কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কাজল সেন

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৩


লাইনেই আছি

কখনও কখনও ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি মনে এলে আমার বিপদ বাড়ে। আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, অতীতের সেই দিনগুলো, আজ আমি কেমন করে সামলাই বা কীভাবে উপভোগ করি অথবা কোন অজুহাতে পালাই!  নস্টালজিয়ার ভূত মাথা চাড়া দিলেই আমার প্রথমেই মনে পড়ে যায় দিলুর কথা। দিলু আমার জন্মের মাস ছয়েক পরে জন্মেছিল। আমরা যেহেতু পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম, তাই, বলতে লজ্জা নেই, সেই ছেলেবেলায় দুজনেই উদোম হয়ে একই দালানে হামাগুড়ি দিতাম। একটু বড় হয়ে একইসঙ্গে একই স্কুলে একই ক্লাসে পড়েছি। আরও একটু বড় হয়ে একই কলেজের একই ক্লাসে। না, ভার্সিটিতে পড়ার কারোরই তেমন এলেম ছিল না, তাই পড়িনি। কিন্তু ক্লাবের মাঠে আমরা একই দলের হয়ে ফুটবল খেলতাম, কেষ্টদার পানের দোকানে দাঁড়িয়ে একটাই সিগারেট দুজনে শেয়ার করে টানতাম, পাড়ার ক্যালভার্টে অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে বসে একইসঙ্গে চ্যাংরামি করতাম এবং মেয়ে দেখতাম। এপর্যন্ত সবই ঠিকঠাক ছিল, নিজেদের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না, ঝঞ্ঝাট ছিল না, লড়াই ছিল না। কিন্তু শেষপর্যন্ত কিচাইনটা শুরু হল পাড়ার মেয়ে দোয়েলকে কেন্দ্র করে। দোয়েল! আহা, কী মিষ্টি নাম। মুখটাও খুব মিষ্টি। পুরো শরীরটা যেন মিষ্টি দিয়েই গড়া। দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে। আমার কোনো উপায় ছিল না দোয়েলকে লাইন না মেরে। আমি লাইন মারতাম। একাই মারতাম। লাইন একা একাই মারতে হয়। কিন্তু আমি জানতাম না যে, আমার অজান্তে দিলুও দোয়েলের পেছনে লাইন মারছে। যেদিন জানতে পারলাম, আমি ব্যাপারটা হজম করতে পারলাম না। কোনো ভণিতা না করে দিলুর ওপর আচমকাই হামলে পড়লাম।

-ছিঃ ছিঃ দিলু! এটা তুই কী করলি?

দিলু হকচকিয়ে গেল।

-কেন! কী করলাম?

-তুই এভাবে আমার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলি?

দিলু আরও ঘাবড়ে গেল।

-মানে? তুই কী বলতে চাইছিস?

-শেষপর্যন্ত তুইও দোয়েলের পেছনে লাইন মারলি?

বিপর্যস্ত দিলু হঠাৎ কেমন যেন লজ্জা পেল।

-প্লিজ তুই কিছু মনে করিস না, কথাটা বলব বলব করে বলা হয়ে ওঠেনি। তবে এখন তো তুই জেনেই গেছিস। আসলে বুঝলি আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। মাইরি, যা জিনিস!

দিলুর কথায় আমি খুব দুঃখ পেলাম। মনটা বিষাদে ভরে গেল। আমি মেনে নিতে পারছিলাম না দিলুর এই বাড়াবাড়ি। আমি দোয়েলকে নিয়ে ইতিমধ্যেই কত না স্বপ্নের জাল বুনেছি। ভেবে রেখেছি আমরা দুজনে কোথায় কোথায় বেড়াতে যাব। আন্দামান, কাশ্মীর, শিলং, মানালী, উটি! তবে মধুচন্দ্রিমা অবশ্যই দেশে নয়, বিদেশে, সম্ভব হলে সুইটজারল্যান্ডে। অথচ এই নির্বোধ দিলুটা...

বললাম, দেখ দিলু! তুই আমার অনুজ, আমি তোর অগ্রজ। অথচ তুই সেই সম্মানের কোনো মর্যাদা দিচ্ছিস না! দিস ইজ নট ফেয়ার দিলু! এবং শুধু তাই নয়, তুই তোর ভাবী বৌদিকেও অপমান করছিস!

দিলু অবশ্য ততক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। আমাকে সান্ত্বনা দেবার সুরে বলল, তুই কোনো চাপ নিস না। তোর আর আমার আগে লাইনে উনিশজন আছে।

 


1 কমেন্টস্: