কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

পায়েল দেব

 


কবিতার কালিমাটি ১১০


জিও জি ভরকে


তখনও ভোরের আলো ফোটেনি। ঘুম ভাঙল। দরজা খুলে বাইরে এলাম, সামনে শুয়ে উঠোন। চারদিক নীলাভ ধূসর। একদিন এমনই দরজা খুলে বেরিয়ে এসেছিলাম পৃথিবীতে। মায়ের হুঁশ নেই। নার্স উপুড় হয়ে আমাকে দেখছিল। তখন কী ভেবেছিলাম কে জানে! এভাবে প্রতিদিন আমাদের জন্ম, ঘুম থেকে ওঠা, দরজা খোলা। প্রতিদিন একটি পূর্বজন্ম ছেড়ে একটি পরজন্মের বীজ বোনা হয়। কিছু কিছু পূর্বজন্ম দিব্যি মনে থাকে, বাকী ভুলে যাই। সিনেমার মত বদলায়   চাপে ভেতরে ভেতরে। সেগুলোকে আগামীর দিকে ছুঁড়ে দিই। এভাবে অনেক পরজন্মের পর মৃত্যু, সকল পূর্বজন্ম ভুলে যাওয়ার ফলস্বরূপ। আর সব ভুলে না গিয়ে মরবে মরবে করেও যদি কেউ বেঁচে যায়, 'মিরাকল মিরাকল' বলে লাফিয়ে ওঠা। মস্তিষ্কের স্মৃতি বাঁচাতে পারে না, বাঁচায় হৃদয়ের স্মৃতি। তাই হার্ট ব্লকেজ হলে অনেকে বেঁচে ফেরে, কিন্তু হেড ব্লকেজ হলে স্মৃতিগুলোতে জং ধরে,  ধীরে ধীরে ছড়ায়, পঙ্গু করে, বিগড়ে ফেলে মানুষকে।

তখনও উঠোনে দাঁড়িয়ে। ততক্ষণে আলো ফুটেছে - কমলা-লাল রঙের। জম্পুইয়ের কথা মনে পড়ল - ডালে ডালে মরশুমি কমলা ঝুলছে। পাশেই ইডেন লজ। হঠাৎ কানে বাজলো 'দাদা দাদা'! গাঙ্গুলী ওয়ার্ম আপ করছেন। হকচকিয়ে  অনায়াসে  ঢুকে গেলাম ইডেন গার্ডেনে।  গায়ে লাল বৃত্তের ভেতর লেখা আছে Jio- ডিজিটাল লাইফ। পায়ের নীচে সবুজ ঘাস। সামনে সূর্যটা স্পিন করছে। বেঁচে  ফিরেছি পুনর্জন্মে, এখনও সব ভুলে যাইনি। হিপ হিপ হুররে-এএএএএ!

 

সমাধান

 

ধরি

আমি একটা রাস্তা

ঘুরতে যাব কোনও পার্কে

সাথে যাবে প্রিয়তম রাস্তা

আমরা কোনও রাস্তা বরাবর হাঁটব

যা পার্ক পর্যন্ত যেতে না পারে

নিজেকে লেলিয়ে দিয়েছে অন্য একটিতে

প্রিয়তমের গা ঘেঁষে হাঁটছি

ঘর্ষণে দুজনের কিনার এবড়ো-খেবড়ো  

পার্কের ভেতরে অনেক রাস্তায়

ছড়িয়ে ছেলেমেয়েরা

আমাদের দেখে

দু'চার জন হাঁটতে লাগল

বাড়ি অব্দি যাবে, নিয়ে গেলাম

গেটে তালা

আর ছাড়ল না, ঘর বানাল, সংসার পাতল, ছেলেপুলে হল

শক্ত করতে গায়ে পুঁতে দিল লোহার পিলার

 

আমি আর প্রিয়তমটি কখনোই ঘর ভেঙে বেরিয়ে আসতে পারলাম না।

 

ধাপ

 

যে মানুষ পথে পথে পদ্মের মতো ভেসে থাকে

আজ তার জন্মদিন

দূরে কোনও এক বৃদ্ধকাল - সাদা, শূন্যে পাতাহীন পাখিয়ারা গাছের ডাল

বর্তমান ও অতীত ডুবে যাচ্ছে পরস্পরের ভেতর

 

যে মানুষ জীবন কুড়োতে কুড়োতে কিচ্ছু পায় নি

তার আজ বিবাহবার্ষিকী

বেলিফুলের মালা

গন্ধে গন্ধে ভেসে আসছে কৈশোর, আর মেয়েদের মৌরি-ঘ্রাণ

 

যে মানুষ স্বপ্ন মেলেছে বারবার, চুরমার হয়েছে চোখের গঠন

তার আজ মৃত্যুদিন

চিতা, আরও সহজ চাইলে কবর আরও সহজে যীশু-চিহ্ন

এরা কত সহজেই আয়ু খেয়ে ফেলে

 

আঁকিবুঁকি করা আহারে জীবন!

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন