কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২০

নাজনীন খলিল

 

কবিতার কালিমাটি ১০৭


ভুল দরোজা এবং পুরনো অসুখ

 

এটা একটা ইয়েল-লক।
কিছুতেই
  খুলবে না ভুল চাবি হলে।

আবার দাঁড়িয়েছি এসে এক ভুল দরোজায়!

ফিরে আসে হাজার বছরের পুরনো
 অসুখ।
বেডসাইড ক্যাবিনেটের উপর
জলের বোতল, ঔষধের স্ট্রিপগুলো জমে জমে
স্তুপাকার।
এখানেই একদিন ছিল তীব্রলাল ফ্লাওয়ার ভাস;
শুভ্র রজনীগন্ধার স্টিকগুলো।

চাবিটা কি ভুল?
যেন অনন্ত অনন্তকালের মোচড়;
এই চাবি --
 এই তালার ভেতরে।
কিছুতেই খুলছে না।
নাকি দাঁড়ালাম এসে ভুল কোন দরোজায়?
অন্য কোন তালা!

এভাবেই মাঝে মাঝে কড়া নাড়ি ভিন্ন দরোজার।
জলতরঙ্গের মতো সুরেলা কলিংবেল বেজে গেলে,
বিরসজিজ্ঞাসু চোখে যে এসে দাঁড়ায়
সে আমার চেনা কেউ নয়। বুঝি
আবার দাঁড়িয়েছি এসে ভুল বাড়ির,
ভুল মানুষের মুখোমুখি।

হাজার বছরের পুরনো অসুখ ফিরে আসে,
মুমূর্ষুশয্যায় শুয়ে শুয়ে দেখি জানালার বাইরে একখন্ড নীলাকাশ
বেগুনী মেঘেদের ওড়াওড়ি
দেখি-- দুই টুকরো মেঘ খুব কাছাকাছি এসে
কেন যে প্রবলবিরাগে দূরে সরে গেল;
মেঘেদেরও তবে আছে অভিমান!
তীব্র পাখসাটের ধ্বনি তুলে একটি স্কাইলার্ক
হারিয়ে গেল
  শূন্যগর্ভ আকাশের ভিড়ে  
বিশাল নীলিমায় কেবল একটি কোলাহলের শব্দরেশ লেগে আছে।

মূঠোর ভেতরে ঘাসফুল।
জোনাকির আলো।
তবু যেন সহস্রযুগের পুরনো স্বপ্নের অসুখ ফিরে
  আসে।
জ্যোৎস্নার ধারাপাতে কমলাআগুন ঝরে পড়ে;
 আবছা ঘন্টাধ্বনিতে বেজে যাচ্ছে
 সাবধানবাণী--
এমন সুনসান চাঁদনির মাঠে হাঁটলেই পা'দুটো ঝলসে যাবে।

নিজেকে দ্বিখন্ডিত করেছি কবে যেন
কত যুগ আগে!
অর্ধেক
 তার বাউলের একতারা সুরে।
বাকীটুকু কোথায় হারালো আজ আর পড়ে না মনে ;
তবু
দুই নৌকায় পা - জীবন টলোমলো
  জলসরোবর।

 জলসিঁড়ি দীঘির মাঝখানে ফোটা
 লালশালুকের ফুল,
আর নির্জন মাঠের পাশে
সেই স্ট্যাচু; অচলপাথর। আজো মনে হয় ঠিক তেমনি আছে,
তেমনি নির্বাক।
সারণিতে আজো
  বেঁচে  আছে তার প্রতিচ্ছায়া!

এবং চাঁদটাও
কেন যে সময়ের নিয়ম মানে না !
বারবার--
 আটপৌরে জীবনের ছন্দে খুব ভুল হয়ে যায়।
ওই চাঁদ - অবেলার
জানালায় এসে দাঁড়ালেই
গদ্যলেখার পাতাগুলো সব নিমেষেই কবিতা হয়ে ওঠে।

হাজার বছরের পুরনো অসুখ ফিরে ফিরে আসে।
আবার দাঁড়াই এসে কোন ভুল দরোজায়।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন