাতের সপ্তর্ষি জেগে ওঠে। সেই প্রথম দিন – আকাশে শুকতারা, দুজনের হাতে হাত, রাস্তার ধূলো, নাকে রুমাল, টোটোর ঝাঁকুনি, ঝাঁকুনি থেকে রিতুকে আগলে রাখা এক শক্ত কাঁধ। সব নিয়েও কত সাবলীল দুজনে। কে বলবে মাঝবয়সের ছাপ পড়েছে তাদের ভালবাসায়! রিতু মনে মনে হাসে। প্রথম চুমু কি এত গাঢ় হয়, এত দীর্ঘ?  শ্যাম্পু করা চুল উড়ে যাচ্ছে, অভিকর্ষের টানে রিতুর মাথা সেই শক্ত কাঁধে নুয়ে আসছে। দুটো বলিষ্ঠ হাত ওকে বেড় দিয়ে, যে বাঁধনে প্রতিশ্রুতির ভরসা, আর ঠোঁটে ঠোঁট, যেন রাতচরা। টোটোর ঝাঁকুনিও দুটো ঠোঁট আলাদা করতে পারেনি। এমনকি সেই দিনটা – যেদিন দুজনে নিভৃতে একটা গোটা দিন কাটিয়েছিল, বেশ কিছু ঘন্টা, একটা ছোট সিঙ্গল বেড, দুজনের প্রানখোলা হাসি। ‘গীলা মন শায়দ বিস্তর কে পাস পড়া হ্যায়’ – ফেরার পথে সেদিনের সন্ধ্যাকাশে চাঁদ আর শুকতারার সেই অপূর্ব মেলবন্ধন, যেন রিতুর কপালের টিপ, সে দিনটাকে আরো বিশেষ করে দিয়েছিল।

‘এক আকেলী ছত্রী মে যব আধে আধে ভিগ রহে থে’ – সেইসব দিনগুলো কি তবে সত্যি ছিল না? তবে কেন মুহূর্তগুলো এত ভীষণভাবে নাড়া দিচ্ছে আজ? কেন সে চাইছে কাগজ কলমের মধ্যে দিয়ে সেই মুহূর্তগুলো অনুভব করতে? কেন সে মনে মনে বলছে, ওগো, আমার ক্ষমা করে দিও, আমার না পারা  অক্ষমতা গুলোর জন্য? সেই মুহূর্তগুলো তোমার থেকে ফেরত চাইব কী করে? দুজনেই ভিজেছি। ‘মেরা য়ো সামান লৌটা দো’... কী করে বলব?

কাল সন্ধেয় রিতু ওকে অনেক কথা শুনিয়েছে। তারপর থেকে লোকটার মোবাইল বারোঘন্টা হয়ে গেল সুইচ অফ। রিতু শুধু মনে মনে প্রার্থনা করে সেইসব জ্বলজ্বলে শুকতারার মত মুহূর্তগুলো যেন আজীবন জীবন্ত থাকে দুজনের মনে। ‘এক ইজাজত দে দো বস্‌ যব ইস কো...’ রিতু চোখ মোছে। না, সেইসব মুহূর্তগুলো দফন্‌ করতে সে পারবে না। কোনদিন না।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন