কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী

 


কবিতার কালিমাটি ১১০


পাঁচটি কবিতা

 

(১)

অনেকদিন থেকে ঘাসেরা অপেক্ষা করে থাকে বৃষ্টি হবার জন্য। কবে তারা নতুন করে বৃষ্টি মেখে সজীব হবে? দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে। কবে সেই সুদিন আসবে? আকাশে হাল্কা হাল্কা মেঘ দেখা যায়, তবু বৃষ্টি হয় না। দিনের পর দিন যায়, সূর্য লাল থেকে হলুদ হতে থাকে। শীত এলে পাখিরা সব গরম দেশের দিকে যাত্রা করে। যেতে গিয়ে হঠাতই বিশাল কালো মেঘের সাথে ধাক্কা খায় ওরা। এবং দলে দলে পাখি উপর  থেকে ঘাসের উপর এসে পড়ে। রক্তে ভিজে যায় ঘাস। বৃষ্টির প্রয়োজন হয় না। ঘাসেরা সজীব হয়ে ওঠে। পৃথিবী বসুন্ধরা হয়। সেই সঙ্গে গাছের শেকড়ের শক্তি বাড়ে।

 

(২)

তারা রোজ খুব সকালে আসে। গ্রামের বাড়িগুলোর কাছে গিয়ে প্রত্যেক বাড়ির সবছেয়ে ছোট মানুষটিকে ডাক দেয়। প্রত্যেক বাড়ি থেকে একথালা করে সবাই ভাত নিয়ে যায়। তারপর হেঁটে গ্রাম পেরিয়ে দূরের বনে চলে যায়। বাড়ির বড়রা ঘুম থেকে উঠে তাদের দেখতে পায় না। কেউ কেউ বলে তারা গাছদের খেতে দেয়, আবার কেউ  কেউ বলে যে তারা নিজেরাই খায়। দীর্ঘ ছায়ার মত তারা অপেক্ষা করতে থাকে বনে। দূর থেকে দেখতে থাকে মানুষের বসতি। সেনাদের তৈরি থাকতে বলে, পুরনো জমি ফিরে পেতে হবে। যুদ্ধের জন্য অপেক্ষা করে। ছোটদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা ভাতের বিনিময়ে।

 

(৩)

সে ঘুমলে স্বপ্নরা দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়, ওষুধ খেতে চায় তার কাছে। বলে তারা ক্লান্ত, আহত রক্তাক্ত। তাদের জন্য কিছু একটা ব্যবস্থা করতে বলে। সে বলে, “তোমরা তো স্বপ্ন নও। দুঃস্বপ্ন। কেন ভিড় করছ?“ ওরা বলে, “ভালো করে চেয়ে দেখ।  দুঃস্বপ্নদের আমরা সব তাড়িয়ে দিয়েছি। ওদের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমরা সব আহত আর ক্লান্ত।  

অবাক হয়ে ওষুধ নিয়ে সে তাকিয়ে থাকে, দুঃস্বপ্ন আর স্বপ্নর ভেদ করতে পারে না।

 

(৪)

তার কাছে রোজ একটি শব্দ আসত ট্রেন জার্নি করে। কখন বা দূরপাল্লার বাসে। তাদের সঙ্গে সে গল্প করত। ক্রমে তারা বাড়তে লাগল। বাড়িতে রাখার জায়গা পেল না সে। গুদামঘরে তাদের থাকতে দিল। সেখানে গিয়ে তাদের সাথে গল্প করত। কিন্তু এর মধ্যে সেই অপূর্ব সুন্দর লাল রঙের পেলব শব্দ এল। তাকে সে গুদামঘরে রাখার সাহস পেল না, তাকে সে বাড়িতে রাখল। কিন্তু সে আসার ফলে অন্য শব্দরা আসা বন্ধ করে দিল। বাকি শব্দরা গুদামঘরে আর্তনাদ করতে লাগল। খুব কষ্ট হল তার। সে তাদের ছেড়ে দিল আর বলল, তোমরা সব ল্যাভেন্ডার হয়ে ফোটো এই খামারবাড়ির চারিদিকে। তারা সব আনন্দে ল্যাভেন্ডার হয়ে ফুটতে লাগল। আর আকাশে গোলাপি চাঁদ উঠল। সে আর লাল শব্দ খামারবাড়ির থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগল  ল্যাভেন্ডার ক্ষেত আর গোলাপি চাঁদ।

 

(৫)

বহুদিন এক সঙ্গে থাকার পরে ছায়ারা বিদ্রোহ করে। তারা সমবেত হয়ে অর্ধেক পৃথিবী ঢেকে ফেলে। ছায়াহীন অর্ধেক পৃথিবীতে সূর্য আর নতুন ছায়া তৈরি করতে পারে না। আর সেই মুহূর্তে ছায়াহীন পৃথিবীতে প্রথমবারের মত সাম্যবাদ স্থাপিত হয়।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন