কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

অচিন্ত্য দাস

 


কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০০


ঘর

 

কোর্ট থেকে ফিরতে সাড়ে-ছটা তারপর সাতটা থেকে মাঝরাত্তির অবধি বাড়িতে মক্কেলদের ভীড় লেগে থাকে। আগে আমার এত পসার ছিল না, বছর পাঁচেক হল রোজগার বেশ বেড়েছে। আজকাল শুধু বিবাহ-বিচ্ছেদ মামলাগুলো নিচ্ছি আর এ ব্যাপারটা তো এখন ঘরে ঘরে। কিছু  মামলায় সারবস্তু তেমন থাকে না কিন্তু কোনো এক পক্ষ অন্য কিছু স্বার্থে আলাদা হতে চায়। এ ধরনের মামলায় আমি সিদ্ধহস্ত হয়ে পড়েছি – গল্প বানিয়ে, উল্টোপাল্টা সাক্ষীসাবুদ আনিয়ে আমি বিচ্ছেদের রায় বার করে দিই। পসার যে বেড়েছে তা এমনি এমনি নয়!

ষাট পেরিয়েছে। কাজের চাপ দেখে ডাক্তার বলেছে রোজ সকালে একঘণ্টা হাঁটতে। নয়ত সুগার, প্রেসার হাতের বাইরে চলে যাবে। তাই করি। তা ভোরবেলা পার্কে বেড়াতে ভালই লাগে। খানিকক্ষণ জোরকদমে হেঁটে বেঞ্চিতে বসে জিরিয়ে নিই। কতলোক যে আসে! কেউ হাঁটে, কেউ প্রাণায়াম কিংবা যোগ-ব্যায়াম নিয়ে থাকে।

সেদিন দেখি একটা ছোটমেয়ে, বছর পাঁচ-ছয় হবে, দাদুর হাত ধরে এসেছে। সঙ্গে খাতা আর পেনসিল। দাদুর সঙ্গে এদিকে ওদিকে যাচ্ছে কিছু একটা দেখতে। কখনো মাথা উঁচু করে গাছে, কখনো উবু হয়ে মাটিতে বসে। তারপরই ছুটে এসে বেঞ্চিতে রাখা খাতায় কীসব আঁকছে আর লিখছে। বেশ মজা লাগছিল দেখে। জিগেস করলাম “কী করছ তুমি?”

ছোট হলেও মেয়েটি বেশ কথা বলে। বলল “ঘর খুঁজছি”

অ্যাঁ! ঘর খুঁজছো?”

হ্যাঁ। টীচার বলেছে”।

টীচার বলেছে? কী বলেছে?”

বলেছে যে পাখি, ইঁদুর, পোকা এরা কোথায় থাকে খুঁজবে। এদের ঘর দেখতে পেলে ছবি আঁকবে আর লিখে রাখব”।

বাঃ। তা তোমার কটা হলো?”

অনেকগুলো। এই দ্যাখো – পাখির বাসা, ইঁদুরের গর্ত, মৌমাছির ঘর...”

এমন সময় দাদু ডাকল, “এই, আর একটা দেখে যা!”

মেয়েটি ছুটে গেল। একটা গাছের গুঁড়ির কাছে উই-এর ঢিপি। দেখে এসে ছবি এঁকে ফেলল – পাহাড়ের মত একটা কিছু, তাতে ফুটোফুটো। লিখতে গিয়ে দাদুকে বলল – “কী পোকার ঘর যেন বললে?”

উইপোকা, লেখ হ্রস্বউ হ্রস্বই। তারপর ঢিপি”।

মেয়েটি দেখলাম উই ঠিক লিখল কিন্তু ঢিপি লিখতে গিয়ে লিখল ইংরেজি হরফের ডি তে হ্রস্বই, পি তে হ্রস্বই! বেচারার ইংরেজি বাংলা গুলিয়ে গেলেও ঘর ব্যাপারটা বুঝেছে ঠিক। কোনোরকমে লিখেছে তো! বললাম, “তাহলে তো আরও একটা হয়ে গেলো, টীচার তোমাকে খুব ভালো বলবে”।

হ্যাঁ, বলবে ভেরি গুড। টিচার আরও কী বলেছে জানো?”

কী বলেছে?”

টীচার বলেছে – কারুর ঘর কখনো ভাঙ্গবে না, ওরা কত কষ্ট করে ঘর বানায়…”

 

******** 

দশটা বাজল। ড্রাইভার ভূষণ গাড়ি বার করেছে। ব্যাগ, ফাইলপত্তর সব গাড়িতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু সকালে পার্ক থেকে এসে পর্যন্ত মনটা কেমন যেন ভালো নেই। কোর্টে যেতে ইচ্ছেই করছে না। অনেক তো পয়সা করেছি… এ ধরনের কাজ ছেড়ে দিলে কী আর এমন ক্ষতি হবে...

 

 

 

 

 

 

 

 

 


2 কমেন্টস্:

  1. খুব ভালো লাগল! বেশ ঝরঝরে এবং শেষ হবার পরও রেশ থেকে যায়। ছোটগল্প তো এমনই হওয়া উচিত।

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো লাগলো। বেশ গভীর কথা অল্প কয়েক শব্দে 🙏

    উত্তরমুছুন