কালিমাটি অনলাইন / ৫৮
গত সতেরো জুলাই ২০১৮ তারিখে ‘আনন্দবাজার’এ প্রকাশিত এই খবরটা সম্ভবত অনেকেই পড়েছেন। তবুও যাঁদের পড়া হয়নি, তাঁদের জন্য তা পুনঃপ্রকাশ করা একান্ত প্রয়োজন মনে করছি, কেননা, এটা এমন একটা খবর, যা আজকের এই ক্ষয়িষ্ণু ভালোবাসার পৃথিবীতে এক অন্য বার্তা বয়ে এনেছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, এই খবর বা ঘটনা যেন রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তথাকথিত ভালোবাসার পৃথিবীকে।
পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার পাড়ুইয়ের তরুণী নার্গিস। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র সতেরো। সদ্য বিবাহিতা। একদিন তাঁর স্বামীর সঙ্গে মোটরবাইকে কোথাও বেরিয়েছিলেন। কিন্তু সেই যাত্রা ছিল মারাত্মক। পথিমধ্যে তাঁরা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। মৃত্যু হয় তাঁ স্বামীর। এবং নার্গিস গুরুতর আহত হন। তাঁকে ‘রেফার’ করা হয় কলকাতার হাসপাতালে। আঠারো দিন তিনি ছিলেন কোমায়। কলকাতায় ‘বাঙুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজি’ এবং ‘এস এস কে এম হাসপাতাল’এ দীর্ঘ প্রায় তিন বছরের চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে তিনি ঘরে ফিরে আসেন। কিন্তু সম্পূর্ণ সুস্থ তিনি হয়ে উঠতে পারেন নি। আজও তাঁর নিজে নিজে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। বসে বসেই তাঁকে চলাফেরা করতে হয়। ঘরের টুকিটাকি কাজও করতে হয়। তিনি নিজে সরাসরি বসে থাকতে পারেন না, পেছনে বালিশ দিয়ে বসতে হয়। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতেও তাঁকে সমস্যায় পড়তে হয়। খুবই যন্ত্রণাদায়ক তাঁর নিত্যদিনের জীবনযাপন।
কিন্তু জীবন তো কখনই থেমে থাকে না! কখনও কখনও জীবনে বৈচিত্র্যের অভাবও ঘটে না। আর তাই নার্গিসের আশাতীত নিতান্ত কম বয়সের ট্র্যাজিক জীবনে আবির্ভাব ঘটল বীরভূমের কেন্দ্রডাঙাল গ্রামের তরুণ আব্দুলের। আব্দুল কুদ্দুস। আব্দুল ভালোবাসলেন নার্গিসকে। নার্গিস ভালোবাসলেন আব্দুলকে। এই ভালোবাসার মাঝে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ালো না নার্গিসের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। আব্দুল এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘শুধু একটা মানুষের দৈহিক সৌন্দর্য দেখে ভালোবাসা হয় না। নার্গিসের মনের জোর, জীবনে ফেরার তাগিদ আর লড়াইয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এই লড়াইয়ে আমি ওর পাশে থাকতে চাই আজীবন’। হ্যাঁ, কথার অন্যথা করেন নি আব্দুল। সামাজিক ও পারিবারিক সব বাধা উপেক্ষা করে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আব্দুল বিয়ে করেছেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী নার্গিসকে। নার্গিস জানিয়েছেন, ‘আমার স্বামী বা বাড়ির লোক কখনও এমন আচরণ করেননি, যাতে মনে হয় যে, আমি তাঁদের বোঝা বা আমাকে নিয়ে ওঁরা লজ্জিত’। আর স্বামীর কথা জানিয়েছেন, ‘আব্দুল সব জায়গায় আমাকে কোলে করে নিয়ে যায়। কোলে করে চেয়ারে বসায়, গাড়িতে তোলে। ওর কোলে চড়েই একসঙ্গে কেনাকাটা করি, সিনেমা দেখি, আত্মীয়দের বাড়ি যাই। এমন কি, বাড়ির দোতলাতেও আমাকে কোলে করে তোলে’।
আপনাদের জেনে ভালো লাগবে, এ বছর তেসরা জুলাই নার্গিস ও আব্দুল জন্ম দিয়েছেন এক সুন্দর স্বাস্থ্যবান শিশুপুত্রের।
আপনাদের কি মনে পড়ছে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক মণিরত্নমের ‘গুরু’ ছবিটির কথা। এই ছবির মুখ্য চরিত্রে ছিলেন ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, অভিষেক বচ্চন, মিঠুন চক্রবর্তী। আর ছিলেন বিদ্যা বালন ও মাধবন। ছবিতে বিদ্যা বালন অভিনীত চরিত্র মিনুও ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তিনি চলাফেরা করতে পারতেন না, হুইল চেয়ারের আশ্রয় তাঁকে নিতে হয়েছিল। এমনকি প্রকৃতির ডাকেও তাঁকে অসহায়ভাবে সাড়া দিতে হতো সেই হুইলচেয়ারে বসেই। মিনু ভালোবাসতেন মাধবন অভিনীত চরিত্র শ্যাম সাক্সেনাকে। শ্যামও প্রচন্ড ভালোবাসতেন মিনুকে। প্রতিবন্ধী মিনুকে কোলে নিয়ে শ্যাম চলাফেরা করতেন। আর হ্যাঁ, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ও সবল শ্যাম ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলেন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী মিনুকে।
নার্গিসের আরও একটি নাম আছে। সোমা।
সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kajalsen1952@gmail.com / kalimationline100@gmail.com
দূরভাষ যোগাযোগ :
08789040217 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen, Flat 301, Phase 2, Parvati Condominium, 50 Pramathanagar Main Road, Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন