কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

দেবযানী বসু

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯১


চিল ডাকছে

আজকাল বিশ্বজিৎ ভয়ংকর ভয়ংকর সব স্বপ্ন দেখছে মনোরিমাকে নিয়ে। এই মনোরিমা সমুদ্রে ডুবে যাচ্ছে অথবা সিঁড়ি দিয়ে পা পিছলে পড়ে গেল অথবা একটা ঈগল এসে ওকে ঠোকরাচ্ছে। মনোরিমা স্বর্ণবণিক পরিবারের মেয়ে।  পরিবারে গয়নাপ্রীতি সর্বজনবিদিত। মনোরিমার হীরেসোনার প্রতি লোভ নেই,  কিন্তু কৃত্রিম গয়নার প্রতি ঝোঁক আছে। মনোরিমাকে বাইকে চড়িয়ে মাঝে মাঝেই ধানক্ষেত দেখাতে নিয়ে যায় বিশ্বজিৎ। ধাড়সাতলার মোড়ে বড় পাঁচতলা বাড়িটা ওদের।

আসলে শ্বশুরমশাই ব্যক্তিটি ঠিক সুবিধার নয়। মনিলাল বসাক নিজের ঘরানার মধ্যে বিয়ে পছন্দ করেন। তার উপর বিশ্বজিৎ-এর স্থায়ী কোন রোজগার নেই।  বাড়ি বাড়ি গিয়ে টিউশনি ছাড়াও কয়েকটি কোচিং সেন্টারের সঙ্গে সে যুক্ত। তার উপর করোনাযুগ এসে পড়ল ঘাড়ের উপর। করোনাযুগের আগেই বিয়ে হয়ে যাবার কথা।

বিশ্বজিতের পরিবার থেকে অনুরোধ আবেদন চলছিল বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে নিতে। কিন্তু মনোরিমার বাবা বেঁকে বসলেন – নাআআ, করোনা কেটে যাক, লকডাউন কেটে যাক, ট্রেন চালু হোক - তারপর বিরাট করে বিয়ে দেওয়া যাবে।

কারণ, একটাই মাত্র মেয়ে, তার বিয়েতে ধুমধাম না করলে কি চলে?

বিশ্বজিৎ গোটা একবছর প্রায় হতে চলল তীর্থের কাকের মতো বসে আছে। মনোরিমকে ফোনে করোনার ইয়ে মারি বলে চেঁচায়। বিশ্বজিৎদের বাড়ির কাছে একটা টাওয়ারের মাথায় চিলদম্পতি বাসা বেঁধেছে। একলা সময়ে ও খেয়াল করেছে যে ভোরবেলার দিকে মেয়ে চিলটা চেঁচায় তারস্বরে যখনই পুরুষ চিলটি ওর ওপর চড়ে বসে। অথচ ওভাবেই পুরুষ চিলটি সঙ্গম শেষে উড়ে যায়। বিশ্বজিৎ মনোরিমাকে এসব বলেছে আর ওরাও ঠিক করেছে সঙ্গমকালে চিৎকার করবে শীৎকারসহ একে অন্যের নাম ধরে। ফলত যখন চিলদম্পতি প্রেম করে তখনই বিশ্বজিৎ মেসেজ পাঠায় রিমাকে -- 'চিল ডাকছে'।

বিশ্বজিৎদের অবস্থা খারাপ নয়। বাড়ির সবাই রোজগেরে। বাবা এখনও সরকারি চাকরি করছেন। মায়ের একটা সেলাইয়ের দোকান আছে। কিন্তু ঐ অংকের টিচার বিশ্বজিৎ লকডাউনের সময়ে অনেক কাজ হারাল। এখন হাবুডুবু করছে আর্থিক অবস্থা। বিশ্বজিৎ মনোরিমাকে ফোন করে আর ভয়ংকর সব স্বপ্নের গল্প শোনায় -- দেখলাম সিঁড়িতে তুমি পা ভেঙে পড়ে গেছ আর তোমার বাবা বিয়েটা ভেঙে দাও বলে চেঁচাচ্ছিল। আমি তোমাকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটলাম। বলছিল আমার জন্য এসব হয়েছে। আমি দায়ী... হবে না... হবে না...

চিলটা সত্যিই স্বপ্ন বলতে বলতে কেঁদে ফেলে।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন