সমকালীন ছোটগল্প |
ফাগুনহারা
“সুমার্জিতা একজন গৃহবধূ। বছর দুয়েক হল ওর স্বামী
মারা গেছেন, অজানা জ্বরে। এককথায় বলতে গেলে প্রায় বিনা
চিকিৎসায়। সরকারি
হাসপাতালের চিকিৎসা তো!
সুমার্জিতার ছেলে স্পেস সায়েন্স নিয়ে বিদেশে রিসার্চ করছে। মার সাথে কথা হয় ওই ন’মাসে
ছ’মাসে। বাবা
বেঁচে থাকতে তাও যা প্রতিমাসে কথা হত, এখন তাও না। বাবার মৃত্যুর পর কাজকর্ম, সম্পত্তির ব্যাপারস্যাপার
মিটিয়ে সেই যে ফিরে গেছে, আর আসে নি। এখনও বিয়েটিয়ে করে নি। ওসবে মন নেই।
ওর মনে হয় যেন ওর যোগ্য কোন মেয়েই পৃথিবীতেই তৈরি হয় নি। যা হোক, মা-ছেলের সম্পর্কের মাঝে এখন অনেক যোজন দূরত্ব। সুমার্জিতার মনে হয়
যেন প্রায় কয়েক আলোকবর্ষ।’’
এই
পর্যন্ত বলে একটু দম নিল ভ্রমর। বন্ধু শৌনকের সাথে প্রায় একঘণ্টা ধরে চলছে ওদের নতুন
শর্ট ফিল্মের পরিকল্পনা। ভ্রমর যাদবপুর ইউনিভার্সিটিতে ফিল্ম স্টাডিজ নিয়ে এম ফিল
করছে। এই
বছরই অ্যাডমিশন নিল। ওর ভীষণ ইচ্ছে পরিচালক হওয়ার। মণিরত্নমের ধাঁচে বিশাল
বাজেটের বাংলা ছবি বানানোর স্বপ্ন ওর, আতেউরিজম্-এর সাথে কমার্শিয়াল এলিমেণ্ট
মিশিয়ে। তারই রেওয়াজ শুরু হয়ে গেছে এখন থেকে। ইউনিভার্সিটির বন্ধুদের
নিয়ে একটা ছোট গ্রুপ বানিয়ে নিয়েছে, যেখানে ও হল মেন ডিরেক্টর, আর বাকিদের মধ্যে কেউ আর্ট ডিরেক্টর, কেউ অ্যাসোসিয়েট,
কেউ অ্যাসিস্ট্যান্ট – এরকম সব। অভিনেতা-অভিনেত্রী যোগাড়
করা হয় অন্য ডিপার্টমেন্টের ছেলেমেয়েদের থেকে, নয়তো রীতিমতো রাস্তা থেকে তুলে এনে। এর মধ্যে তিনটে শর্ট
ফিল্ম আর একটা মিউজিক ভিডিও বানানো হয়ে গেছে। মিউজিক ভিডিওটা ইউটিউবে
আপলোড করা হয়েছে, প্রায় 15k ভিউ হয়ে গিয়েছে। লাইক, কমেণ্টসও পড়েছে
অনেক। আর শর্টফিল্ম তিনটে নানান ফেস্টিভ্যালে দিয়েছে, কিন্তু সেরকম
ভাবে প্রশংসা পায় নি। ওগুলো ভাবছে ইউটিউবে একটা নতুন চ্যানেল খুলে আপলোড করবে। আর
যাইহোক, প্রডিউসিং-এর খরচাটা তো উঠবে। এখন জোরকদমে উঠে পড়েছে চতুর্থ
শর্ট ফিল্ম নিয়ে। যদিও এখনও স্টোরিই তৈরি হয় নি। শুধু গল্পের পরিকল্পনাটা হয়েছে
মাত্র। সবকটা শর্ট ফিল্মের গল্পভাবনা, স্ক্রিপ্ট ̶ সব ভ্রমরের নিজের। শৌনক ওর পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট
কাম অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর। গল্প ভাবার পর ওকে শোনানো
চাই-ই চাই। আজও তাই চলছিল। ক্লাস-টাসের পর বাড়ি ফিরে অনেকক্ষণ পর্যন্ত চলল একাকী
চিন্তন। তারপর এই রাত আটটা থেকে শুরু হয়েছে ওদের কথোপকথন।
—“তারপর?
...কী রে? থামলি কেন? লেটস্ কণ্টিনিউ।” শৌনক তাড়া দেয়।
—“হুঁ।” ঠোঁটে
আলতো কামড় দিয়ে আবার বলতে শুরু করে ভ্রমর, “এরপর একটা ব্যাপার হবে। সুমার্জিতার
বেশ কিছুদিন হল জ্বর জ্বর ভাব। ভয় পাচ্ছে, স্বামীর মত অজানা জ্বর হল না তো তার?
কোথায় যাবে? কেই বা তার দেখাশোনা করবে? ছেলেকে তো ফোন করা মানে ওই কী সব অ্যাপট্যাপ
দিয়ে করতে হয়, আঙুলটানা ফোনে। ও তো এসব
কিছুই পারে না। টিভিতে রোজই দেখে, করোনা ভাইরাসে হাজার হাজার লোক মরছে। ওকে করোনায়
ধরল না তো? মনে মনে আবার আশ্বস্ত করে নিজেকে। ওটা তো বাইরে যারা বেশি ঘোরাঘুরি করে
তাদের হচ্ছে। ও তো আর বাইরে তেমন বেরোয় না, টুকটাক কাজে ছাড়া। একদিন কষ্টটা খুব
বাড়তে, পাশের বাড়ির লোকদের ফোন করে ডাকে। পাশের বাড়িতে যে ফ্যামিলিটা থাকত, ওদের
একটিই মাত্র মেয়ে। সুমার্জিতার অবস্থা শুনে সে-ই ছুটে আসে। ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ
করা, সুমার্জিতার ছেলেকে স্কাইপে কল করা, মেল করা ̶ এসব ও-ই করে। মেয়েটি সুমার্জিতার ছেলেরই বয়সী, নাম
ডুলুং। ছেলে কাছে নেই, এই মেয়েটিই যেন সুমার্জিতার সব কিছু হয়ে উঠল। এখন থেকে যেন
ওকে আঁকড়েই বাঁচার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু ভাগ্যে তার বেশি দিন আয়ু নেই। তাই প্রায়
একমাসের মাথায় মারা যায়; বুঝতেও পারে নি সেভাবে। তাই বলা হয়নি কোন শেষ ইচ্ছের কথা।
সেটা অসম্পূর্ণই হয়তো রয়ে গেল। ছেলের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই তার – নেই অভিমানও।
শুধু একটা কষ্ট – ছেলেকে আর দেখা হল না। মৃত্যুর দিন সকালে শুধু ডুলুংকে দেখেছিল –
ওর মধ্যেই হয়ত খুঁজেছিল ছেলেকে। কিন্তু মৃত্যুর সময় সেও থাকতে পারেনি। সুমার্জিতা
একাই এসেছিল পৃথিবীতে, চলেও গেল একাই...”
— “তারপর?”
— “এরপর মা’র মৃত্যু
সংবাদ পেয়ে ছেলে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হল। তখনই ওর আলাপ ডুলুং-এর সাথে। কথা বলতে
গিয়ে ওদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এই ঘনিষ্ঠতা ঠিক প্রেম নয়। যখন শুনল, ডুলুং-এর মধ্যে
দিয়েই ওর মা ওকে খুঁজে চলত, তখন যন্ত্রণা-কষ্ট সব মিলেমিশে এক অদ্ভুত অনুভূতি তৈরি
হত। শেষ মুহূর্তে মাকে ছুঁতে পায় নি। কিন্তু ডুলুংএর সাথে তো মায়ের ছোঁয়া জড়িয়ে আছে।
তাই ডুলুংকে ছুঁতে চাইত অজান্তেই। ঠিক কী সম্পর্ক ছিল ওদের মধ্যে? সিনেমার শেষে এই
প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে বেড়াচ্ছে ডুলুং, যখন সুমার্জিতার ছেলে সব কাজ চুকিয়ে আবার
ফিরে গেল বিদেশে ডুলুংকে একপ্রকার না জানিয়েই।”
— “ইন্টারেস্টিং।”
ভ্রমর গল্প শেষ করতে লম্বা শ্বাস ফেলে শৌনক, “হোয়াট ইজ দ্য
অ্যাকচুয়াল রিলেশনশিপ বিটুইন দেম? আই মিন, তুই কী দেখাতে চাইছিস? বলছিস তো প্রেম
না।”
— “ভাই-বোনের
সম্পর্ক হতে পারে না? সে সম্পর্কটা কোন আইনি ছাপ্পা পেল না, পাবেও না। শুধু কি
প্রেমের সাথেই আইনি ছাপ্পা বা পরিণতি আসে? ভাই-বোন সম্পর্কে কি এই ছাপ্পা না
পাওয়ার যন্ত্রণা থাকে না? ডুলুং নিজেও একজন সিংগল চাইল্ড। ও–ও তো একজন দাদা বা ভাই
চেয়ে থাকতে পারে। জৈবিক চাহিদা কি শুধু প্রেমিকেই আবদ্ধ? বাবা, ভাই বা দাদা,
সন্তানের প্রতি যে টান সেটা কী তাহলে?”
— “বুঝলাম। ভালই, ক্যারি অন। এটা তো একটা অ্যাওয়ার্ড
পাচ্ছেই...। লেখ, তারপর দেখছি। বাই দ্য ওয়ে, এখন কাটলাম। সাড়ে নটা বাজে অলরেডি,
ওয়ান অ্যাণ্ড হাফ আওয়ার হয়ে গেছে। আম্বানি কাকুর জিওর দৌলতে
আমাদের কথোপকথনের পেছনে টাকা ঢালাটা অ্যাটলিস্ট বন্ধ হয়েছে। চল, এবার কাট। পেটে
ছুঁচো কাঁদছে। ডিনার করব... গুড নাইট।”
এক
নাগাড়ে কথাগুলো বলে, ভ্রমরের মুখের ওপর ফোনটা কেটে দিল শৌনক। আজ গল্পের আমেজে মজে
আছে ভ্রমর, মুডটাও ভালো রয়েছে। তাই আর রাগ হল না। অন্যদিন হলে ফোন কেটে দেবার জন্য
এতক্ষনে শৌনকের চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার হয়ে যেত। ফোনটা টি-টেবিলের ওপর রেখে আড়মোড়া
ভাঙে ভ্রমর।
— “এটা ভাই-বোনের
সম্পর্ক না, প্রেম দেখা।”
বাবার
কমেন্টে চমকে ওঠে ভ্রমর।
— “প্রে – এ - ম?”
অবাক চোখে সে প্রশ্ন করে ।
— “হুঁ। একটা
সাসপেন্স রাখ। কী যেন নাম ওই মহিলার – সু ... সুমার্জিতা ... ওঁর ইচ্ছে ছিল ডুলুংকে
ওঁর বউমা হিসেবে দেখবেন। সুপ্ত ইচ্ছে, মৃত্যুর আগে প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনি। হয়তো
ভেবেছিলেন, ছেলে দেশে এলে কথা তুলবেন। কিন্তু বিধাতা আর সে-সময় দিলেন না...।
কিন্তু সত্যি কি তাই? সেই প্রশ্নই তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে ডুলুংকে। এভাবে শেষটা দেখা।”
উদাস
চোখে কথাগুলো বলতে থাকেন অনির্বাণ। এতক্ষণ ডাইনিং স্পেসে বসে পেপার পড়ছিলেন। আর
ভ্রমর সোফায় হাফ শুয়ে শৌনকের সাথে কথা বলছিল।
মেয়ের সব কথাই বাবা এতক্ষণ মন দিয়ে শুনছিলেন।
— “তুমি প্রেমের কী বোঝ?’ বাবার
কথা প্রায় উড়িয়ে দেয় ভ্রমর, “আর তাছাড়া ওসব প্রেম-রোমান্সের স্টিরিওটাইপ ভাঙতেই তো
এই প্লট সাজিয়েছি। সবাই তো একটা সমবয়সী ছেলে আর মেয়ে একসাথে হলেই প্রেম-রোমান্স
দেখায়। আমি একটু অন্য কিছু দেখাই না, যেটা মানুষ চট করে ভাবে না! দিস ইজ কলড্ আতেউরিজম্ – মানে ডিরেক্টর হলেন ফিল্মটার লেখক।
একজন লেখক যেমন তাঁর গল্পকে লেখনীতে প্রকাশ করেন, সেরকম একজন ফিল্ম ডিরেক্টরও
সিনেমায় তাঁর গল্পকে ফুটিয়ে তোলেন। অ্যাণ্ড আই এইম টু রিচ দ্যাট গোল। ...বুঝলে,
ড্যাডিসোনা?”
— “যা বলছি শোন না; একটা অন্য অ্যাপিল
আসবে। তাতে তোর ওই আতারিজম না কি বললি ওটা কিছুই নষ্ট হবে না।” হাতে থাকা কাগজটা
গোছাতে গোছাতে উঠে দাঁড়ান অনির্বাণ।
— “অদ্ভুত তো!” ভ্রমর একটু বিরক্তি প্রকাশ করে,
“তুমি তো কোনদিন প্রেমের ধারেপাশেই যাও নি। আবার এসব বলছ কেন? নিজেই
তো বলেছ, লাইফে কোনদিন কোন মেয়ের ধারেকাছেই ঘেঁষতে না, যদি প্রেমে পড়ে যায় কেউ
তাই। এও তো বলেছ, দাদুকে বলেছিলে, ‘তোমরা মেয়ে দেখে বিয়ের ঠিক কর’ ... এই কারণে না
কি যে, তুমি প্রেম করে বিয়ে করলে সেই মেয়ে কিছু অনর্থ করে বসলে তার দায় তোমার
থাকবে। তখন অশান্তি ভোগ করতে হবে তোমায়। ...আর তুমি প্রেমের কথা বলছ?”
অনির্বাণ
কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, ভ্রমর থামিয়ে দিল – “আর নিজেই তো রাজ্যের লোকের কাছে
বলে বেড়াও, ‘আমার মেয়ের ওসব বয়ফ্রেন্ড–ট্রেণ্ড নেই। আমরা পছন্দ করে বিয়ে দেব ওর। ভ্রমর আমাদের এমন
মেয়েই না।’ ইভন্, তুমি আমার মাকে কোনদিন ভালবাসা দেখিয়েছ? ইউ আর জাস্ট লাইক আ
রোবট, বাবা! সকালে উঠে মা’র হাতে চা খাবে, তারপর বাজার যাবে। তারপর নাকেমুখে গুঁজে অফিস। ফিরে এসে একটু রেস্ট
নিয়ে নিজের কাজ। কোনদিন মাকে নিয়ে শপিং-এ গেছ? একটা সিনেমা দেখেছ মার সাথে? মাকে
নিয়ে তো ট্যুরেও যাও না। তুমি আবার প্রেমের কথা বল! হুঁ!”
মেয়ের
কথার কোন জবাব দিলেন না অনির্বাণ। অনেকক্ষণ একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে চলে
গেলেন নিজের ঘরের দিকে। চোখের কোণে না বলা কথাগুলো চেপে রেখে। সত্যি কি বাবা
‘প্রেম’ ভালবাসে? ...পুরনো স্মৃতি আঁচড়ায় ভ্রমর। তার মধ্যে সিনেমার গন্ধ তো বাবাই
ছড়িয়েছিল। উত্তম- সুচিত্রার সিনেমা দেখিয়ে, বিবরণ দিয়ে। মান্না দে-র ওই গান দুটো
গান প্রায়ই শোনাত – ‘দুঃখ আমায় দুঃখী করেনি’, তারপর ‘তুমি নিজের মুখেই বললে যেদিন।’
কী জানি, বাবা হয়তো ‘প্রেম’কে ভালবেসেছিল। তাই প্রেমে প্রত্যাখ্যানের ভয়ে
এগোয়নি। তাহলে মা’র প্রতি? মা-বাবার সম্পর্ক শুধুই কি যান্ত্রিক নয়? ... হয়তো
যন্ত্রের মধ্যেও একটা টান রয়েছে – ভালবাসাও। হয়তো ওই ছোট ছোট সাংসারিক অভ্যেস,
যেগুলো বাবার কোনদিন ভুল হয় না, সেগুলোই বাবার ভালবাসার প্রকাশ। মা’র মুখের কথা
খসতে না খসতেই চলে আসে রান্নার মশলাটা, বিছানার চাদর বা আরও দরকারি কিছু। ...
কিংবা হয়তো এগুলো নিছকই অভ্যাস। সেই অভ্যাসের আড়ালে হারিয়ে যাওয়া ‘প্রেম’ খুঁজে
পেতে বাবার মত সংসারী মানুষগুলো সিনেমা, গান এসব আঁকড়ে ধরে। হয়ত খুঁজে-না-পাওয়া
‘প্রেম’টাকেই নতুন করে খুঁজে পেতে বাবা বলেছিল, এই শর্ট ফিল্মের
শেষে ডুলুং আর সুমার্জিতার ছেলের মধ্যে প্রেম দেখাতে।
বাবাকে
ওভাবে বলে কি একটু কষ্টই দিয়ে ফেলেছে ভ্রমর? আলতো পায়ে বাবার ঘরের দিকে যায়। খাটের
বাজুতে হেলান দিয়ে মাথার ওপর হাত রেখে চুপ করে শুয়েছিলেন অনির্বাণ, চোখদুটো বোজা। মেয়ে
যে এসেছে বুঝতে পারেন নি। ভ্রমর শুনল, বাবার পাশে রাখা অ্যাণ্ড্রয়েডের সেট থেকে
একটা সুর ভেসে আসছে। খুব লো ভলিউমে। মান্না দে-র গাওয়া। চুপ করে গানটা শোনার
চেষ্টা করে সে –
‘আমার ভালবাসার রাজপ্রাসাদে/ নিশুতি রাত গুমরে কাঁদে/
মনের ময়ূর মরেছে ওই/ ময়ূরমহলেই...’
ভ্রমর
পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে খাটের দিকে। বাবার পাশে বসতে যায়। দেখে, অনির্বাণের চোখের
কোণে জলের ফোঁটা। তার কথায় কষ্ট পেয়েছে খুব? কিসের জন্য কাঁদছে - ‘প্রেম’কে
ভালবাসার যন্ত্রণায়? প্রেম আসেনি বলে জীবনে? না কি প্রেম হারানোর? ... হাত দিয়ে
বাবার চোখের জল মুছে দিতে গিয়েও থমকে যায় ভ্রমর, গানটার কথাগুলোয় –
‘আমার নাচঘরে যেই পাগল হত/ নূপুর তোমার পায়/ আমি ইরান
দেশের গোলাপ ছুঁড়ে/ দিতাম তোমার গায়/ তুমি শ্বেতপাথরের গেলাস ভরে/ অনেক সুধা দিতে ধরে/
আবার বিষও পেলাম তোমার দেওয়া/ ওই পেয়ালাতেই...’
চোখ
বুজেই রয়েছেন অনির্বাণ। নিজের ঠোঁটদুটো কামড়ে ধরেছেন। প্রাণপণে চেষ্টা করছেন গুমরে
বেরিয়ে আসা চোখের জলটাকে চাপতে। ভ্রমর ভাবে, প্রেম-রোমান্সের স্টিরিওটাইপস্ ভাঙতে
চাইলেই কি ভাঙা যায়? এত সহজে? ‘স্টিরিওটাইপস্’ও যে ভীষণই দুর্বোধ্য, ঠিক যেমন এই
সংসারের ঘানি টানতে থাকা মানুষগুলো।
অসাধারণ,মনোগ্রাহী গল্প। আজকের দিনের পটভূমিতে পুরানো সেই দিনের কথা ফিরে আসার অনুভূতি
উত্তরমুছুনখুব ভালো লাগলো ।
উত্তরমুছুনখুব খুব ভালো লাগল।
উত্তরমুছুনবিমল চক্রবর্তী, জামশেদপুর।