কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

সুমন্ত চট্টোপাধ্যায়



কিয়ানোরিৎ্জ (শেষ মায়াশহর) 


আলো চুঁইয়ে পড়া ওয়াইনের বোতল বেয়ে
কোনও সুদূর বিস্ফোরণের প্রতিধ্বনি—

কালো রাত, গাঢ় মেঘ আর শত্রুবাহিনীর
শহর দখলের নিঃশ্বাস;
প্রয়োজন গুছিয়ে মানুষ ঘরছাড়া কতদূর!

এই দ্বীপশহর জুড়ে একা আমিই শুধু,
একহাতে ভায়োলিন আর অন্যহাতে মাদকীয়তা নিয়ে
চুপচাপ সমুদ্র সৈকতে।
সোনার বেহালা যতই বাজতে থাকে
উত্তাল স্রোতেদের কাছে সাদা ঘোড়ার ভিড়,
মুহুর্মুহুঃ বিদ্যুৎ ঝলকানিতে
শুভ্রকেশর ঝলসে ওঠে বারংবার,
আর অচিরেই তলিয়ে যায় কত কত কালের বোঝা...

আধারমগ্ন কিছু পদাতিক নেকড়ে চারিদিকে,
বেহালার সুরে উন্মত্ত ঘোড়াদের
নিঃস্তব্ধ করে অবিরাম গুলিবর্ষণে;
ভিনদেশী তর্জমায় থামতে বলা হলে
আরও কিছুটা ওয়াইন, ভায়োলিন বেপরোয়া...
আর, একসাথে ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট
চুম্বন রেখে যায় বুকের রাজত্বে!

ভায়োলিন থামে না তবুও,
তার আওয়াজে প্রতিটা উন্মাদ সৈনিক
আত্মহত্যার পরই... বৃষ্টি নামে—


কুয়াশাওয়ালা


কেউ জানতেও পারে না কোনোদিন
মাঝরাতের কতটা গভীর থেকে
বেরিয়ে আসা
আদিম-আক্রান্ত সংসার ছেড়ে
                               নিঃশব্দ—

আলোর সাথে বৈরিতা তার
বিলুপ্ত নগরীর মত ব্যাপ্ত ঝোলায়
একলা হাইওয়ে—সরষে ক্ষেত কিংবা
হৃদয়ের সিটিলাইটস বেয়ে
কুয়াশা ফেরি করা কবিতার প্রান্তর

কেউ কেনে না—মেলে না কেউ কেনার মত,
আর গাঢ় বিতৃষ্ণায় ছড়াতে থাকা
সমস্ত সৃজন—সব আয়োজন
নিঝুম উত্তরের মন—শরীরে

সময় গড়াতে থাকা ছাইপথ,
মায়ানির্মিত অলীক আড়ালে
আলো ছুঁতে চায় ঠোঁটেরা,
আর উপলব্ধিতে সে অমোঘ অস্তিত্ব
ধোঁয়াবীজ ছড়িয়ে যায়—রাশি রাশি
                             অস্পৃশ্য—


হ্যেস্


নক্ষত্রখচিত বিশাল রাতের সুইশ উপত্যকা,
তুচ্ছ বিন্দুর মত একটি তুচ্ছ মানুষ
রোজ এসে দাঁড়ায় এখানে, আর
এই মহাবিশ্বের নিঃস্ব কারাগার থেকে
মুক্তির পথ হাঁটে—নিজের ভেতর।
পৃথিবীর আদিম ধূসরভীতি সরিয়ে
একাকী হাত বুকে তুলে নেয় ভালোবাসা,
আর নৈঃশব্দ্য—অস্তিত্ব জুড়ে


ধ্বংসাবশেষে মোজার্ট্


যে উড়ে গেল আমার বুক থেকে নিঃশব্দ,
কখনও ফিরে তাকালে মনে হয়
জীবন যেন ব্যথা আর আগুনেরই দাবিদার।

মারা গেছে হাস্নুহানা সময়,
ছড়িয়ে থাকা লাফিং বুদ্ধের টুকরো
আর কিছু পুড়ন্ত ফসলের অবশেষ
যেন বাকরুদ্ধ এক বিষম বিভীষিকায়;
তছনছ হওয়া অজস্র শরীর ও শ্বাস,
প্রিয়তায় রাঙানো এত আসবাবের মাঝে
কখনও এসে দাঁড়ায় দুটি পা—
যখন বাতাসও অনড় কোনও শব্দ শোনাতে,
লুটিয়ে পড়া গানপাখিদের মাঝে
তিনি বসেন, নিরুত্তাপ পিয়ানোর সামনে।
মাটি ফুঁড়ে উঠে আসা হাজারো শিকড়
যারা ধরে রেখেছিল একসময় কত রিক্ত দেবালয়
উবে গেছে সব, আমার বুক থেকে, নিঃশব্দ।
তবুও কখনও ফিরে তাকালে মনে হয়
নীল আকাশে এক বধির যেন অপেক্ষায়,
শেষ সিম্ফোনি’র আঙুলটুকু নড়ে ওঠার।







0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন