কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

আনা আখমাতোভার

 

প্রতিবেশী সাহিত্য

 

আনা আখমাতোভার-এর কবিতা        

     

(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)   




 

কবি পরিচিতি : জন্ম রাশিয়ায় (২৩ শে জুন, ১৮৮৯)। বিংশ শতকের কবিদের  মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন।১৯৬৫ সালে নোবেল কমিটিতে নমিনেটেড হন, কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে থাকেন। ১৯১০ সালে আনা কবি নিকোলাই গুমিলইয়োভকে বিয়ে করেন। তিনি নিজের  স্ত্রীর প্রতিভাকে গুরুত্ব দিতেন না। ১৯১২ সালে পরপর দুটি বই প্রকাশের সাথে সাথেই আনা সমালোচকদের নজরে আসেন। বহু নতুন লিখতে আসা নারীরা তাঁকে অনুকরণ করে লিখতে শুরু করেন। ১৯২১  সালে  সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধী কার্যকলাপের জন্য তাঁর স্বামী মৃত্যুদণ্ডে  দন্ডিত হন। এরপর তিনি  আরো বেশ কয়েকবার বিয়ে করেন। ১৯২৫ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত স্তালিন সরকার আনাকে দমিয়ে রাখতে চেষ্টা করে। এসময়ে তিনি নিজের কবিতা প্রকাশ করতে পারতেন না। ১৯৬৬ সালের ৫ই মার্চ তাঁর মৃত্যু হয়।

 

 

ভুলে গেছো?

 

ভুলে গেছো? আমি একটুও আশ্চর্য হইনি!

আরও একশোবার মানুষ আমাকে ভুলে গেছে।

একটা সময়ে আমি কবরে থাকবো একশো বছরও।

হ'তে পারে আমার শব এখনো

সেখানে শায়িত!

এবং আমার প্রিয় আলোকদায়িনীও

কিছু শুনছে না... দেখছে না।

আমি পচে গলে যাবো একটি বীজের মতো -- অবিন্যস্ত মাটির ভেতর… আবার উঠে দাঁড়াবো উঁচু

পাহাড়ির নীলে। অথবা

ফিনিক্স পাখির মতো কালো ভস্ম থেকে উঠে আসবো!

 

অপেক্ষায় (The answer)

 

কি আনঔপোচারিক সংলাপ

এপ্রিলের শেষ দিনগুলো আমার কাছে বয়ে আনে… তুমি জানতে আমার হৃদয় এবং চিন্তায়

পবিত্র সপ্তাহের ভয় রয়ে গেছে।

 

আমি সেই নিভৃত ঘন্টাধ্বনি শুনছি না

উজ্জ্বল নীলাভ নদীর ওপার থেকে।

কিন্তু পেতলের মতো হাসি অথবা

গলিত রূপোর মতো কান্না শুনতে পাই সাতদিন

এবং দুঃখের সাথে মুখ লুকিয়ে ফেলি,

অপেক্ষা করি দুর্ভাগ্যজনক বিচ্ছেদের

পূর্বের মতো আর একটি পদক্ষেপের

যা এখনো পর্যন্ত গভীর দুঃখজনক।

 

নাট্যমঞ্চ (I have nothing to reject)

 

কিছুই পরিবর্তন হয়নি -- খাবারঘরের জানালাগুলোয় এখনো ভারী তুষারপাত হয়

আমিও তেমনই ছিলাম -- কিন্তু একটি মানুষ

আমার কাছে এলো -- জানতে চাইলাম "তুমি কি চাও?" "তোমার সাথে নরকে যেতে চাই"

হেসে বললাম, "এটা পরিষ্কার তুমি বলতে চাইছো আমরা দুজনেই শেষ হয়ে যাবো।"

সে তার পাতলা হাতখানা ওঠালো

এবং ফুলদানিতে রাখা তাজা ফুলগুলোতে

আলতো টোকা মেরে প্রশ্ন করলো -

"বল পুরুষেরা তোমাকে কেমন করে চুম্বন করেছে, এবং তুমিই বা কীভাবে চুম্বন করেছো!"

তার স্থির চোখদুটো অপলকভাবে আমার অনামিকার  আংটি দেখছিল এবং একটি অভিব্যক্তিও সে পরিষ্কার মজাদার মুখে

দেখা যায়নি!

ওহ্  এটা তার খেলা ছিলো। সে গভীরভাবে জানত' আমার কাছে তার কিছু চাওয়ার ছিলো না... আমারও তাকে প্রত্যাখ্যান করার কিছু ছিলো না!

 

অন্তরঙ্গতার রঙ (In human closeness there)

 

মানুষের নৈকট্যের একটা গোপন প্রান্ত আছে

ভালোবাসা এবং আবেগও এর ওপরে উঠতে পারে না। ঠোঁটের সাথে ঠোঁট আবদ্ধ হয়ে থাক

নীরবে গতিময়তায় কিন্তু হৃদয় থাকে ভালোবাসা থেকে দূরে।

 

এবং বন্ধুত্বও এক শক্তিহীন বিষয়

বছরের পর বছর মহান ধারণা নিয়ে

প্রকৃত সুখে থেকেও--

কখন তোমার হৃদয় শূন্য হবে জানতে পারবে না

এবং এ পৃথিবীর বাস্তবতায় ক্লান্ত হয়ে যাবে।

 

যারা সেই সীমানায় পৌঁছাতে চেষ্টা করে

তারা পাগল!

কিন্তু যারা সেখানে পৌঁছে গেছে

আশ্চর্যচকিত হয়ে মনোকষ্ট পেয়েছে

এবং উপলব্ধি করেছে  কেন তার হাতের তলায় আমার হৃদস্পন্দনের অনুভুতি হয় না!

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন