তমোনীলছবি
কেউ যেন ইচ্ছাকৃত পরিবেশ অশ্লীল করছে। অথবা দলগত প্রচেষ্টা। নাকি পরিবেশ স্বয়ং অশ্লীল? সময় রাত সাড়ে এগারো। জোরালো
আলোর পাশে অন্ধকার সুকঠিন দেয়ালের কাজ করে। জোরালো আলোয় একদল
কুকুরের প্রাকৃতিক যৌনক্রিয়া। তবুও অন্ধকারময় পরিবেশ
এমন, দৃষ্টি জোর করে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। অন্ধকার দেয়ালে ঠেস দিয়ে চরমেরা
কাজ সারে। মাথার ওপর সমিয়ানা। গুমোট ও বাষ্পীয় উষ্ণতায় ভিডিও
তুমুল। প্রতিচ্ছবি ও প্রতিধ্বনি সমেত
তমোনীলছবি। কু কীর্তিরও চাঁদ আছে। ঘাম ও সেন্টের মিশ্রণ। শব্দ তরঙ্গ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্যেই
তো নিস্তব্ধতা। নিস্তব্ধতা খান খান করে পুরুষের
রেত্ঃপাত ও নারীর উত্তেজক শীত্কার মাইক দিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু মানুষ নিষ্ঠাভরে পশুত্ব শিখে নেয়। একজন ধবধবে সাদা
পোশাকের, মাথায় সাদা টুপি, একবার
পড়ে আর একবার খোলে। তার পাশে কমবয়েসি এক শ্রমিক হঠাৎ সোজা হয়ে বসে, চোখ বিস্ময়ে চকচক করে।
-বিশ্বাস হয় না ,বিশ্বাস হয় না!
-কী বিশ্বাস হয় না?
বিরক্ত সাদা পোশাক। কালিঝুলিমাখা সাইকেল মেকানিকের চোখে
আনন্দ।
-এই এই যে একটু আগে কোমর নাচাচ্ছিল মেমসাব আর এখন কোমর
উঠিয়ে বাচ্চা দিচ্ছে। তাও আবার জলের ভেতর! আরি ব্বাপ! কী জন্মানো রে বাপ!
-কেন? ফুটপাথে, শুয়োর খুপরীতে, ছোটলোক পট্টিতে এসব হামেশাই হয়। এতে
আশ্চর্য হবার কী আছে?
সঙ্গে সঙ্গে চারপাশের বর্তুলাকার মাথা এপাশে ঘোরে। ঠং করে
ধাতব শব্দ। হিসহিস নিঃশ্বাসের আওয়াজ। সাইকেল মেকানিক ফিস ফিস করে বলে, এখানে বেশি খাপ খুলবেন না সাব, সবার সাথে মিলে মিশে
থাকুন। এখানে সবকটাই সাহেব মেমদের কাজ দেখতে ভালোবাসে। সাদাদের দেখতে ওদের খুব
পছন্দ। সিমেণ্টে বাঁধানো সুইমিং পুল, দামী গাড়ি, দামী ব্রা প্যান্টি। আপনি সাদা তাই সাবধানে
থাকুন, নজর কাড়বেন না।
শুভ্র পোশাক ভয় পায়। ভয়টা একটু বেশিই, কেননা বিকৃতকাম, লোভ ও ভয়ের বিভাগটি ঘিলুর ভিতরে
একই জায়গায় রয়েছে। তার ফ্যাসফ্যাসে হাসি, আরে আমি একটু ইয়ে ঠাট্টা করছিলাম, তুমি
আমি একই তো! নাকি?
ভিডিওর ভিতরে মেমসাব। লাইব্রেরীতে ঢুকে নগ্ন হলেন। অ্যালসেশিয়ান
হ্যা হ্যা করতে করতে লাফ মারলো। মেমসাব মোটামোটা বইগুলো পেড়ে ওর বাসার জায়গা করে
দিলেন। এবার ওর কান দুটো ধরে...
-আচ্ছা সাব, আপনি ওই ওরকম মোটা মোটা বই পড়েছেন? পড়তে ভালো লাগে?
-চোপ! চোপ!! চোপ!!! চোপ!!!!
নানা দিক থেকে আওয়াজ আসতে লাগল। শুভ্র পোশাকের ভয় এবার উত্তেজনায় পরিবর্তিত।
সাদাপোশাক এখানে বড় বেশি বেমানান। কাঁটার মতো বেঁধে। ঘাম যেন বাতাসিপোকা।
সাদাজামার ভিতরে সুড়সুড়ি দেয়। সাদাখাদি সে খুলে ফেলে। দপ করে আলো জ্বলে ওঠে।
বিরতি। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় সবাই নিজেকে লুকোবার চেষ্টা করে। কেউ কেউ থুতু ফ্যালে। চটচটে
থুতু। কেউ কেউ আপনমনে হাসে। কেউ বা সময় দেখে। পার্থিব সময় সাড়েবারো। পাঁকের
ভিতর নিমজ্জমান সময় অক্ষে ওরা সব থেমে।
-সাব কী সাদাজামা নষ্ট করে ফেলেছেন?
-না না, তা কেন? ধুর এখেনে কী
এসব, ছি ছি!
তাড়াতাড়ি সে খাদি কুর্তা ও টুপি পড়ে ফেলে।
-হুঁ, আপনারা হলেন ভদ্র। সব কিছুতেই রাখঢাক।
আবার আলো নেভে। এবারে কিন্তু ব্ল্যাকআউট। অন্ধকারে ডুবে যায় শহর। বাইরে
কুকুরের পাল। অপেক্ষাকৃত দুর্বল দু’ চারটে যৌনক্রিয়ায় কোনও ভূমিকা নিতে পারছে না। ভয়ানক করুণ কেউঁ কেউঁ তাদের ডাক।
ভিডিও ব্যাটারিতে শুরু হলো।
পাহাড় ঘেরা নির্জন জলাশয়। লাইন দিয়ে দাঁড়ানো বেশ কয়েকটি
নগ্নিকা। জলে একটি মাত্র পুরুষ সাঁতার কাটছে। একে একে উলঙ্গ নারী জলে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
দশটি মেয়ে একসাথে গোল হয়ে পুরুষটিকে ঘিরে ফেলল। যৌন উত্তেজনা জাগাবার নানারকম কলাকৌশল। ক্লোজআপে অঙ্গসমূহ। পুরুষটির মুখ দেখা যাচ্ছে না। যৌনতার চরম মুহূর্তে তার পুরুষালী আনন্দসূচক কন্ঠস্বর
হঠাৎ ভয়ার্ত চিৎকারে বদলে গেল। অন্ধকারে মাথাগুলো সোজা হয়ে গেল।
-ক্কে? কে লোকটা? খুব চেনা চেনা গলা?
সাইকেল মেকানিকের চাপা ভীত স্বর। সাদাকুর্তার অস্পষ্ট
দুর্বোধ্য আর্তনাদ। স্ক্রীনে নারীদের ক্লোজআপ। উন্মুক্ত অঙ্গ সমেত প্রতিটি নারী
অসম্ভব বিষণ্ন। প্রত্যেকের উপস্থিতিতে অসহ্য হতাশার
ছায়া। আর... আর... মুমূর্ষু নগ্ন পুরুষটির বিষণ্ন মুখের দিকে চেয়ে প্রতিটি দর্শক ‘আমি ও যে আমি’ বলে চিত্কার করে ওঠে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন