কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২৮

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / প্রথম সংখ্যা / ১২৮

শুক্রবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২২


চাঁদমারি

আজন্মলালিত বিশ্বাস এভাবে ভেঙে দেয় কেউ! একবার ভেবে দেখল না, এই খবর শুনে অরুণিমার মনের অবস্থা কী হতে পারে! ভাবা উচিত ছিল! আর শুধু অরুণিমাই তো নয়, তাঁর মতো কত কত যে ভক্তিমতি মহিলা আছেন,  তাঁদের  কথাও  ভাবতে হতো! অরুণিমার দুইমেয়ে ও একছেলে। সবাই বিবাহিত। অরুণিমার মতো তারা দেব-দেবীতে কতটা বিশ্বাসী, তা তাঁর জানা নেই, তবে তিনি বিশ্বাসী, একটু বাড়াবাড়ি রকমের বিশ্বাসী। সব দেব-দেবীকেই তিনি মানেন, পুজো করেন। এমনকি প্রকৃতিজাত সবকিছুকেই দেবত্বের আসনে বসিয়ে ভক্তি নিবেদন  করেন। অগ্নিদেব, পবনদেব, বরুণদেব, সূর্যদেব, চন্দ্রদেব – কেউই বাদ যায় না। এজন্য অরুণিমার কোনো দোষ নেই, তিনি তো মানবজাতির সেই সনাতন ঐতিহ্যকে  লালন ও পোষণ করে চলেছেন! সবই দেবতা স্বরূপ। বাড়িতে কোনো উপলক্ষ্যে পুজো হলে হোমযজ্ঞ হয়, অগ্নিদেবতাকে আহুতি দেওয়া হয়। প্রতিদিন সকালে উঠে সূর্যপ্রণাম এবং বছরে একবার ছটপুজো উপলক্ষ্যে সূর্যদেবের পুজো করা হয়। আর সারাটা বছর ধরে যে কত কত ঠাকুর-দেবতার পুজো হয়, অরুণিমার দিনগুলো ঠাকুরঘরেই অতিবাহিত হয়। মনটা শান্তিতে ও তৃপ্তিতে ভরে থাকে। আহা! ঠাকুর-দেবতারা আছেন বলেই না আমরা বেঁচে আছি! ভালো আছি! 

কিন্তু গতকাল সন্ধ্যায় যখন তাঁর নাতি মানে তমালের পুচকে ছেলে এসে খবর দিল, জানো ঠামা, ভারতের গাড়ি চাঁদে   নেমেছে, তখন তিনি বেশ কিছুটা ধাক্কা খেলেন। কিছুদিন থেকেই এর-ওর মুখে শুনছেন, এমনই কিছু একটা ঘটতে চলেছে, কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেননি, ধ্যুত, তাই আবার কখনও হয় নাকি! চন্দ্রদেব তা কখনই হতে দেবেন না! কোনো গাড়ি তাঁর শরীরে অবতরণ করা মানে তো তাঁর দেবত্বে টান পড়া! কেউ আর দেবতা বলে মানবে না যে তাঁকে!

অরুণিমা খুব অসহায় বোধ করলেন। একটা ভয় ও আশঙ্কা তাঁকে ঘিরে ধরল। এরপর কী হবে? পৃথিবীটা টিকে থাকবে তো?

মায়ের এমন অস্বস্তিকর অবস্থায় কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে তমাল ডেকে পাঠালো তার দুইবোনকে। রাত বেশি হলেও তারা এসে বোঝাতে চেষ্টা করল মাকে, তুমি এত দুশ্চিন্তা করছ কেন, যা ঘটছে, তা তাঁর অনুমতি নিয়েই হচ্ছে।

মা অবাক হলেন।

-মানে? কার অনুমতি নিয়ে কী করা হচ্ছে?

বড়মেয়ে শিপ্রা বলল, কেন, চাঁদে গাড়ি পাঠানোর আগে তো চাঁদের পুজো করা করেছে। সব দেব-দেবীরই পুজো করা হয়েছে, যাতে গাড়িটা ঠিকঠাক নামতে পারে।

-সেকী! তিনি অনুমতি দিয়েছেন?

-দিয়েছেন তো, তবেই না নামতে পেরেছে! আর দেখো মা, চাঁদে যদি কোনোদিন মানুষ বাস করে, সেই মানুষরাও  চাঁদে বসেই চাঁদের পুজো করবে।

শিপ্রার কথায় অরুণিমা কিছুটা যেন ভরসা পেলেন।

বললেন, তাহলে কি একদিন চন্দ্রদেবের মতো সূর্যদেবের বুকেও ভারতের গাড়ি নামবে?

ছোটমেয়ে তিস্তা সামাল দিতে বলল, হ্যাঁ, সে তো নামতেই পারে! তবে সূর্যদেবকে আগে রাজী হতে হবে, রাজী হলে তবেই নামবে!

অরুণিমা ব্যস্ত হয়ে উঠলেন।

-কবে রাজী হবে রে তমাল?

তমাল বলল, দেরি আছে মা, যেদিন সূর্যের সব আগুন নিভে যাবে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন