কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৮

স্বপন রায়




মাধবী-সিরাপ


(২৯)


আমি মরে গেছি।রোদ ঢাকা দিচ্ছে আমায়। তুমি বেঁচে আছ রাত্রি। মাধবীসিরাপ  বানাচ্ছো, আকাশে ফেরারী জেটের দাগ তাই, দাগে আমিও কিছুটা, হাড়কচলানো। অনেকটা নিচে ব্যর্থ কালের আবর্জনা আমি, পুড়ে যাচ্ছিলাম। সিরাপের শিশি খুলল যেন, খুলি ফাটার শব্দে। একটা সবহারানো মানে বই শব্দ হারালো, আঁচলাগা ধ্বনিও।  এবার সিরাপে মিশবে। রঙ হবে তন্দ্রাসবুজ!

মরে যাওয়ার পরে রাত্রি লম্বা হয়। আর সিরাপ ঘন। হাড় খোলসা করে ডুগডুগি বাজাবার রহস্য। স্মৃতি এক মহাশ্মশান, ছাইচাপা আগুনে ঘুমনো। রাত্রি ঘুমোয় না, চুড়ির শব্দ শোনে তারাদের পাশ ফেরার শব্দে।এবার সিরাপ লম্বা হয়, রাত ঘন। কাছে কেউ নেই, আমার কাছে। আর তোমার কাছেও


(৩০)


বই কুড়িয়ে দেওয়ার আগ্রহে নূপুর, পায়ের পাতা, বিলিবিলোনো ঘাস কি যে অনুপাতিক। ঝুঁকে থাকার এই অজুহাতে চরিত্র ঘামে, ডিওডেরান্ট নার্ভাস হয়, পাতাগুলো মোহিনীঅট্টমে যেতে যেতে একেকটা আঙুলে পেস্তাবাদাম, নখ। সিরাপ হবে হবে তখন। পায়ের ডিমে কাটপিস রোদ, স্কার্টের অববাহিকা জুড়ে  নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু, কুড়িয়ে দিচ্ছি যখন ‘পূরবাই’ হঠাৎই। আমি না, ছুঁয়ে ফেললাম! এরপরে যা যা হলঃ

১. ঘাস একটা রাজনৈতিক দলের নামে ঢুকে গেল
২. পায়ের ওই অবিশ্বাস্য পাতায় লাগল ছিন্নতার সুর, ভায়া তরণী
৩. আর আঙুল হরিয়ানার খাপ পঞ্চায়েতের ভয়ে পালানো একটি মেয়ের পায়ে,   অসহায়
৪. আমি, পাংচার সারাচ্ছি বাইকের আর ভাবছি, বই কুড়িয়ে দেয়ার এই রোগ কি  সংবিধানের সেই উজ্বল অধিকার যা লিখতে গিয়েও লেখা হয়নি
৫. লিখলে কি সংবিধানও আরেকটা বই হয়ে যেত, কবিতার?


(৩১)


ফুটো দিয়ে দেখি মাধবীকে, কী যে বিস্তারিত। নীপবনে দুল হারানোর চেয়ে, ঘাড়ের গামছা থুইয়া যে বন্ধু চলে গেল তার চেয়েও মাধবী এক অধীর-রচনা। মাধবীর সারাংশে দেখি যদিহারা কিন্তুহারা দুটো পাখি, ঈষৎ গল্পময়। দেখে ফুটোর মালিক ওজোনের গায়ে বিপ্লবের বিভিন্ন স্তর দিতে থাকি। প্রতিবিপ্লব আবার ফুটো করে দেয়, মাধবীর হৃদয় আর সেই দুটো পাখি কেন যে এখন গান গাইছে। হলদে একটা বাড়ির গান। লজ্জারাখা নদীর গান। মেঘ-দুরদুর বৃষ্টির গান। আমার চোখ ফুটোয় রাখা এখনো। জল আর রক্তে মাখামাখি...


(৩২)


চায়ের দোকানে এলেই বলে, খোকন না, খুকন। ব’লেই চা এগিয়ে দেয়। চায়ের সম্পর্ক আছে পাতার সঙ্গে, পাতার আছে চোখের সঙ্গে, চোখের আছে মাধবীর বাগানে লাগানো হিন্দু মুসলিম ঐক্যের প্রতীক একটি নারকোল বা নারিকেল গাছ, গাছের ছায়ায় আছে কিছুটা মলিন বাংলা কথাবার্তা, খবরের কাগজের চেয়ে উজ্জ্বল যদিও। চায়ে ঢোকার আগে বা পরে মাধবী একবার কি দুবার নৈতিক সেই জায়গাটা দেখিয়ে দেয়, মনের। আমি দেশের কথা ভাবি, ভাবি আজ যা হল কাল তা হবেনা, আমরা শু-শাইন বয়দের ডাকবো বাংলায়, বলবো স্বচ্ছতা। স্বচ্ছতা, পালিশ করবে এবার। জুতোর কাদা সরাবে। খুব হাল্কা মনে হচ্ছে এখন, মাধবী কিন্তু পারে এভাবে সেলাই দিতে। মেশিন লাগে না
চা শেষ। গ্লাস নামিয়ে দেখি ‘খোকন টি-শপের’ মেঝেয় চাঁদের আলো কিলবিল করছে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন