কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

সুবল দত্ত

 


কালিমাটির ঝুরোগল্প ১০০


চিত্র প্রদর্শনী    

                                  

এগজিবিশন হলে মিশ্র পারফিউমের সুবাস। বিশাল এরিয়া জুড়ে প্রায় দুশোর ওপর চিত্রকলা প্রদর্শন। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত এলিট ক্লাসের হলটিতে অনেক সিকিউরিটি লোডেড বন্দুক নিয়ে আমার চারপাশে। সন্দেহী শিকারী কুকুরের মত আমার দিকে আসছে যাচ্ছে। আমি এক কোণায় জড়োসড় দাঁড়িয়ে। আমারই  মাথার ওপর আমার প্রিয় হংসধ্বনি রাগে বাঁশির ধুনে আলাপ চলছে হাই ভল্যুমে।

ভোরেই এগজিবিশনের কর্মকর্তা ফোন করে আমাকে জাগিয়েছে। যাকে বলে ফোনে লাথ মারা। ‘এই যে পিকাসোর নাজায়জ অউলাদ মশায়। ছুঁচ হয়ে তো ঢুকে গেছেন ওয়ার্ল্ড কনটেম্পোরারি গ্রেট আর্টিস্ট কমিউনিটিতে। যাক এখন ফাল হয়েছেন, কথাটা জানাতে কৃতার্থ হই। আপনার ছবি এগজিবিশনে শো হবার জন্যে বিচারকেরা মনোনীত করেছেন। এত ভালো ভালো আর্টিস্ট থাকতে একটা ফুটপাথিয়া পেণ্টারের ছবি ওরা কী দেখে যে সিলেক্ট করল কে জানে?  সারা পৃথিবীর বাঘা বাঘা আর্টিস্টদের সবারই কি চোখে ছানি পড়ল? আমরা তো ওগুলো ফেলেই দিতে যাচ্ছিলাম। যাহোক এক্ষুনি আধঘন্টার ভেতর চলে আসুন এখানে। আপনাকে যে রিসিভিং কার্ড দিয়েছি সেটা সঙ্গে আনবেন, নইলে ঢুকতে দেওয়া হবে না’।

তিনটে ছবিই ওরা টাঙ্গিয়েছে। খুব দামী ওক উডের ফ্রেম দিয়ে বাঁধানো। এমন একটা কর্নারে প্লেস করেছে যাতে দর্শকদের সহজেই চোখে পড়ে। ওরা এত দামী করে বাঁধিয়েছে? আমার ছবি? আমার ভাবনা? ওরা নিয়ে নেবে আর আমি কিচ্ছুটি কইতে পারবো না?

প্রদর্শনী শুরু হবার একঘণ্টা আগেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। শাঁখ বাজানো প্রদীপ  প্রজ্জ্বলন ফুলের পাপড়ি ওড়ানো তারপর বিচারকগণ ঘুরে ঘুরে ছবিগুলো দেখে নাম্বারিং করে প্রথম দ্বিতীয় ইত্যাদির ঘোষণা। তারপর মিডিয়ার সাথে প্রশ্ন উত্তর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমার ছবি আড়াল করে ভিড়।

বিচারকেরা এসে আমার সাথে হ্যাণ্ডসেক করতে এগিয়ে এলো। ফুলের মালা ফুলের তোড়া আর আমার আদ্দেক শরীর ঢাকা প্রকাণ্ড একটা পাঁচলাখ টাকার চেক। আমি যে সবুজ প্রেমী! কর্মকর্তা বিচারক মিডিয়া দেশী বিদেশী চিত্রকর  প্রচুর দর্শক আমাকে ঘিরে রয়েছে।

মিডিয়ার প্রশ্ন: আপনার ছবি যে এতো ভয়ানক, দেখে গা শিউরে ওঠে। লাল পটভূমিতে একটি দাঁত বার করা দৈত্য শকুনি থাবার নখ দিয়ে একটা বাচ্চার  কাটাহাত নিয়ে উড়ছে। মাটিতে পড়ে আছে মানুষের শব। বিচারকদের মতে আপনি ভবিষ্যতে মানুষের পরিণতি ইঙ্গিত করেছেন। এ সম্বন্ধে আপনি কী বলেন?

আমি খুব ঘামছি। আমার ছবিতে তো লাল রঙের ছিটেফোঁটাও নেই! আমি তো ভয়ংকর কিছু আঁকিনি! আমি এঁকেছি শান্তির ছবি। স্বর্গীয়। মনোরম। নীলাকাশ।  সবুজের ওপরে কিছু কৃষক ও শ্রমিক বিশ্রাম করছে। একটা শ্বেত পায়রা তার ডানা মেলে ওদের মুখে ছায়া ফেলছে। তার পায়ে কিছু খড়কুটো বাসা বাঁধার জন্যে। এই তো থিম! এই তো!

ওই তো আমি এখনো দেখতে পাচ্ছি আমার ছবিগুলোকে। টাঙানো রয়েছে। তাহলে?

ওরা কী দেশ সমাজ সংস্কৃতি সব সব খুন করতে চায়? হয়তো তাই এমনটা দেখছে! ওই রক্তমাখা পাঁচলাখ টাকার পুরস্কার নিয়ে আমি কী করবো?             

 


1 কমেন্টস্:

  1. স্বাগতম আর্টিস্ট-লেখককে! স্বাগতম গল্পকারের উপলব্ধি এবং আত্ম-মন্থনকারী জিজ্ঞাসা - 'ওই রক্তমাখা পাঁচলাখ টাকার পুরস্কার নিয়ে আমি কী করবো?'

    উত্তরমুছুন