কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮

শুক্লা মালাকার



অজানা আঁধার


চেয়ারের গর্তে শরীর ডুবিয়ে দিয়েছি। এই ‘দোলনা’ চেয়ারটা আমার খুউউউব পছন্দের। কে দিয়েছে জানি না। রোজ এসময় এটাতে বসি। চেয়ারটা  থাকে খোলা প্রান্তরে, মাথার ওপর পাইনের ছাওয়া। সামনে একটু দূরে কাঁটাতারের দেয়াল। সেটা পেরিয়ে আদিগন্ত শিখরমালা। পিছনে অনেক উঁচুতে উঁকি দিচ্ছে সাদা চূড়ার সারি। ওদের জগতেও বোধহয় তীব্র রেসিজম আছে। আমার কিন্তু এই ছবিটাই ভালো লাগে।

একটা বাচ্চা মেয়ে এসে চাদর চাপিয়ে দিয়ে গেল। মিঠে রোদে হাওয়ার গুনগুন।  এই জন্যেই আমি কানে হেডফোন গুঁজি না। ম্যাপেলের পাতা চুঁইয়ে পড়ছে গত রাতের জমানো শিশির। ওই দিকটায় কচি রডোডেন্ড্রনের ঝোপে ফড়িংদের উল্লাস। আমি দেখছি ছায়া কীভাবে পালটে দিয়ে যায় ঝকঝকে উপত্যকা। দূরে উঁচু উঁচু পাহাড়ের গায়ে বসতি। প্রায়ই আমাকে চিনিয়ে দেয় দার্জিলিং, জোরথাং, ওই দিকে গ্যাংটক, আমি ভুলে যাই। এখান থেকে সব বসতিই এক লাগে, সুন্দর ছবির মতোন। কাছে গেলে দেখবে তার খোপে খোপে আন্দোলন - বেঁচে থাকার।

আমার আর প্রকৃতির মাঝে কোনো পর্দা ভালো লাগে না। অথচ রোজ আকাশ বেয়ে রোদ্দুরমাখা খুদে খুদে কালো কালো অক্ষরের দল নেমে আসে। হাত ধরাধরি করে ঝুলে ঝুলে পর্দা বানায়। ওই দেখ কেমন ডিগবাজী খাচ্ছে, ছুটোছুটি করছে। আমি সাজাতে পারছি না। অক্ষর থেকে শব্দ হয় জানি, শব্দ থেকে কবিতা। কিছুই পারছি না। অক্ষর ছুঁতে চেয়ে আমার চোখ অনবরত ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না। রোজই এমন হয়। আজকাল কিছুই পারি না। সেই মেয়েটা এলে বলতাম ধরে দিতে। তারপর দিব্যি সাজিয়ে ফেলতাম আমার সামনে রাখা সাদা পাতায়। এটাই আমার হোমটাস্ক। কিন্তু ওতো আরো পরে আসবে।

এই যে! হাওয়া থেমে গেছে! এইবার উত্তরের বাঁক মেঘেদের ঠেলে দেবে। একদলা মেঘের পেছনে আর একদলা মেঘ। সব মেঘেরাই মনখারাপের কথা বলে। আমার কোনো মনখারাপ নেই। দেখ! দেখ! ওপারের শিখরমালা আর আমার মাঝে কেমন মেঘের সমুদ্দুর। তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে ডোরাকাটা অক্ষরের পর্দা। আমি এখন এই সমুদ্রে মন ভাসিয়ে অহেতুক ঘুড়ে বেড়াবো। এই দেখ উপত্যকার আনাচে কানাচে ঝোপেঝাড়ে নাম না জানা কত ফুল! টুকরো আলো, ঘুমন্ত জোনাকি। ওই যে থইথই হলুদ পেয়ে গেছি। দেখ! ডুবন্ত মেঘে আমার গলিত সময়। ওরা কি বৃষ্টি হয়ে ঝরে যাবে! আমার ভয় ভয় করছে। ওরা বৃষ্টি হলে আমার মুঠো খালি হয়ে যাবে যে! আরে! শিউলির গন্ধ আসছে কোথা থেকে! এখানে তো শিউলির গাছ নেই! তবে? আরো অদ্ভুত দেখ, পায়ের কাছে মজে যাওয়া ভালোলাগা খুঁটে খেতে লেগেছে আমার নধর উত্তেজনা।

পা তুলে নিলাম ভয়ে। ওইতো সেই মেয়েটা আসছে। একপ্লেট রঙিন প্রজাপতি  সাজিয়ে দেবে। আমি টপাটপ গিলে ফেলব। তাহলেই চারপাশ শান্ত হয়ে যাবে। প্রজাপতির মতো পাখা গজাবে আমার। সাদা মেঘের সমুদ্দুর টুক করে কালো হয়ে যাবে, আমি রঙিন হয়ে ভাসবো। ছায়া ছায়া শরীর আমাকে ঘিরে উৎসবে মাতবে।













0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন