কবিতার কালিমাটি ১০৯ |
নরকের গান
জল সরে সরে যায়
হৃদয় সেও ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ে
এই মুহূর্তে তীব্র আকাঙ্ক্ষা
পর মুহূর্তেই নিস্তরঙ্গ জলাশয়
জল কেটে কেটে পানা সরিয়ে
স্বচ্ছ মুখচ্ছবি
আয়নায় শত শত সাদা কফিন
গোলাপে ঢাকা মৃত্যুর শীতলতা
মারি হয়ে এসেছিলে তুমি
বুকে ছুরি বসিয়ে কেটে নিলে
আস্ত একটা হৃদপিন্ড
তারপর থেকে জল ঝরছে
লাল জলে ভেসে গেলো বিছানা
এইসব গোপন কথা
কোনোদিন কেউ জানতে পারে না
স্নিগ্ধ হাসির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে
নরকের গান
বারান্দার কোণে ঘুমিয়ে আছে
রিলকের একেকটা স্তবক
সেই কালঘুম আর ভাঙেনি তার
কতদিন সে সূর্য দেখে না
রক্তে কমে এসেছে লোহিত কণিকা
তবু যখন তোমার হাত স্পর্শ করে
সেও হয়ে পড়ে একজন মায়াবাসী
খাড়ি কেটে সমুদ্রের জল সব ভর করে চোখে
একেকটা অস্তগামী পুকুর ভরে ওঠে
কুসুমিত আলোয়
হে পাষণ্ড হৃদয়হরণকারী
কী নামে ডাকবে আজ তাকে
সে তো এপিটাফে লেখা হয়ে আছে
নির্জন প্রান্তরে
জীবন কড়া নাড়ছে দরজার ঐপারে
ফিঙে এক ঝুলছে বৈদ্যুতিক তারে
সবকিছু পরিপাটি, টেবিলে সাজানো ওমলেট টোস্ট
জেলি মাখা বসনিয়ান ব্রেড
সংবাদপত্র দরজার ফাঁকে
দূর থেকে ভেসে আসছে মাইকের ধ্বনি
এ হেন প্রত্যুষে সব কিছু যখন প্রস্তুত
তোমার ভেতরে এক নিস্পৃহতা গ্রাস করলো
মচমচে পুরোটাকে কাগজের মতো মনে হয়
মুখে দিতে বিস্বাদ
জিহ্বায় আর কোনো স্বাদ নাই
প্রেম এখনও টগবগ করে ফুটছে লিকার
মুখে দিতেই লবণাক্ত স্বাদ
আলো কি আজ অনেকটা দূরে?
কোথা থেকে শুরু আর কোথায় শেষ
ভেবে কিছু পাও না তো অবেলায়
কবরস্থানের শান্ত শীতলতা মগজের নিউরনে নিউরনে
ছেনি কাঁচি দিয়ে কেউ কেটে নিয়েছে তোমাকেই
আজ মাঘের শেষে দরজায় এসে কড়া নাড়ে কে?
জীবন কি দরজার ঐপারে?
এই পারে তুমি জমে গেছো
চুমুকে চুমুকে নিজেকেই খেয়ে নিচ্ছ সারাবেলা
জীবন আজ কড়া নাড়ছে দরজার ঐপারে
অচেনা
বহুদিন পথচলা
একই কাপে আমেরিকানো কফি
হাতের মধ্যে হাত
ঠোঁটের ভেতর ঠোঁট
কণ্ঠ শুনলে কেঁপে কেঁপে ওঠা
বহু শীৎকার ইথারে ভাসমান
তবু কেমন অচেনা সব
গোধূলিলগ্নে আনমনা
একজনের কথা অন্যজন জানতে পারে না
শুধু যতটুকু বলা যায় ততটুকু
যতটুকু শোনা যায় যায় ততটুকু
বাকিটা বাল্মীকির কাব্য
তলোয়ার আর কিরিচের ঝনঝন
বহুদিন হৃদয়ের উত্তাপ শুনেও
অচেনা নাবিক দূর সমুদ্রে
আমেরিকানো কফি অপেক্ষায় ধূসর
লোনাজল
মনোটোনাস বিকালে তুমি এলে
জেগে উঠলো গোলাপি ঠোঁটজোড়া
ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই
ভূ-মধ্য সাগরে ঝড়
কান দিয়ে গরম বাষ্প
ঘূর্ণির পূর্বাভাষ,
মৌমাছির সূক্ষ্ম হুলের মতো বিদ্ধ করলে গোধূলিবেলা,
পা দুটো তপ্ত
চোখ জ্বলছে ভাটার মতো
এই কি তোমার আগমন?
বহু যুগ পরে শ্রাবণের বারিধারায় –
জ্বরে তপ্ত, কম্পমান শরীর
ঘিরে আছো পদ্মের কোমলতায়
একটু একটু করে পাপড়ির পতন
জল জমছে বালুকাবেলায়
আমরাও ভিজে গেলাম লোনজলে
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন