কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

শুক্তি ঘোষ



অপার্থিব


আভূমিপ্রণত,
দিগন্ত থেকে দিগন্ত ছোঁয় ছায়াপথ ---
নক্ষত্রখচিত নীল রাত;
মরুবালু শুষে নেয় শরীরের তাপ,
পরাঙ্মুখ এ সময়, দু’হাতে ঢেকেছি এই মুখ !

শ্বেতমরু, কৃষ্ণমরু,
আরো আছে স্ফটিক পাহাড়,
অসাড় চিবুক ছুঁয়ে
উড়ে যায় বিশুষ্ক বাতাস;
ওষ্ঠ, তালু, আলজিভ,
পার হয়ে শিরা ও ধমনী
বিন্দু বিন্দু নেমে আসে
এক আকাশ পিপাসা আমার.
জলহীন পাণ্ডুর সময় --
ফুসফুস, কণ্ঠনালী,
নাভিপদ্মে তৃষ্ণার দাহ!

দীর্ঘপথ -- পথপ্রান্তে
ছলছল মরুমায়া, কেঁপে চলে বেপথু নিঃশ্বাস --
জলছবি উড়ে যায় ধাবমান ঘুরন্ত চাকায়,
উদাসীন বালিয়াড়ি
পার হয়ে সূয্যি নামে পাটে;
সব ছায়া মুছে গেলে ছায়াপথে আলোর খিলান
জেগে ওঠে, অহঙ্কারী উল্কার আলোয়
ছায়া ফেলে থেমে থাকা ঢেউ।
শব্দহীন চাঁদ ওঠে
শীত হাত,
ঘুমন্ত বাতাস,
জেগে থাকে বালুভূত নিশাচর সরীসৃপ রেখা --
হলুদ সাগর একা
শুয়ে থাকে অলৌকিক আকাশের নীচে;
শরীরের ভাঁজে ভাঁজে জ্যোৎস্না মাখি,
বিচূর্ণ বালির আদর
আগুল্ফ ঢেকে রাখে --
নিভে আসে আগুনের তাত,
তন্দ্রাতুর দুই চোখ
অপার্থিব মনে হয় যেন এই রাত!


R.I.P.


রিপ, রিপ, রিপ,
মোবাইল থেকে মোবাইলে
উড়ে চলেছে মেসেজ --
পরশুরামের দোহাই
নাস্তিকের আত্মা থাকে না!
তার কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, আর নাইট্রোজেন,
অর্থাৎ তাবৎ অণু–পরমাণু,
এখন থার্মোডাইনামিক্সের অমোঘ নিয়ম মেনে
ব্রহ্মাণ্ড জোড়া রাসায়নিক ক্রিয়া—বিক্রিয়ায়
অবিরাম নেচে চলেছে --
শান্ত হবেই বা কেন?
আপশোস এটাই
কগনিটিভ সায়েন্স এখনো তার শৈশবে,
আর হ্যারি পটারের জাদুকাঠিও তো সঙ্গে নেই --
তাই মগজের ভাঁজে ভাঁজে বুজকুড়ি কাটতে থাকা
অসংখ্য আইডিয়া
সেই সব ইলেক্ট্রোকেমিকাল সিগনাল
এখন মহাজাগতিক শক্তিতরঙ্গে বিলীন!
তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না --
এটা ক্ষতি!
মানতেই হবে
সবকিছু বড় অসমাপ্ত থেকে গেল।
শান্তি নয়, অস্থিরতা --
কে তুলে নেবে তার অসমাপ্ত কাজের ব্যাটন
নিজের হাতে?
তীক্ষ্ম মেধা আর তীব্র প্যাশন,
চাঁপা আর চন্দন --
দপদপ করছে তার উপস্থিতি
আমাদের স্মৃতিতে,
আমাদের চর্যায়;
তার কাজের পাতায় পাতায়
ঘাই মারছে অসংখ্য অস্থির
অশান্ত জিজ্ঞাসা।
লোকটা তুমুল বেঁচেছিল,
মৃত্যুর সাথে তুমুল পাঞ্জা লড়েছে,
আত্মা নেই -- দেহ নেই --
কিন্তু রয়ে গেছে তার অস্থির ছটফটানি,
তীব্র তপ্ত -- ভবিষ্যতের জন্য প্রতীক্ষমাণ,
তার কাজ, তার প্যাশন, তার বিশ্বাস --
কে চায় কবরের শান্তি?
সে তো জীবনকেই ভালবেসেছিল,
মৃত্যুকে নয়।


ডুব


তারারা নিশ্চুপ হতে জানে,
কারণ আকাশ জুড়ে
কোটি কোটি বছরের নিস্তব্ধ ঝংকার।
আকাশ দেখেছ তুমি?
নক্ষত্রনীল রাতে
গভীর আঁধারে
আকাশের মুখোমুখি হয়েছ কখনও?
আকাশ গভীর কালো,
সমুদ্র পেরিয়ে আসা
নারীর চোখের মত;
অথবা প্রথম প্রেম,
স্তব্ধতার গভীরে বাঙ্ময়।
জানি আজ সুপ্তিমগ্ন
সব পাখি তাহাদের নীড়ে,
কবোষ্ণ কোমল
সূর্যস্বপ্ন ওদের দু'চোখে --
তুমিও ঘুমাও,
অতলান্ত অন্ধকার সমুদ্রের বুকে
ডুব দেবে
তুমি তো ডুবুরী নও!


         
           


                     





0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন