কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

জ‍্যোতির্ময় মুখার্জি



আমার কোনও আয়না নেই


মেঘ করে আছে। বৃষ্টি পড়ছে এখন। পায়ের উপর পা তুলে এলিয়ে দিয়েছি শরীর চেয়ারের ভাঁজে। ঠোঁটে জ্বলে উঠছে আগুন মুহুর্মুহু। কানে হেডফোন গুঁজে বেশ জাঁকিয়ে বসেছি পৃথিবীর উপর

‘সব গগন উদ্‌বেলিয়া -- মগন করি অতীত অনাগত…’

আমার জানলা দিয়ে আকাশ দেখা যায়। দেখলাম কীভাবে কালোকালোআলো মেঘেরা খুঁটে খায় ওদের জন্মগত ভুল। ওরা জন্ম আর মৃত্যুর মাঝ বরাবর তুলতে পারেনি কোনও দেওয়াল। আমি তো বেশ চার দেওয়ালের মাঝে নিজেকে জড়িয়ে নিয়ে মাথার উপর টাঙিয়ে ফেলেছি কংক্রিটের সামিয়ানা। আমার জানলা দিয়ে আলো আসে। আমার ঘরের কোণে কালো থাকে

‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়…’

হলুদ বোলতাটা যখন ভিজতে ভিজতে মুখে করে নিয়ে গেল আশাবাসার মাটি। আমি চোখ রাখলাম আকাশে। আমি তাকিয়েও দেখিনি কীভাবে মৌমাছিরা অহেতুক ডানা ছাপটিয়ে ছাপটিয়ে শুকিয়ে ফেলছে তাদের কচিকাঁচাদের গা। যখন কুল গাছটা থেকে চুঁইয়ে পড়ল শালিখ ছানাটা। আমি তো তখন দেখছিলাম কীভাবে বৃষ্টি ভিজলে পুকুর পাল্টে ফেলে তার রং

‘এ ভরা বাদর, মাহ ভাদর…’

আমার আকাশ আছে। আমার বাতাস আছে। আমার বৃষ্টি আছে। আমার মেঘ আছে। তুমি আছো। আমি আছি

‘কুঞ্জপথে সখী…’

চোখ বন্ধ রেখেছি। চোখ খুলে রেখেছি। আমি চোখ বন্ধ রেখেছি। আমি চোখ খুলে রেখেছি। বন্ধ রেখেছি আমি খোলাখোলাবন্ধখোলাবন্ধ চোখ

‘এ তুমি কেমন তুমি, চোখের তারায়…’

আমার কোনও আয়না নেই।


ভার্চুয়াল ডায়েরি-২


ভালোলাগছে না কিছু। ভালোলাগছে না কিছুই। একটা বিরক্ত, বি-রক্ত করে চলেছে কয়েকদিন ধরেই। কখনও গেম খেলি। টপাটপ গোলের মালা পড়িয়ে দিই বার্সাকে। কখনও মেয়ের সাথে খেলা-খেলা-খেলা আর খেলা। কখনও বা গর্ত নিজের ভিতর

কবিতাও ভালো লাগছে না আজকাল। না পড়তে, না লিখতে। এমনিতেই কবিতা আমার মোটেই ভালোলাগার কিছু নয়। আমার ভালোবাসা তো উপন্যাসে। ঐতিহাসিক উপন্যাস হলে তো আর কথাই নেই। DNA পাল্টে ফেলে জাস্ট ছিনে-জোঁক। তবু পড়তেই হয় কবিতা এবং অবশ্যই প্রয়োজনে। নাহলে জাস্ট চোখ বুলুবুলু। প্রয়োজনের তাগিদেই পড়লাম, পড়ছিলাম, পড়ছি প্রভাত চৌধুরী। কখনও কখনও বা মণীন্দ্র রায়, নাসের হোসেন, অনিন্দ্য রায়, নীলাব্জ চক্রবর্তী। কিন্তু ভালো লাগছে না আর। মাথায় যেন কিতকিত খেলছেন উনি, ওনারা বা হয়তো ব‍্যাঙ ছছ্ছরি। তা যাইহোক, খেলুন ওনারা ওনাদের মতো। আমি চুপচাপ এসে বসলাম রেলিং ধারে

জাবর কাটতে কাটতে ভাবছিলাম প্রভাত চৌধুরীর কথা। এই মানুষটি দেখছি আস্তে আস্তে আমার বেশ সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারি গিলতে। না পারি উগরাতে। কখনও কখনও ছেড়ে ছুড়ে দিয়ে ভাবি দূর আর পড়ব না প্রভাত চৌধুরী। কী লাভ? পরক্ষণেই কেউ যেন কানে কানে বলে ওঠে, সেই রুমাল নাড়লেই (কিন্তু) ঝরে পড়বে শিউলি-গন্ধ

সমস্যা এটা নয় যে আমি ঠোঁট খুললেই কেউ কেউ এখন বলতে শুরু করছে, দেখ তো ছায়াছায়া-আলোতে প্রভাত চৌধুরী আছে কিনা। সমস্যা এটাও নয় যে, শিউলি-গন্ধের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে আমাকে রাত-ভোর। সমস্যা এটাই যে, প্রভাতী শিউলিরা মজে গেছে হয়তো আজ শিউলি-গন্ধেই

অতঃপর, সেই সন্ধ্যা থেকে অপেক্ষা করে আছি। অপেক্ষায় আছি এক নতুন প্রভাতের। রুফটপ্ গার্ডেনে হয়তো কাল সকালেই ফুটবে এক নতুন ফুল


আ পারফেক্ট হোল্


এইতো চাঁদের মতো চুল সীমানা। হে প্রিয়, তোমার গর্ভাশয়ে বেড়ে উঠুক আজ আহ্লাদী মাটি। শাঁখা-পলার মতো খুলে রাখো তোমার ঘর ঘর বিশ্বাস। তুমি কি শান্ত হবে এই প্রকাশ্য স্বেদ ও বিষে?

যদিও এখানে কোনও যুক্তিহীন বারান্দা নেই। এখানে মাঝরাতে লোভীর মতো গান শুনিয়ে যায় না কোনও আধপোড়া শ্লোক। নীলকন্ঠ পাখিটিও এখানে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে মেখে নেয়নি শরীর শরীর পালক। এখানে সবকিছুই পারফেক্ট। এখানে জলের তলায় ঘুমিয়ে পড়ে না জল

হে প্রভু, তিরস্কার করবেন না আমাকে। চিৎকার করে ঘুম ভাঙাবেন না আমার। আপনাকে অসহ্য করে তোলার মতো কোনও ব‍্যক্তিগত আঁশ বাকি নেই আর।

আপনার প্রিয় পৃথিবী থেকে কোনও নরম নরম রাত চুরি করে পালাইনি আমি। আপনার পৃথিবীতে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে শিশু বুকে স্টেনগান জড়িয়ে। তাহলে খামোখা দোষ দিচ্ছেন কেন আমাকে ? ওদের বুকে থেকে যদি আপনি সীসার গন্ধ পান তারজন্য কি আমি দায়ী?

তাকিয়ে দেখুন, কিছু বালি বালি অন্ধকার কিন্তু এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে। ওদের প্রতীক্ষার কোনো সিঁথিডোর নেই। নামতে নামতে ক্রমশ শষ্য থেকে বীজ, বীজ থেকে শষ্য হওয়ার আগে পর্যন্ত তুলতুলে জিহ্বা তুলে জেগে থাকে খিদে আর ভয়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে তাই শরীরে পিন ফুটিয়ে দেখে নিই, ঠিক কতটা স্বপ্ন বুনলে বাড়িঘরগুলো নিজস্ব পরাগ মুছে হাততালি দিতে দিতে হেঁটে যাবে সমস্ত রাস্তা জুড়ে




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন