কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

অপরাহ্ণ সুসমিতো



ঈশ্বর আপনি


পেছন অথবা শেষের সিটেই বসা হয় ফেরার পথে। জায়গা পাওয়া যায় না। শুরুর পথে বেশির ভাগ খালি থাকে। জীবনের মতোই। শেষের দিকে কোথাও জায়গা থাকে না।
তোমার জীবনের শেষাংশ তা নয়। চুম্বক অংশ সেটাই। একটি লাইন। মন খারাপ করায় ভাবায় হাসায়। একটি লাইনই আবার শুরুতে নিয়ে যায়। বারবার।

ভরদুপুরে কোনো কোনো সময় রাস্তার যে পাশে দাঁড়ানো, সেখানে মাথার ওপর  তীব্র সূর্যের দোজখ তাপ, সোজা তাকালে রাস্তার শেষ মাথায় ছায়া। গনগনে দাহে পুড়ে পুড়ে ছায়া আশ্রয়লোভী রুদ্ধশ্বাসে বন্ধ দু'চোখ, ছায়াশিকারী হৃদয় হরণ করে সকল খরা, ধেয়ে যায় রাস্তার অপর প্রান্তে।

গতকাল যেমন, আজও... এবং আগামীকাল।

তুমি উৎসাহ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী: মন ঝরে পড়ার শব্দ কী শুনতে পাও? আমরা যখন বুড়োবুড়ি হবো, অনর্গল কথা বলতে বলতে তোমাকে ভাত লাল শাক দিয়ে মেখে খাইয়ে দেবো। তুমি কথা কিছুই শুনবে না। তাকাবেও না। শুধু মুখ খালি হলে মুখ হা। তুমি তখনো ল্যাপটপের স্ক্রীনে উৎসাহ দিয়ে বেড়াবে। আমি ভাতের বদলে কাঁচামরিচ ঢুকিয়ে দেবো তোমার মুখে। ঝালে তোমারর বুড়ো চোখ থেকে জল, তুমি অনেক চেঁচাবে।
তোমার মুখে জলের গেলাশটা আমিই ধরবো তখন...
হয়তো ইশারায় বলতে চাইবে ইশ বুড়ো হবো না আমি, অবুড়োত্ব সুধা পান করেছি।
তোমাকে মনে করিয়ে দেব সেইদিনগুলো।

তখনো স্কুলে ভর্তি হইনি। সন্ধ্যা হয় হয় সময়ে এক ফেরিওয়ালা আসতেন।  মাথায় কাচের বাকসো। কেমন সুর করে বলতেন, 'এই চমচম'। ওর ডাক কানে এলেই মা’র কাছ থেকে পয়সা নিয়ে লাফিয়ে গেটের সামনে। ভাবতাম এই চমচমওয়ালাই ঈশ্বর। ওর কাছে মিষ্টি থাকে।
শো-কেসে সাদা দাড়ির রবীন্দ্রনাথের মূর্তি। ভাবতাম রবীন্দ্রনাথ সফেদ ঈশ্বর।

ঈশ্বরকে দেখা যায় না পরে জানলাম। মনে মনে ওর সাথে যোগাযোগ। ও মনে থাকে। মনের কাছে চাইলেই পাওয়া যায়। গোলালু ললাটে এই নিপুণা সন্ধ্যায় একটি প্রাণের সম্ভাব্য মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফেরা... লঘু করে দিচ্ছে সব... ব্যথা...

তুমি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছো। আমার সন্ধ্যা শোভনা ভিজিয়ে... প্রবল ধরে আছি আমরা পরস্পর...

ফ্রেমে ঝোলানো একটি ছবি। ঝাপসা তবুও স্পষ্ট। সে রাতে অতল বিষণ্ণতা কালোবেড়ালের থাবায় ছোঁ মেরে তুলে নিয়ে গেলো বাবা-পাখিকে। মা-পাখি বৃক্ষ থেকে পড়ে গেলেন আচমকা, ডানা ভাঙলো রক্তপাতহীন।

সেই ভাঙা ডানা নিয়েই আগলে ধরলেন ছানাগুলো। তারা তখনো উড়ে যাবার ডানা  পায়নি। তিনি মচকালে চলবে কী করে? এক মুহূর্তে বৃষ্টিভেজা রাত বিনা মেঘে...  ছানাগুলোকে বজ্রপাতের শব্দ বুঝতে দেননি। শক্তি সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়িয়েছেন। মনের শক্তি।


ছানাগুলো আজ পাখি। উড়তে শিখেছে। মাকে ঘিরেই ওড়ে ওরা। একমাত্র কন্যাপাখিটি বাইরে উড়ে গেলো। মাতা কন্যা তো সখী, লতায় পাতায় জড়িয়ে থাকে দূরে গেলেও।
বিচ্ছেদ শুধু ছোঁয়ার দূরত্ব। তুমি কি মরে যাচ্ছো?

এই যে তোমাকে প্রতিদিন পাচ্ছি। তুমি তো মনেই থাকো।

তুমিই ঈশ্বর। নইলে দিতে তোমাকে?

1 কমেন্টস্:

  1. শেষেরও শুরু হয়। পথের শেষ প্রান্তে ছায়া...
    চমচম শোকেসে একটাই লাইটবাল্ব। আলো...
    খুনসুটি কাঁচামরিচ উতসাহেরই জলের গেলাশ...
    ডালঘুটনি ভীত
    ফেরারি রাংগা রাতঘুমে মা পাখির পালকের আশ্রয়ে...
    মনশক্তিশোভনাযুগল
    কালিমাটিমাখামাখিশব্দপ্রণয়ে
    প্রতিদিন ঈশ্বর ধারণ করে,
    ধরে থাকে পরস্পর....

    উত্তরমুছুন