কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

রঞ্জনা ব্যানার্জী



সরষে ইলিশ 


সাতাশে জুলাই টিপুদের বাড়িতে ‘চাঁন্নি পসর’। দাওয়াত দিলেন পিউ ভাবি।     কটকটা তুমুল রোদের দুপুর। মেয়েকে কোচিঙে নামিয়ে সবে ফিরেছি। গরমে চোখ জোড়া অসাড় হয়ে বুজে আসছিল। অমনি ঘর কাঁপিয়ে বাজলো ল্যান্ড ফোনটা। দু’মাস ধরে মোবাইলে মেয়ে ছাড়া অন্য কারো কল রিসিভ করছি না আমি। ফেইসবুক, হোয়াটসএ্যাপ, মেসেঞ্জার, সব ডিএ্যাক্টিভেটেড। ঘুম চটার ঝাঁকিতে ‘চাঁন্নী পসর’ শুনিনি। কীসের দাওয়াত? ‘চাঁন্নী পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয়’, পিউ ভাবি গেয়ে উঠলেন। ভাবির গলায় সুর আছে। ‘১৯শে জুলাই আকাশে আধা চাঁদ ছিল। সাতাশ তারিখ হইলো ঢলঢল জোছনা, সেইদিন হুমায়ূন স্মরণ হবে। ড্রেস কোড আছে। মেয়েরা সোনালি পাড়ের সাদা শাড়ি আর ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবী’। কিন্তু ঝরা টিপুর দাওয়াত পিউ ভাবি দিচ্ছে কেন? ‘তুই তো অমাবস্যার চাঁদ। আর পিয়ালরে ওরা ফোনে পায় নাই’। আমি মনে মনে বলি, ‘তুমি ক্যামনে পাইলা?’ জানি এটা ঝরার চাল। আমিও খেলি। ‘হিমুরূপার হলুদ পাঞ্জাবী, নীল শাড়ি ছাইড়া সাদা চাপাইলা ক্যান?’ পিউ ভাবি বলেন, ‘ধুরো ঐসব কলেজ ভার্সিটির টু বি কন্টিনিউড কাপলরা পরে। শোন্‌ শাড়ি পাঞ্জাবী আমার বুটিকের। কম্বো অফার পাঁচহাজার টাকা’।

মনে মনে বলি, হুমায়ূন স্মরণ নয় আসলে শাড়ি পাঞ্জাবির পুশ সেইল উৎসব।

আমার মেজাজ চড়তে থাকে। সেই বিচ্ছিরি গন্ধটা মুখের ভেতর পাক খায়। জানি আমি না গেলে পিয়াল, ঝরার স্বস্তি। সিদ্ধান্ত পাল্টাই। বলি, ‘যাব কিন্তু নীল শাড়ি পরবো।’ পিউ ভাবি  চেঁচায়, ‘এইটা করিস না। আমার শাড়ি পসন্দ না হইলে নিজের ওয়ার্ড্রোবের সাদাই পর।’ 

আমি লাইন কেটে দি।

দু’মাস আগে রুনা ভাবির বাড়িতে ওয়ান ডিশ পার্টি ছিল। আমি ‘নারকেল চিংড়ি’ করেছিলাম। ঝরা এনেছিল ‘সরষে ইলিশ’। পরদিন পিয়ালের জন্মদিন কিন্তু অফিসের জরুরী কাজে ও সিলেট যাবে। ছেলে মেয়ে রাত বারোটায় বাবাকে জন্মদিনে চমকে দেবে বলে প্ল্যান করেছে। ওরা জানে পার্টিতে বাবা ড্রিংক করে এবং ফিরেই সটান বিছানায়। সেদিন পিয়াল এক শটের বেশি নেয়নি। মেয়ে তাও নিশ্চিত হতে বাবাকে মেসেজ দিয়েছিল। ‘বাবা আই হ্যাভ সামথিং আরজেন্ট টু ডিস্কাস। প্লিজ ডোন্ট ড্রিঙ্ক এ্যান্ড কাম বাই টুয়েল্ভ’।  পিয়াল হাসতে হাসতে ফোনটা আমাকে দেয়। ‘দেখ বুড়ি কী লিখসে?’ আমি মেসেজটা পড়ছিলাম। পিয়াল গেল দ্বিতীয়বার প্লেট ভরাতে। তখুনি এলো দ্বিতীয় মেসেজটা। মোস্তাক ভাইয়ের মেসেজ! ‘হেপি বার্থডে ইন এ্যাডভান্স। সরষে ইলিশ চার পিস খাবা কিন্তু। উম্মা’। আমি ঘামতে থাকি। এক হাত দূরেই তর্কে মশগুল মোস্তাক ভাই। পিয়াল তখন খাবার টেবিলে, আমার দিকে পেছন ফেরা। আমার চোখ খোঁজে ঝরাকে। দেখি পিয়ালের দিকেই এগোচ্ছে নিশ্চিন্তে। ফোনটা হাতে ধরা। ভাঁজ করা আঁচলের পাশ কেটে ওর মাখনের মত মসৃণ পেটের একপাশে আলো পিছলে যাচ্ছে। আমি এগিয়ে যাই। ওকে দেখিয়েই ইলিশটা বোনপ্লেটে ফেলি।

অতঃপর সবাইকে শুনিয়ে বলি, ‘মাছটা নষ্ট’।

খানিক পরেই বোনপ্লেট ভরে উঠেছিল ইলিশের টুকরোয়।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন