কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

হেলাল সালাহউদ্দীন

 

কবিতার কালিমাটি ১০৭


নদী

 

একটা নদীর কাছে বসে থাকি

তরঙ্গময় ঢেউয়ের কাছে তার

ফুলে উঠতে উঠতে কোমর ছাপিয়ে

নাভি ছাপিয়ে ওঠে মাতাল জল

স্নিগ্ধ বাহু মেলে ব্যাকুল চোখে তাকায়

শরীরের ভেতর দিয়ে সাঁতার কেটে কেটে

মনের সুষুম্নায় গিয়ে থমকে যাই

 

কাঁচুলির ঘাট লোপাট হয়ে যায়

নাভি থেকে কোমর থেকে নামে জল

তন্বী দেহের খাঁজে খাঁজে চিকচিক করে বালি

মোহনায় উদাস বসে থাকি

মৃদুস্বরে গহনে সুর ভেসে যায়


বারবার বিচিত্রভাবে ফিরে আসি

তৃষ্ণায়

ক্লান্তিতে

কাতরতায়

আশ্চর্য হয়ে দেখি

আমাকে ধারণ করে

বাঁচায়

নাচায়

আমি ঋণী হতে থাকি

সে কোনো ঋণ মানে না

সেখান থেকে আরও নদী ও নিসর্গের জন্ম হয়।

 

মুখোমুখি

 

আমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখি,

আশ্চর্য, আমি কোথাও নেই!

হাতদুটো গভীরভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি- নেই।

চোখকান পঞ্চেন্দ্রিয়ের কাছে যাই, সব অবলুপ্ত অচল!

অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অন্দরমহলে বৃথা যাই আর আসি,

পিতা পিতামহ, মাতা মাতামহদের গভীর থেকে গভীরে গিয়ে নিষ্ফল হই।

ইতিহাস পুরাণের পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে সৃষ্টির অনাদি বাসরে হারাই!

চিন্তার ছাঁকনিতে ছেঁকে তুলি সংস্কার ও শাস্ত্রের নির্যাস,

মনের আয়নায়ও খুঁজে খুঁজে দেখি- নেই।

বোধের বন্দর অতিক্রম করে যাই, নিষিদ্ধ প্রেম নগরীতে!

শিল্পকলা, কবিতা এবং আত্মায় খচিত সত্য ও সুন্দরে;

কল্পনার সুষমা নদী মন্থন করে অজস্রর।

সহসা শ্রাবণের নৃত্যমাতাল বর্ষায়- মুখোমুখি হই আমার! অনন্ত দিগন্তজুড়ে তখন অবিরাম বর্ষার।

 

ময়ূরাক্ষী

 

নভকুঞ্জের ছায়ায় গিয়ে বসি চলো,

হরিৎ রাতের নাভিতে লুটোয় ত্রয়োদশী চাঁদ,

বুনো জ্যোৎস্নার চঞ্চলতা মেখে- প্রান্তরের গাছগুলো অ্যালকোহলিক নিস্তব্ধতায় টানছে আমাদের!

এসো ধীর পায়ে, এই মাটির শরীরে লেগে আছে ঘ্রাণ, প্রেমের অন্তর্লীন ধ্যানে বুনেছে শ্যামল ঢেউ; স্নিগ্ধ আবেশে ফুটেছে শিউলি, রক্তিম শাপলায় নিশ্চুপ দিঘি- ওখানে হাঁটি পাশাপাশি।

অসীম বিস্ময়ের আদিতে কোথাও নেই কেউ; শুধু তোমার টিপ জ্বলে কালের প্রদীপ!

নেশা নেশা নিশির অতুল রূপে : ও কী আশ্চর্য চোখ- জন্মান্তরের ঘোরে ঘুরছে ত্রিলোক।

তুমি কোন অলোকের মুগ্ধ চকোরী?

অচিন অরণ্যের উদাসী, গভীর কোমলতায় আল্পনা এঁকে, বিরল মুদ্রায় মুঠোতে তুলে মায়া- মাখছো তুলতুলে গালে।

গন্ধম গাছের নিচে, নীল নদীর জলে, চির স্বর্গচ্যুত কবির প্রার্থনায়- মগ্ন হও ময়ূরাক্ষী, ঢেউ ভেঙে মুছে যাক অনন্তকালের চিহ্ন।

 

 

বাক ও কবি

 

অবাক চিত্রের ভেতর আরাধনা করি বাকের,

ঘুমঘুম মাতাল নিশুতি পটে নির্জন চরাচরে,

যেন আলোআঁধারির পানশালায় ডুবে যাচ্ছি মদির দহনে!

নির্বাক শিল্প থেকে বিচ্ছিন্ন স্বাধীন রাজ্যেশ্বর, বাগেশ্রীর মন্দিরে হয়েছে পুরোহিত।

খইয়ের মতো ফুটছে নাম, রসের কড়াইয়ে টগবগিয়ে উঠছে সর্বনাম।

অক্ষর গেঁথে শব্দ বুনে বুনে, বাক্যের নকশিতে সবাক মনিহার।

বাকই অস্তিত্বে আনে নশ্বরতার স্বাদ।

ব্যথিত করে, সুখ-আনন্দে প্রফুল্ল শতদলের মতো ফোটে- ফটিক জলে।

সমস্ত শিল্পকে আশ্রয় করে অটল অবিচল, স্তন পানরত শিশুর মতো নির্বাক ওঙ্কার।

কবিতা শিল্পের গহন সংবেদকে প্রকাশিত করে, অপ্রকাশ্য গোপন চাবি খুলে দেয়; যা হয়তো জানতো না

স্বয়ম্ভূ! কবি ভাঙায় শিল্পীর ধ্যান?

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন