কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

অহনা তাঁতী

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৩


ঝড়

“আর খেতে পারছি না, মা।” অনু বলে উঠল।

“খাবার নষ্ট করতে নেই মা”, ধরা গলায় মেয়েকে বকে দিয়ে, ভাতের একটা মণ্ড  নিয়ে অনুর মুখের দিকে হাত এগিয়ে দেয় রিনু।

রিনুর বিয়ে হয়েছে এই সাত বছর হল। তখন অনুর ঠাম্মি অসুস্থ। শরীরে তাঁর ক্যানসার বীজ পুঁতেছে। তিনি তখন শয্যাশায়ী। শরীর জীর্ণ শীর্ণ হয়ে গেছে। সংসারের কোনো কাজই করতে পারেন না। তাই খাটুন্তে নতুন বউমাকে পেয়ে খুব খুশী হয়েছিলেন তিনি। মায়ের সেবা করে সংসারের হাল শক্ত হাতে ধরেছিল রিনু। কিছুদিনের মধ্যে অনুর ঠাম্মি মারা গেলেন। তারপরই অনু এল। সবাই বলল, যেন ঠাম্মিই ফিরে এসেছেন। খুব যত্নে দাদুর আদরে মানুষ হল অনু।

“আজ জালে অনেক মাছ পড়েছে রে! খা, আজ পেট ভরে খা।” আনন্দে হাসতে হাসতে বলে উঠল দাদু। বাজারের শেষ প্রান্তে তাল পাতার ছাউনি, মাটির তৈরি দাদুর মাছের দোকান। খুপরিটার সামনেই দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র। সূর্যদয়ের আগে নিজের নৌকো নিয়ে দাদু সমুদ্রে চলে যায়। নৌকোতেই থাকে জাল। মাছ ধরে মাঝ সকালে জাল থেকে গেঁড়ি ছাড়িয়ে শুকোতে দিয়ে বসে দোকানে। একশ দিনের কাজ না থাকলে সঙ্গে থাকে তার ছেলে রমেন। দুপুরের দিকে রোজকারের টাকায় চাল, ডাল, আলু কিনে, নিজের ধরা মাছ নিয়ে অপেক্ষায় থাকা খুপরিতে ফেরে।

“বউমা কাল আমি তাড়াতাড়ি যাব”।

“ঠিক আছে বাবা।”

এমনি একদিন সমুদ্রে গিয়ে দাদু আর ফিরল না। তারা সবাই আয়লা সেন্টারে। বারবার মাইকে ঘোষণা হলেও দাদু লুকিয়ে চলে গেল সমুদ্রের ধারে। “আমার কিছু হবে না। নৌকোটা একবার দেখে আসি।”

তাদের ঘরটা নেই। দাদু, নৌকো কিছুই নেই। দুবেলা খাবার জোটে না। বাবা একই রকম একটা দোকান বানিয়ে জুতো সেলাই করে। অনুর খুব দুঃখ হয়। খেতে ইচ্ছে করে না। “মা, দাদু কোথায়? দাদু আর ফিরবে না?”

মা তার কথার উত্তর দেয় না। মায়ের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। অনু ভাবে,  দাদু নিশ্চয়ই সমুদ্রের তলার দুর্গে গেছে মৎস্যকন্যাদের সাথে।

 আজকাল খুব শীত পড়ছে। পলিথিনের ছাউনি দেয়া ঘরে একটা কম্বলে তাদের আর গরম হয় না।


2 কমেন্টস্: